একটা ঝাঁকুনির সাথে সাথে মেয়েটির শরীরের সকল মাংসপেশী তীব্র ব্যাথায় যেন আর্তচিৎকার করে উঠলো। শূলের মত বাঁধছে চোখ বেয়ে নামা অশ্রু, মস্তিস্কে প্রবাহিত হতে থাকা প্রতিটি রক্তস্রোত যেন আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে প্রতিটি নিউরনে। শব্দ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে কানের ভেতরেই- বারবার। প্রচন্ড যন্ত্রণায় চিৎকার করতে চাইলেও মুখ দিয়ে শুধু জবাই করা পশুর মত গোঙানি বের হল। স্কচটেপ মুখে লেপ্টে আছে শক্তভাবে। একইভাবে হাত-পা ও বাঁধা। হাত-পা খোলা থাকলেও বিন্দু মাত্র নড়তে পারতো বলে মেয়েটির মনে হয় না।
'খোদা... ওহ খোদা ...'
মেয়েটি মনে মনে স্রষ্টাকে স্মরণ করে আরো একবার। শুকনো রক্ত জমাট বেঁধে থাকায় শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে ওর। একটু বেশী বাতাস টানার চেষ্টা করা মাত্রই তলপেটের অসহ্য ব্যাথায় কুঁকড়েযেতে হল ওকে।
সারা শরীর জুড়ে লেপ্টে থাকা থকথকে আঠালো ভাব আর রক্তের আঁশটে গন্ধেগা গুলিয়ে উঠলো। কিন্তু খাদ্যনালী বেয়ে কিছু বের হতে চাইলে তা ফের গিলে ফেলতে হবেএই কারণেই হয়তো বমি পেলো না ওর।
'খোদা ...!'
নিজের সবচেয়ে ভয়ংকর দুঃস্বপ্নেও বোধহয় ও এরকম কিছু কল্পনা করেনি।
একটা হার্ড ব্রেক; ভ্যান থামা মাত্র মেয়েটি সচকিত হয়ে উঠলো। অমানুষটাকোথায় নিয়ে এসেছে ওকে বিন্দুমাত্র আন্দাজ করতে পারলো না। পেশীবহুল হাতে খুব সহজেই কাঁধে তুলে নিল মেয়েটির দুর্বল শরীর। আতঙ্কিত চোখে ভোরের আবছা আলোতেই মেয়েটি বুঝতেপারলো একটা জঙ্গলে নিয়ে আসা হয়েছে ওকে।
রাতভর নিপীড়ন চালিয়ে নিশ্চয়ই এখন ওকে আপ্যায়ন করা হবে না।স্বাভাবিকভাবেই এমন ব্যবস্থা করা হবে যাতে আর কখনই বেঁচে ফিরতে না পারে। শেষটা তবে এই ছিল? বনের হিংস্র জন্তু আর পোকামাকড়ের খাদ্য হতে হবে।
স্রষ্টার প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ পেতে থাকে নীরব কান্নার মধ্য দিয়ে। কে জানতো কফি শপে সুদর্শন মানুষটির প্রস্তাবে না বলার পরিণতি এই হবে? লোকটি সুদর্শন ছিল ঠিকই, কিন্তু তার চোখের পাশবিক দৃষ্টি ছিল আরো প্রকট।
চাতক পাখির মত চারিদিকে তাকায় ও। নেই। সাহায্যের জন্য কেউ নেই!
গুহার ভেতরে খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে অমানুষটা ঢুকে। মেয়েটির বুঝতে বাকি থাকেনা এই নরপশু এর আগেও বহু মেয়েকে এই গুহায় ফেলে রেখে গেছে, ওর মতই সর্বোচ্চ রকমের কষ্ট পেয়ে মরে পরে আছে না জানে কত মেয়ের লাশ। বীভৎস পচা-গলা ...হয়তো কংকালও!
একটু ভেতরে যেতেই গুহাটি সাধারন কোন গুহা বলে মনে হল না। বিস্ময়ের সাথে মেয়েটি লক্ষ্য করলো, গুহার ভেতরে একটা আর্টিফিশিয়াল ভাব রয়েছে।
যান্ত্রিক একটা শব্দ হল, মোবাইলের বাটন চাপার মত। ঘরঘর শব্দ করে দরজাখুলে গেল।
পাসওয়ার্ড দিয়ে গুহার ভেতরেই একটা বিরাট ভল্টের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরা হয়েছে। কয়েকটা মেয়ের লাশ লুকিয়ে রাখার জন্য এত নিরাপত্তা!
ধপাস করে ওকে মাটিতে ফেলে দেয়া হল। অন্ধকারেই মেয়েটির মাথা ঝিম ধরেগেল। অদ্ভুত ভাবে ওর মাথায় পাঁচ কি ছয় বছর বয়েসের স্মৃতি হানা দিল। পাশের বিল্ডিংএর দাদু সঙ্গীতপ্রিয় মানুষ ছিলেন। বেশ দাম দিয়ে কিনেছিলেন পিয়ানো। দাদুর কোলে বসেমেয়েটি সেই পিয়ানো তে আঙুল চালাতো। chopin nocturne বাজাতেন দাদু। হ্যাঁ, সেই chopin nocturne শুনতে পাচ্ছেমেয়েটি।
দূরে কোথাও কেউ একজনবাজাচ্ছে ওটা। খুউব দূরে কেউ একজন বাজাচ্ছে।
![](https://img.wattpad.com/cover/97651615-288-k468869.jpg)
YOU ARE READING
যবনিকাপতন
Fantasyএক ভ্যাম্পায়ার সম্রাটের সাম্রাজ্য রক্ষার যুদ্ধের কিংবা এক সাধারণ মানবীর মানব জন্মের যবনিকাপাতের গল্প...