দিন চলে যায়

296 4 0
                                    

মাঘ মাসের তেইশ তারিখ। শীত তেম একটা নেই। তাপরও কয়েক দিন আগে পড়া তীব্র-শীতের অনুভূতি রয়ে গেছে। পরশু ঈদ। কোলাহল নেই। শহরের লোকজন সব গ্রামে চলে গেছে। পাড়াটা কেমন নিরব। প্রতি বছরই এমন হয়। লোকজন সব যখন গ্রামের বাড়ি চলে যায় ঈদের সময় রফিক সাহেবের এ সময় কেমন যেন লাগে। নিকট আত্মীয়রা ছেড়ে চলে গেলে যেমন খালি খালি  লাগে তেমন এক রকম অনুভূতি। রফিক সাহেব ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি যান না। আজীবন তিনি শহরেই ঈদ করেছেন। যাওয়া আসার খরচ এই অল্প বেতনের চাকিরতে কুলোয় না।

তিনি পাতলা একটা কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছেন। এইমাত্র ঘুম ভেঙেছে। মাথার ওপর থেকে কাঁথাটা এখনই সরাতে চাচ্ছেন না। তার আগেই নিশ্চিত হতে চাইছেন শুভ এসেছে কি-না। আজ সকালেই তার আসার কথা। গতকাল রাতেই সে সিল্কসিটি এক্সপ্রেসে উঠেছে। তিনি কান পাতলেন ঘরের চলমান শব্দগুলো ধরার জন্য যাতে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছা যায়। কোন সাড়া শব্দ নেই। রান্না ঘরের ট্যাপের পানি পড়ার শব্দ ছাড়া। শানুর মা বাসন কোসন ধুচ্ছে রান্না ঘরে। সুমি কোথায়? সুমির তো কোন শব্দই নেই! শুভ কী তাহলে আসে নি? ছেলের প্রতি কেমন যেন চাপা আবেগ অনুভব কতে লাগলেন। জ্বরের কারনেই এমন হতে পারি। গতকাল হঠাৎ করেই জ্বর একশ দুইয়ে উঠে গিয়েছিল। এখন অবশ্য জ্বর নেই মনে হচ্ছে। তিনি বালিশের পাশে রাখা মুঠোফোন খুঁজে বের করলেন। কাঁথার ভেতর এনে বোতাম টিপে সময় দেখলেন। দশাটা বাজে। সাথে সাথে মাথা বের করে ফেললেন কাঁথার ভেতর থেকে।

এ সময় স্যান্ডেলে চট টচ শব্দ তুলে শানুর মা ঘরে ঢুকলেন, গামছায় হাত মুছতে মুছতে। মেঝের ঠান্ডা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এই ব্যবস্থা।

'তোমার ঘুম ভেঙেছে? ভোর রাতে আর তোমাকে ডাক দিলাম না। ভাত গরম দেব?’

রফিক সাহেব বললেন, ‘শুভ আসেনি?’

’এসেছে। ঘুমাচ্ছে। তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে নাও। চায়ের পানি চুলায় দিচ্ছি।’

আবার জুতায় শব্দ তুলে পাশের রুমে চলে গেলেন।

ছেলেকে কাছে পেয়ে খুব খুশি বুঝতে পারলেন রফিক সাহেব। ভাড়ি শরীর নিয়ে হাত মুখ ধুয়ে, গামছা হাতে নিয়ে ছেলের রুমে উঁকি দিলেন। শুভ খাটের উপর উপুর হয়ে ঘুমাচ্ছে। সুমি পাশের টেবিলে লিখছে। শুভর দিকে চেয়ে অকারন এক ধরনের মায়া অনুভব করলেন।

দিন চলে যায়Where stories live. Discover now