শৈশব থেকেই দেখছি, আমার বাবার মুখে সবসময়ই হাসি থাকতো।
আমার সব কাজিনেরই তখন বাসায় কম্পিউটার ছিল। সেটি কিনে দেয়ার সামর্থ্য তখন বাবার ছিল না। ছোট ছিলাম, বুঝতাম না তার আর্থিক অবস্থাটা। বাসায় কান্নাকাটি করতাম একটা কম্পিউটার কিনে দেয়ার জন্য। বাবা কোন কথা বলতেন না। তখন বুঝতাম না তার নিরশব্দ হাসিটা ।
কিন্তু বাবা আমাকে অনেক সময় দিতেন। আমরা থাকতাম একটা খোলামেলা কমপ্লেক্স-এ। প্রতি রবিবার সকাল বেলা আমাকে নিয়ে ক্রিকেট খেলা ছিল তার ডিউটি। তারপর আমাকে নিয়ে হাটতে বের হওয়া, বিভিন্ন গাছ চেনানো, পশু-পাখি নিয়ে ভবঘুরে গল্প, ঘরে এসে মানচিত্র বুঝানো, আবার বিকেল বেলা বাইকে নিয়ে ঘুরানো, এবং দিন শেষে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বাঘ-শিয়ালের গল্প বলা।
থাকতাম সিলেট থেকে দুই ঘণ্টা দূরে একটা ছোট মফস্বলে । ৯০-এর দশকের মফস্বল । বিনোদন বলতে গেলে কিছুই ছিল না। যখন মাঝে মাঝে ঢাকায় যেতাম, তখন পিসিরা বাইরে ঘুরতে নিয়ে যেত wonderland-এ। ওখানে ভাইবোনদের সাথে দৌড়াদৌড়ি করতাম, বিভিন্ন রাইডে চরতাম, সব শেষে ক্লান্ত হয়ে গেলে পিসি খাওয়াতে নিয়ে যেত, ফুচকা, বার্গার, প্যাটিস। বার্গার ছিল আমার ফেবারিট।
ঢাকা থেকে ফিরে এসে বায়না ধরতাম বাবার কাছে বার্গার খাওয়ার। কিন্তু মফস্বলে বার্গার পাবো কোথায়? বাবা তাও শুধু হাসত ।
কয়েকদিন পর ঠিকই দেখলাম, বাবা ৩০ কিমি দূরে মৌলভীবাজার সদরে গিয়ে সেখানে একমাত্র যে ফাস্টফুডের দোকান ছিল, সেখান থেকে ঠিকই বার্গার নিয়ে আসলো ২ টা।
আমার কাজিনদের ডিস লাইন ছিল। ঢাকায় গেলে সন্ধ্যাবেলা ওদের সাথে কার্টুন দেখতাম। বাবার কাছে বায়না, আমার ডিস লাগবে। ডিস পাবে কোথায় বাবা এই মফস্বলে?
ঠিকই পরের বার ঢাকা থেকে কিনে আনলেন VCR; সাথে অনেকগুলা Disney Movie-র ক্যাসেট। ৮-১০ টা ক্যাসেট ছিল আমার। ডিস তো এনে দেয়া সম্ভব ছিল না। কিন্তু ঠিকই কার্টুন দেখার ব্যবস্থা করলেন । বাবার পক্ষে একটা VCR কিনা যে তখন কতটা কষ্টের ব্যাপার ছিল, শৈশবে তা বুঝতাম না।
আমার ছোট ভাই একবার অদ্ভুত একটা আবদার করলো। তার একটা তাঁরা লাগবে আকাশ থেকে। মায়ের মাথা খারাপ করে দিল। কিন্তু বাবার মুখে তখনও হাসি, তাকে আশ্বস্ত করলো, দেখি কি করা যায়।
ছোট ভাইকে নিয়ে বাসার বাইরে গেলো। আকাশের দিকে ওআআআআ শব্দ করে হাত বাড়িয়ে লাফ দিল। ছোট ভাই তখন এটা দেখে হেসেই অস্থির। তাকে কোলে নিয়ে বাবা আবার বাসায় ঢুকলো।
হয়ত আমার কাজিনদের মত এত কম বয়সে কম্পিউটার পাইনি, wonderland পাইনি, ডিস লাইন পাইনি; কিন্তু শৈশবের সঙ্গী হিসেবে বাবাকে সবসময়ই পাশে পেয়েছি, যেকোনো আবদারে, যেকোনো নিরসঙ্গ সময়ে।
বাবারা সবসময় ধনী। মানুষ আর্থিকভাবে দুর্বল হতে পারে, কিন্তু বাবারা কখনো দরিদ্র হয় না। টাকার দিক দিয়ে না হোক, কিন্তু মনের দিক দিয়ে, তাদের পরিশ্রমের মাধ্যমে, তাদের হাসির মাধ্যমে বাবারা সবসময় বড়লোক।
![](https://img.wattpad.com/cover/346186165-288-k815005.jpg)
YOU ARE READING
My Father: My First Best Friend (Bangla)
RandomThis short Bangla piece reminisces about my childhood in the 90s, highlighting the joyous moments spent with my always-smiling father who couldn't afford material luxuries but enriched my life through quality time, shared laughter, and heartfelt mom...