পর্ব-২

382 12 2
                                    

#হরর_গল্প
#ত্রয়ী
লেখা : নীলা মনি গোস্বামী
পর্ব -২

- সিলেটের রাতারগুলের নাম  শুনেছো? 
-হ্যাঁ,শুনেছি। বাংলাদেশের আমাজন বলা হয় ওটাকে।
- সেখানেই আছে ঐ আলৌকিক গাছটা।সে গাছে অদ্ভূত অদ্ভূত সব ফুল ফল ধরে। গাছের কাছে গিয়ে সরলমনে যে যা চায়,তাই পায়। আর সেই সাথে পায় অঢেল টাকা। ইচ্ছে পূরন হলে গাছ থেকে বৃষ্টির মতো টাকা ঝড়ে পড়ে। তাই স্থানীয়রা সে গাছের নাম দিয়েছে টাকার গাছ। মা সেখানে একবার গিয়ে ঘুরে আয় প্লিজ। আমার মনে হয় সেখানে গেলে তোদের ঝামেলাটা ঠিক হয়ে যাবে।

মায়ের রূপকথার গল্প শুনে হেসে কুটিকুটি হয়ে যায় ত্রয়ী। কীসব কুসংস্কার নিয়ে পড়ে আছে মা।হাসতে হাসতে বিষম খায় মেয়েটা।তবুও মায়ের কথা রাখার জন্য চলে আসে এখানে। খুঁজে খুঁজে বের করে ফেলে কাঙ্খিত টাকার গাছ।। গাছটা দেখতে অদ্ভূত। পাতাগুলো গাঢ় নীল রঙের।ডালপালাগুলো ধবধবে ফর্সা।  হঠাৎ দেখলে মনে হয় যেনো রক্তশূন্যতায় ভুগছে গাছগুলো।পুরো গাছ জুড়ে ছেয়ে আছে অসংখ্য সোনালী রঙের ফুল। সে ফুল অপূর্ব সুবাস ছড়াচ্ছে। পাতার ফাক ফোঁকড় দিয়ে উঁকি দিচ্ছে টমেটোর মতো টসটসে  বেগুনী রঙের ফল।।।
অবাক চোখে তাকিয়ে ছিলো ত্রয়ী। আর মনে মনে বলছিলো -" আমি আর পারছি না এসব সহ্য করতে। আমার স্বামীটার স্বভাব চরিত্র ঠিক করে দাও প্লিজ। "

একমনে বারবার প্রার্থনা করে যাচ্ছিলো ত্রয়ী। হঠাৎ টের পেলো গুরি গুরি বৃষ্টি শুরু হয়েছে ।  হালকা কুয়াশায় ছেয়ে গেছে চারপাশ।তীব্র বাতাস বইছে চারিদিকে।শিরশিরে ঠান্ডায় কেঁপে উঠলো ত্রয়ী। বিশাল গাছটা নড়েচড়ে উঠলো তীব্র গতিতে।হঠাৎ দেখলো গাছের ফাক ফোঁকড় দিয়ে সাপের মতো কি যেনো একটা বের হয়ে আসছে হেলে দুলে। লকলকে লাল একটা জিহ্বা।কিলবিলে জিহ্বাটা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে ত্রয়ীর দিকে।আঁতকে উঠলো ত্রয়ী। টের পেলো শোয়েন ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে। দ্রুত হাতে ওকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে । ।।

ভয় পেয়েছে শোয়েন অনেক। শক্ত করে ত্রয়ীর হাতটা চেপে ধরে রেখেছে। ছাড়বে না কিছুতেই। ভাবটা এমন, যেনো ছেড়ে দিলেই ত্রয়ী হারিয়ে যাবে। দুজন মিলে প্রানপনে দৌড়াচ্ছিলো।ভয়ার্ত ত্রয়ী খেয়াল করলো শোয়েনের হাতটা আলগা হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।  ছেড়ে দিচ্ছে শোয়েন ওর হাতটা।

ভয়ে কেঁপে উঠলো ত্রয়ী। বিষ্ফোরিত চোখে দেখলো লকলকে জিহ্বাটা আষ্টে পৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ফেলেছে শোয়েনকে। ধীরে ধীরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ওটার বিদঘুটে গর্তওয়ালা হা করে মুখের কাছে।

ব্যাথায় আতঙ্কে অনবরত চিৎকার করে যাচ্ছে শোয়েন।  ত্রয়ী দৌড়ে গেলো শোয়েনকে বাঁচাতে।

কাতর কন্ঠে শোয়েন চিৎকার করে বললো," ত্রয়ী তুমি পালাও।। আমি বাঁচবো না। তুমি অন্তত পালিয়ে বাঁচো। "

বুকের ভেতরটা কেমন যেনো করে উঠলো ত্রয়ীর। মনে হচ্ছে যেনো কেউ ধারালো কিছু দিয়ে কুচি কুচি করে কেটে দিয়েছে ওর বুকের ভেতরটা। তারপর সযতনে ছড়িয়ে দিয়েছে কয়েক বস্তা লবন - মরিচের গুঁড়ো। চোখ ফেটে পানি বের হয়ে গেলো ত্রয়ীর। হঠাৎ করে বুঝতে পারলো এই জঘন্য লোকটাকে ছাড়া ওর একদমই চলবে না।।কিণ্তু মানুষটা মারা যাচ্ছে ওর চোখের সামনেই। আর ত্রয়ী কিছুই করতে পারছে না। খালি অসহায়ের মতো চেয়ে চেয়ে দেখছে।

ত্রয়ীর চোখের সামনেই গাছটা গিলে খেয়ে ফেললো ওর ভালোবাসার মানুষটাকে। কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো ত্রয়ী। 

চলবে............!

ত্রয়ী Where stories live. Discover now