খুশকি

16 1 1
                                    

এই হয়েছে এক নতুন ঝামেলা, ভালো লাগছে না আর রক্তিমের। এত ভালো চুল ছিল তার, যেই চুলের জন্য স্কুল এর শিক্ষক শিক্ষিকারা তাকে আলাদা ভাবে চিনত সেই চুল যেনো আজ ঝরে পড়ছে অবাধে ঠিক বৃষ্টি যেমন ঝরে পরে। তার মাথায় হয়েছে খুশকি, আর এই খুশকিই হলো তার এই চুল পড়ার প্রধান আর একমাত্র কারণ। খুশকি ছিল না তার মাথায় এক বছর আগেও। হটাৎ করে বাবা যখন কাউকে না জানিয়েই বিদায় নিলেন এই পৃথিবী ছেড়ে  ঠিক বছর খানেক আগে। খুব কষ্ট পেয়েছিল রক্তিম, বাবা কে সে খুব ভালোবাসত। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর যখন এগারো দিন চুলে তেল, শ্যাম্পু পড়লো না, আর তাকে মাথা ন্যাড়া করতে হলো তারপর যখন নতুন চুল উঠলো সে যেনো খুশকি গুলোকে সঙ্গে করে নিয়ে এলো। যে চুল রক্তিমের ছিল সেই চুল এখন অর্ধেক হয়েছে। কলেজে যাওয়ার সময় আয়না দেখতে দেখতে রক্তিম মা কে বললো, ' এই চুল পড়া যে কবে বন্ধ হবে কে জানে এখন সবার সামনে চুল ঝাড়তেও পারিনা ঝাড়লেই চুল থেকে খুশকির ঝর্না ঝরে পড়ে।

মা বলল,' কমে যাবে এই সময়ে একটু আধটু চুল পড়ে সিজন টাই খারাপ।'

মায়ের উপর একটু রেগে গিয়ে রক্তিম বললো,' এই ছয় মাস ধরে প্রায় তুমি একই কথা বলছো, তোমার আর এই সিজন কবে যাবে আমায় একটু বলবে? এখন তো চুলে হাত দিলেই হতে ভর্তি চুল গোড়া থেকে উঠে চলে আসে। এই চুল আর আদেও থাকবে কিনা তাই নিয়েই চিন্তার শেষ হচ্ছেনা। দেখলে তো কত শ্যাম্পু দিলাম তেল ব্যবহার করলাম কিছুতেই কিছু হচ্ছে না ,আর তুমি সেই সিজন নিয়েই পড়ে আছো।'

মা আর তেমন কিছু বললো না শুধু একবার আস্তে করে বললো,' দেখবি ঠিক কমে যাবে।'

কলেজ এর দেরি হয়ে যাচ্ছে বলে মা কে আর কিছু না বলে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে গেলো রক্তিম।

রাস্তায় যেতে যেতে দেখা হলো তার ছোটবেলার পড়ার বন্ধু অমলের সাথে।

অমল বললো,' কলেজে নাকি ভাই?'

রক্তিম বললো,' হ্যাঁরে জানিস তো কলেজে আবার নতুন নিয়ম 75% অ্যাটেনডেন্স,এই নিয়ম এর জন্য কলেজে না গিয়ে কি আর উপায় আছে!'

অমল বললো,' নে তাও তো করছিস, আমায় দেখ পড়াশোনা করিনা বলে টোটো চালাচ্ছি জীবনে আর কিছু নেই রে সব খুশি আনন্দ যেনো স্কুলের ছাড়ার সাথেই শেষ হয়ে গেছে।'

রক্তিম একটু থেমে বললো,' তাও তো নিজে ইনকাম করছিস আর দেখ আমায় এখনও মা কে সংসার চালাতে হচ্ছে আর আমাকেও, তুই তো সংসারটা তাও দেখছিস ভাই।'

এসব কথা বলতে বলতে বাসস্ট্যান্ড এর দিকে যাচ্ছিল ওরা। হটাৎ করেই রক্তিম দেখলো যে আমলের মাথার চুলের ফাঁকে যেনো কেমন একটা ঘাঁ এর মত হয়েছে তা দেখে রক্তিম বললো ,' কিরে তোর মাথায় কি হয়েছে?'

অমল বললো,' আর বলিস না এই মাথায় এত খুশকি হয়েছে তাই থেকেই কেমন একটা ঘাঁ মত হয়ে গেছে ওষুধ খাচ্ছি আর ডাক্তার একটা শ্যাম্পু দিয়েছে বললো এক মাসের মধ্যে কমে যাবে।'

'ও, ঠিক আছে রে তবে আমি গেলাম আমার বাস চলে এসেছে বায় ভাই। ',বললো রক্তিম।

অমল ও নিজের কাজে চলে গেলো আর যেতে যেতে সেও বললো ' বায় ভাই।'

বাসে উঠে রক্তিম দেখল যে ওর কলেজের বন্ধু সুমন,রানা, দীপ, রাই আর সৌমী আছে বাসে। দেখে রক্তিম খুশি হলো যে আর কানে হেডফোন গুঁজতে হবে না গল্পই চলে আছে এই আঁধ ঘণ্টার যাত্রা।

' কিরে আজ তুই দেখছি সময়ে আসছিস, স্যার এর গালাগাল না শুনে তোর আজ দিন ভালো যাবে তো?' বললো দীপ।

সবাই কথাটা শুনে হেসে ফেললো এমনকি রক্তিম নিজেও হেসে ফেললো।

সৌমী বললো,' সত্যি তুই আজ এত তাড়াতাড়ি ,তুই তো এই বাসে শেষ কবে আমাদের সাথে কলেজে গিয়েছিস তাই মনে পড়ছে না।'

রক্তিম বললো ' আজ কাজ কম ছিল তাই তাড়াতাড়ি হলো এই যা আর নিজেও একটু তাড়াহুড়ো করলাম তুই ই বল স্যার এর বকবক শুনতে ভালো লাগে কারোর কারণ ছাড়া।'

নানা কথা হাসি মজা করতে করতে পার হয়ে গেলো আধ ঘণ্টা। সবাই মিলে বাস থেকে নামলো গল্প করতে করতে ঢুকলো কলেজের ভিতর। ক্লাস শুরু হতে আর দশ মিনিট বাকি। ক্লাসে ঢুকে দেখল সবাই যে বেঞ্চে বসে আছে রাহুল আর তন্ময় আর রাত্রি। ওরা রক্তিম কে দেখেও সেই একইরকম প্রশ্ন করলো। কিছু হাসি মজা করলো তারা আর সেই সময়েই শোনা গেলো এক গম্ভীর আওয়াজ বলে উঠলো, ' সবাই গল্প করা বন্ধ করো আর ঠিক করে বসো।'

খুশকি Donde viven las historias. Descúbrelo ahora