সেন্ট ভিলার পিশাচ (পর্ব ১)

161 5 4
                                    

©ইজাজ আহমেদ (Ezaz Ahmed)(বোকাবাক্স_থেকে_Ezaz_বলছি)

রাফিকুরের ঘুম ভাঙ্গল মোবাইলের রিংটোনের আওয়াজে। ফোন চেক করে দেখে সুব্রত বাবু কল দিয়েছে । তাড়াহুরা করে তাকে ফোন দেয় রাফিকুর। রাফিকুর পুরো নাম রাফিকুর আহমেদ। পেশায় একজন জনপ্রিয় লেখক। ভৌতিক গল্প লিখে বেশ খ্যাতি লাভ করেছেন তিনি। তার ১১ বছরের ক্যারিয়ারে জাতীয় পুরস্কার সহ পেয়েছেন অনেক পুরস্কার। ভৌতিক গল্প লেখা যেন তার রক্তের সাথে মিশে গেছে। ক্যারিয়ারের শুরুতে কিছু বাধার সম্মুখীন হলেও সেগুলোকে পাশ কাটিয়ে আজ রাফিকুর আহমেদ একজন জনপ্রিয় লেখক। রাফিকুরের ফোন পেয়ে তাড়াতাড়ি রিসিভ করল সুব্রত রয়। "হ্যালো কেমন আছো?' "এইতো স্যার ভালো, আপনি?" "আর ভালো থাকা সারাদিন শুধু কাজ আর শুট্যিং নিয়ে পড়ে থাকা"। সুব্রত রয় পেশায় একজন চলচ্চিত্র প্রয়োজক। রাফিকুরের মত তিনিও একজন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র প্রযোজক । রাফিকুরের সাথে তার পরিচয় অনেকদিনের। "তো লেখক সাহেব ভূত প্রেত্মাতা নিয়ে কেমন চলছে দিনকাল?" রাফিকুর হাসির ছলে বলল," এইতো ভালোই চলছে"। আচ্ছা কাজের কথায় আসা যাক। "ভাবছি অনেক তো ছবি করলাম এবার একটু আলাদা ধরনের ছবি করব"। "তা কেমন ছবি করতে চান?" এই ধর "হরর।" রাফিকুর খুশি হয়ে বলল,"হুম ভালো।" "তো ভালো একটি গল্প লিখে দাও তো রাফিকুর।" "ওকে সুব্রতদা।" "আচ্ছা এখন রাখছি পরে কথা হবে", বলেই ফোন কেটে দিল সুব্রত রয়। ব্রেকফাস্ট করেই গল্প লিখতে বসল রাফিকুর । সে চিন্তা করতে লাগল সুব্রতদা যদি ভিন্ন ধরনের ছবি করতে চায় তাহলে সেও ভিন্ন কিছু নিয়ে লিখবে । ভূত, প্রেত্মাতা, গুল ইত্যাদি নিয়ে সে আগেও অনেক লিখেছে । কিন্তু ভাম্পায়ার বা পিশাচ নিয়ে তার কোন লেখালেখি নেই। তাই সে পিশাচ নিয়ে গল্প লেখার মনোস্থির করল। দেখতে দেখতে প্রায় তিন মাস কেটে যায়। রাফিকুরেরও গল্প লেখা শেষ। অনেকটা হাফ ছেড়ে বাঁচার মত অবস্থা রাফিকুরের। এখন শুধু সুব্রদার পছন্দ হওয়া বাকি। নাহলে আবার নতুন করে শুরু করতে হব। সুব্রতদার পছন্দ হওয়ার আশা নিয়েই ঘুমিইয়ে পড়ে রাফিকুর। কিন্তু রাফিকুর কি জানত ঘুম থেকে উঠার পর কি অপেক্ষা করছে তার জন্য...

ঘুম থেকে উঠে নিজেকে এক অন্য জায়গায় আবিষ্কার করল রাফিকুর। কোথায় যেন হারিয়ে গেল তার বুক শেলফ, তার টেবিল, রঙ - বেরঙ্গের কলম। তার বদলে দেখতে পেল পুরনো আমলের একটি ঘড়ি, ভেঙ্গে যাওয়া একটি শেলফ, কাঠের আলমারি,একটি স্যুটকেস, আর একটি চৌকি যেখানে রাফিকুর শুয়ে আছে। রুমটিতে কেমন যানি একটা বোটকা গন্ধ পেল রাফিকুর। অনেকদিন বন্ধ পরে থাকা বাড়িতে যেরকম গন্ধ পাওয়া যায়। রুম থেকে বের হওয়ার আগে চিন্তা করতে লাগল ১১ বছরের ক্যারিয়ারে কোনদিন মদ স্পর্শ করেনি সে তাই এগুলো তার চোখের ভুল হতেই পারে না । এত কিছুর মধ্যে নিজের মোবাইলটিও খুঁজে পাচ্ছে না সে। ভয়ে ভয়ে রুমের দরজা খুলল সে। চারপাশ ভালো করে দেখে যেই না পা বাড়ালো রুমের বাইরে হঠাৎ এক আগান্তুক। চোখের পলকে আবার হারিয়ে যায় ওই আগান্তুক। তবে তাকে দেখে ওয়েটারই মনে হল রাফিকুরের। তাও কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারছে না সে কিভাবে সে এখানে এলো, এটা কোন জায়গা, এই লোকটিই বা কে এবং কিভাবে সে চোখের পলকে গায়েব হয়ে গেল। এসব কথা চিন্তা করতে করতে করিডোরে হাঁটতে লাগল রাফিকুর। হাঁটতে হাঁটতে এক সময় রিসেপশনে এসে পৌছাল সে। দেখল একটি মেয়ে বসে আছে । বয়স পচিঁশ এর কাছাকাছি বলে ধারনা করল সে। দেখতে সুন্দর আর একটি লাল শাড়ি পড়ে আছে। কপালে একটি কালো টিপ। তাকে দেখে অনেকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সে। তাও একটু ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গেল তার কাছে। তার কাছে পৌছাতেই হঠাৎ মেয়েটি বলে উঠে, " গুড মর্নিং মিস্টার রাফিকুর। হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ?"তার এমন কথায় নিরবাক হয়ে যায় রাফিকুর। কারণ সে কখনো মেয়েটিকে দেখেইনি তাও মেয়েটি কিভাবে তাকে চিনতে পারল। এত কিছু কিছু ভাবতে ভাবতে হুট করে রাফিকুর প্রশ্ন করে,"আচ্ছা জায়গাটির নাম কি? আমিই বা এখানে কিভাবে এলাম? আমি না কিছু বুঝতে পারছি না। তুমি কি কিছু বলতে পারবে?" মেয়েটি তখন হাসতে হাসতে উত্তর দেয়," মিস্টার রাফিকুর চোখের দেখা সবসময় সত্যি হয় না, মাঝে মাঝে আমাদের কল্পনায় যা ঘুরপাক খায় তাই সত্যি হয়।"

You've reached the end of published parts.

⏰ Last updated: Jul 21, 2023 ⏰

Add this story to your Library to get notified about new parts!

সেন্ট ভিলার পিশাচ(The Vampires of Saint Villa)Where stories live. Discover now