part:11

2 0 0
                                    


নাহ স্বপ্ন না।রুহীকে এমন গোঙ্গাতে দেখে রোয়েন বুঝতে পারলো ও এতক্ষন যা দেখছিলো সেটা কোন ভাবেই স্বপ্ন না।রুহীর ডানহাতের কব্জি বেয়ে অনবরত রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।আর রুহী মাঝে মাঝে কেঁপে কেঁপে উঠছে আর ওর ভিতর থেকে কেমন যেন একটা গোঙ্গানীর শব্দ ভেসে আসছে যেন খুব কষ্ট হচ্ছে।দৃশ্যটা রোয়েনের সহ্য হচ্ছেনা।যেন বুকের মাঝে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করছে কেউ।আর দাঁড়াতে পারলোনা রোয়েন।দৌড়ে এসে রুহীর পাশে বসে পড়লো।রুহীকে কোলে নিতে গেলে রুহী বাম হাত দিয়ে সরিয়ে কিছু একটা বলছিলো।রোয়েন সব কিছু উপেক্ষা করে রুহীকে কোলে নিয়ে নিলো।রোয়েনের চোখজোড়া বেয়ে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।এভাবে কখনো কান্না করেনি ও।কিন্তু আজ খুব কষ্ট হচ্ছে।যাকে আঁকড়ে ধরে সারাটিজীবন কাঁটিয়ে দিবে ভেবে ছিলো।ওর মায়াবতী আজ ওরই জন্য নিজেকে শেষ করে দিতে চাচ্ছিলো।রোয়েন সিড়ি বেয়ে পারছে যেন দৌড়ে নামবে।রুহীর দিকে একনজর তাকালো রোয়েন।রুহী এতক্ষন তাকিয়েছিলো কিন্তু আস্তে আস্তে ওর চোখজোড়া বুজে আসছে।রুহী প্লিজ জান চোখ বুজোনা। একটু কষ্ট করো।প্লিজ চোখ বুজে নিওনা।কিন্তু রুহী রোয়েনের সকল ডাক উপেক্ষা করে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।
রোয়েন আর কিছু ভাবতে পারছেনা।যতো দ্রুতসম্ভব ওকে হাসপাতালে পৌছাতে হবে।রুহীকে নিয়ে হাসপাতালে চলে এলো রোয়েন।
রুহীকে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হলো।কারন খুব বেশি ব্লিডিং হয়েছে।আর ও দেরি হলে রুহীকে বাঁচানো।যাবেনা।খুব জলদি রক্ত লাগবে।ডোনারের জন্য বসে থাকা যাবেনা।রোয়েনের ব্লাডগ্রুপ বি পজিটিভ যেখানে রুহীর রক্তের গ্রুপ ও পজিটিভ।তাই হাসপাতালের ব্লাডব্যাংক থেকে রক্ত নেয়া হলো।কিন্তু রোয়েন ওদের বারবার শাসাচ্ছিলো।রুহীর ক্ষতি হলে ওদের ছাড়বেনা রোয়েন।
শেষ মেষ রুহীকে রক্ত দেয়া হলো।এতক্ষনে রোয়েন শান্তিতে বসতে পারছিলোনা।শুধু হাঁটছিলো আর ওর চোখজোড়া বেয়ে বেহায়ার মতো অশ্রু গড়িয়ে যাচ্ছিলো।ডাক্তার বেরিয়ে আসতেই তাকে ধরে বসলো রোয়েন।রুহীর কি অবস্থা?ও ভালো আছে তো?ওর কোন ক্ষতি হলে আপনাদের কাউকে ছাড়বোনা।চিৎকার করে বলছিলো রোয়েন।স্যার নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।সি ইজ ফাইন।রোয়েন যেন এবার একটু শান্ত হলো রোয়েন।তারপর ও ডাক্তারকে না প্রশ্ন করে করে পাগল করে দিচ্ছিলো।ডাক্তার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে রোয়েনকে রুহীর পাশে বসিয়ে দিয়ে চলে গেল।রোয়েন রুহীর দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে।ওর চোখ জোড়ায় কষ্টের থেকে রাগ বেশি প্রকাশ পাচ্ছে।অশ্রুসজল চেখজোড়া রক্ত বর্ন ধারন করেছে।এ মুহূর্তে মেয়েটার গালে চড় বসিয়ে দিতে পারলে শান্তি লাগতো।এমন বাজে কাজ করে রোয়েন থেকে নিজেকে ছিনিয়ে নেয়ার কথা চিন্তা কিভাবে করলো অসভ্য মেয়েটা?রুহীর ডান হাতটাকে নিজের হাতে নিয়ে সেখানে অসংখ্য চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিলো রোয়েন।রুহীর হাতের আঙ্গুল গুলোকে নিজের আঙ্গুলের ভাজে নিয়ে নিলো রোয়েন।
এভাবে বেশ কিছুক্ষন সময় বসে থাকতে থাকতে চোখজোড়ায় ঘুম নেমে আসে রোয়েনের।রুহীর হাত ধরেই ঘুমিয়ে পড়লো রোয়েন।কিছুক্ষন পরই রুহীর জ্ঞান ফিরলো।খুব আস্তে আস্তে চোখ খুলল রুহী।রুমটাকে বেশ অচেনা মনে হচ্ছে ওর।কই এলো ও?ভাবতে থাকে রুহী।একটু নড়তই ডান হাতে টান খায় ঠিক তখনই রোয়েনের ঘুম ভেঙ্গে যায়।পাশে রোয়েনকে দেখতে পেয়ে খানিকটা বিরক্ত হয়ে ভ্রু কুঁচকে অপর পাশে ফিরে নিজের হাত ছাড়াতে চেষ্টা করতে থাকে রুহী।রুহীর হাত আরো শক্গ করে ধরে রুহীর কানের কাছে মুখ নিয়ে আসে রোয়েন।রোয়েনের নিশ্বাস রুহীর ভিতরের সবকিছু উল্টেপাল্টে দিচ্ছে।এই নিশ্বাসের সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে রুহীর।তবু ও রুহী দূর্বল হবেনা।লোকটা খুনি পশুর থেকে ও খারাপ।তাকে ভালোবাসা যায়না।রুহী কেমন লাগছে তোমার?মায়াভরা কন্ঠে প্রশ্ন করে রোয়েন।
কথা বলবেননা।আপনার কথা শুনতে বিরক্ত লাগছে।সরে বসুন।
রোয়েন মলিন হেসে ওর গালে চুমো এঁকে দিয়ে খাবার আনতে বেরিয়ে গেলো।রোয়েনকে বেরিয়ে যেতে দেখে  আশেপাশে তাকালো রুহী।কেউ নেই রুমে।এটাই বড় সুযোগ।রুহীর জন্য সুপ আর নিজের জন্য ফ্রুট স্যালাড কিনে রুহীর কেবিনে আসতেই রোয়েন বড় ঝটকা খেলো।রুম খালি খাট খালি।বাথরুমের দরজা খোলা।রোয়েনের মাথা কাজ করছেনা।ডাক্তার নার্স সবাইকে একনাগাড়ে বকে যাচ্ছে।পেশেন্ট কি করে বাহিরে যায়?ওরা কেন রুহীর খেয়াল রাখতে পারলোনা?পুরো হাসপাতালে হৈচৈ শুরু করলো রোয়েন।
আচমকা মেয়ে কে এভাবে আসতে দেখে চমকে উঠলেন আজিজ রায়হান।মেয়ের হাতে ব্যান্ডেজ আর এভাবে চলে এলো।রোয়েন কই?কিছুই বুঝতে পারছেনা আজিজ রায়হান।রুহীকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তখনই জ্ঞান হারিয়ে নিচে পড়ে গেলো রুহী।আজিজ রায়হান আর রুপন্তী মিলে রুহীকে খাটে শুইয়ে দিলো।রুপন্তী রুহীর পাশে বসে ওর চুলে হাত বুলাচ্ছে।আজিজ রায়হান রুম থেকে বেরিয়ে এসে ফোন বের করে রোয়েনের নম্বরে কল দিলেন।
হ্যালো মিঃ আজিজ রায়হান।অপরপাশ থেকে রাগী গলায় বলে উঠে রোয়েন।
জি।রুহী বাসায় চলে আসছে।ওর হাতে ব্যান্ডেজ করা।জ্ঞান হারায় ফেলছে।
আজিজ রায়হানের কথা শুনে ভীষন রাগ হলো রোয়েনের।মেয়েটার গত সাহস কি করে হয় রোয়েনকে ছেড়ে চলে যাওয়ার?
রোয়েন ডাক্তারকে নিয়ে দ্রুত আজিজ রায়হানের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।চোখ খুলে বাবা আর বোন কে দেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো রুহী।আজিজ রায়হান যতোই জিজ্ঞেস করছে কি করে এলো? ভেগে এলো কেন?কোনটারই উত্তর দিতে পারছেনা রুহী।শুধু কেঁদেই যাচ্ছে।কিছুসময় পর রোয়েন ডাক্তার নিয়ে রুমে আসতে নিবে তখনই রুহী চোখে মুখে এক রাশ  বিরক্তি নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।
রোয়েন দরজায় নক করতে লাগলো।রুহী ডাক্তার কে ঢুকতে দাও।ওনি তোমার একটু চেক আপ করবেন।প্লিজ রুহী দরজা খুলো।বলে উঠলো রোয়েন।রুহী দরজা খুলে ডাক্তার কে ঢুকালো।রুহীর চেকআপ করে বেরিয়ে গেলো ডাক্তার।রোয়েন এবার রুহীর দিকে এগোতে লাগলো।বাসায় চলো রুহী।
না কোথাও যাবোনা।আপনার মতো নর পশুর সাথে থাকা দূরের কথা আপনার চেহারা ও দেখতে চাইনা।বেরিয়ে যান।নিজের বাবা নেই তো সেজন্য আমাকে আমার বাবা মার কাছ থেকে দূরে সরাতে চাইছেন।নিজের বাবা মা থাকলে কখনো এমন করতে পারতেননা।চিৎকার করে ঘৃনাভরা কন্ঠে কথা গুলো বলছিলো রুহী।
রোয়েন রুহীর কথা গুলো নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছেনা।রুহী ওর বাবা মা নিয়ে কথা বলছে।কেউ কি ইচ্ছে করে এতিম হয়?ভাগ্যক্রমে মা বাবা কে হারিয়েছি আমি।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে রোয়েনের চোখজোড়া জলে ভরে গেছে।আর দাঁড়াতে পারলোনা রুহীর সামনে।কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে পড়লো রোয়েন আজিজ রায়হানের বাসা থেকে।

চলবে

Married To The Cobra kingWhere stories live. Discover now