পঞ্চম অধ্যায়

650 38 1
                                    

“তুই ঠিক শুনেছিস তো? এই কথাটাই বলেছিল?”
সাইনা নোয়াহর কথা বিশ্বাস করতে পারেনা। ভর দুপুরবেলা হঠাৎ করেই ডেকেপাঠিয়েছে ও। শরীরের উপর এক ধরণের অত্যাচার করেই বিকেলে বেলা বেড়িয়েছে ঘর থেকে। সন্ধ্যে নাগাদ যখন দুই জনের দেখা হল, কোন ভনিতা ছাড়াই নোয়াহ উজবুকের মত সংবাদটা হুট করে দিল। সাইনার অবশ্য সন্দেহ থেকে যায়।
ঘুমের ঘোরে কি না কি শুনেছে কে জানে! নোয়াহ যে কতটা ঘুম পাগল তা কারোঅজানা না। নোয়াহ সাইনার প্রশ্নে বিরক্ত হয়,
-“আমি ঠিক শুনেছি। আমাদেরকে যেতে হবে, সাইনা।“
“এটাও যদি জুরিতার কোন ট্র্যাপ হয়? এত তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেয়াউচিৎ হবে না।“
সাইনার যুক্তি অমূলক না। নোয়াহর মত সহজেই অধৈর্য হওয়ার পাত্রী সাইনা না। ভেবে চিন্তেপদক্ষেপ নিতে জানে ও।
-“তবে... ওটা আমাদের কেউ ছিল না, সাইনা। একজন মানুষ ছিল।“
নোয়াহ হিসেব মেলাতে পারেনা। এত সিক্রেট চারটি শব্দ; অন্য যে কেউ যেন কনফিউজড হয় তাই একটি শব্দ দুই বার ব্যবহার করা হয়েছে,- এটা ওরা ছাড়া আর কোন মানুষের জানার কোন সুযোগ নেই। আজকের সকালের ঘটনার পর বলতে হয়, ছিল না।
“মোবাইলে কীভাবে টের পেলি ওটা মানুষ ছিল নাকি আমাদের কেউ?”
-“বোঝা যায়, মানুষ হলে একটা হৃদস্পন্দন হাল্কা শোনা যায়।”
“খেয়াল করিনি।”
সাইনার আর কোন সন্দেহ থাকেনা, নোয়াহকে সত্যিই কেউ একজন কল করেছিল। সত্যিই কেউ একজন সেই অমোঘ চারটি শব্দ বলেছে। কিন্তু, সাইনা বুঝে উঠতে পারছে না আসলেই এটা ফাঁদ নাকি সত্যিই ডাক এসেছে।

****

“হচ্ছে না!”
তিয়ারা বিরক্ত হয়ে মাথা ঝাঁকাল। ওদের কমলা রঙের গাড়িটি চট্টলা ছেড়ে ছুটে চলছে, আর তার মধ্যে বসে ক্রেয়ন তিয়ারাকে ট্রেনিং দিচ্ছে।
“আমি টের পাচ্ছি, যখন তুমি আমার চিন্তা পড়ছো। কিন্তু, থামাতে পারছিনা তো!”
ক্রেয়ন তিয়ারার হাতের চিপসের ক্যান থেকে একটা চিপস চুরি করে মুখে ঢোকালো। ওর কথা যেন শুনতেই পেল না। তিয়ারা ক্যানটি বাম পাশে সরিয়ে জানালা ঘেসে বসে বাইরে তাকালো।
-“তুমি থামাতে চাইলে পারবে না, তোমাকে এমন ব্যবস্থা করতে হবে, যেনকেউ তোমার চিন্তা পড়তেই না পারে। তোমার চিন্তার ভেতরে ঢুকতেই না পারে।”
“হচ্ছে না তো, তুমি বারবার পড়ে ফেলছো।”
-“আমার আটশ বছরের অভিজ্ঞতা তুমি এক দিনে হারিয়ে দিবে?”
তিয়ারার দিকে ঝুঁকে ওর চিপসের ক্যানে হাত দেয় ক্রেয়ন। তিয়ারা সাথে সাথে ওর হাতে একটা চাটি মারে,
“বয়স লুকিয়ো না। তুমি আরো বেশি বুড়ো!”
-“ওই যাই হোক। হ্যাঁ, আরেকজনের চিপস খেতে আমার বেশি ভালো লাগে।”
শেষের কথাটা তিয়ারার চিন্তা পড়ে ক্রেয়ন বলল। তিয়ারা চিপসের ক্যানটা ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে মাথা পেছনে হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
একটা দেয়াল। পুরনো ইটের খাঁজে খাঁজে সবুজ মস উঁকি দিচ্ছে। দেয়ালের স্যাঁতস্যাঁতে গন্ধ। একটা ময়লাটে সবুজ রঙা গিরগিটি। ছোটবেলায় যেটাকে রক্তচোষা বলেজানতো। তিয়ারার দিকে পিটপিট করে তাকায়। ছোটবেলার শিশু মনে পাওয়া অহেতুক ভয় আবারজেঁকে বসে। চোখে খুলে পাশের রক্তচোষার দিকে তাকায় ও।
ক্রেয়ন অবিশ্বাস্য চোখে ওর দিকে তাকিয়ে। ক্রেয়ন নিশ্চয়ই ওর চিন্তাপড়ে ফেলেছে। শেষে কি না গিরগিটির সাথে তুলনা। তিয়ারা মাথা নিচু করে ফেলে। ক্রেয়ন ওর ভুল ভেঙ্গে দেয়,
“আমি তোমার চিন্তা পড়তে পারিনি।”
-“অ্যাঁ?”
“সত্যিই ...কীভাবে করলে?”
এইবার ক্রেয়নকে কাবু করার পালা। তিয়ারা মুচকি হেসে সীটে পা তুলে বসে।
“তোমার হাজার বছরের অভিজ্ঞতা দিয়ে চেষ্টা কর। আমি ঘুম গেলাম।“

যবনিকাপতনWhere stories live. Discover now