মেঘবালিকা (পর্ব ১২)

50 5 0
                                    

১২.

সেদিন শুভর সাথে ফোনে কথা বলে একটা ফুরফুরে ভাব নিয়ে ফেসবুক এ ঢোকার সাথে সাথে সুপ্রিয়ার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।  ঐ ৬ ফুটের দানবটা ফেসবুকে মেয়েরা কি কি ন্যাকামি করে তা নিয়ে পোস্ট দিয়েছে।  সেই পোস্টে এক জায়গায় লিখা ছিলো "যেখানে সেখানে পড়ে গিয়ে কাপড় ছিঁড়ে কান্না কাটি করে"। সুপ্রিয়া বুঝে গেছিলো এই পোস্ট তাকে ইনডায়রেক্টলি অপমান করার জন্য দেওয়া। কি সমস্যা এই দানব টার? সুপ্রিয়াকে দেখলে ই এমন শয়তান এর মতো করে কেনো? সুপ্রিয়াকে বিরক্ত না করে কি এর পেটের ভাত হজম হয় না?

সেদিন খুব রাগ হচ্ছিলো এর উপর।  সব সিনিয়র জুনিয়র এর রুলস ভেঙে সুপ্রিয়া দানব টাকে ম্যাসেজ দিয়ে এক গাদা ঝগড়া করেছিলো।  দানব টা ও কম যায় নি সেদিন।  পুরা রাত ২ টা পর্যন্ত ওরা ম্যাসেজ এ মারামারি ই করেছিল।  পরে বিরক্ত হয়ে ব্লক করে দিলো।  উফ এই দানব টার জন্য শুভর সাথে সময় ও কাটানো যায় না। ফেসবুকেও কাহিনী করে।  এই দানবটা সুপ্রিয়া কে এতো বিরক্ত কেনো করে???

আজও এই প্রশ্নের উত্তর জানে না সে। কিন্তু আজ ভালোই লাগছে ভাবছে সে দানব টার কথা। আচ্ছা?  সুপ্রিয়া দানব টার কথা ভাবছে কেনো? নিজেকেই সে প্রশ্ন করল।

-----------------------------------------------------------------------
পরদিন সকালে সুপ্রিয়া ঘুম থেকে উঠে অনেক খুশি খুশি ভাব নিয়ে।  আজকে শুভ তাকে কি বলবে? হয়ত সুপ্রিয়া জানে কি বলবে।  তবুও কেমন অদ্ভুত লাগছে? ভালোবাসার মানুষের সাথে দেখা করার সময় মনে হয় এমনই অনুভূত হয়।  অন্যদিনগুলোতে সুপ্রিয়া অতো সাজুগুজু না করলেও আজকে নিজেকে একটু সাজিয়ে নিয়েছে।  ছোট একটা টিপ ও পড়েছে।  তার সাজগোজ দেখে বাকি দিত জন কাহিনী বুঝলেও কেউ কিছু বলল না গতকাল রাতের কাহিনীর জন্য।  সবাই হতাশার সাথে সুপ্রিয়াকে দেখছে।

উফ ওদের চাহনী সেদিন সুপ্রিয়াকে অনেক বিরক্ত করেছিল।  এভাবে তাকানোর কি আছে? ওরা কেনো সুপ্রিয়ার খুশিতে খুশি না? বিরক্ত হয়ে সুপ্রিয়া না খেয়েই বেরিয়ে গিয়েছিল।।

ক্লাস কখন শেষ হবে সুপ্রিয়ার শুধু এটাই অপেক্ষা।  শেষ হলেই না ভালোবাসার মানুষটাকে দেখতে পাবে সে।  কি অদ্ভুত অনুভূতি এটা। সময় টাও মনে হয় কচ্ছপের সাথে পাল্লা দিয়েছে, কে কত দেরি তে দৌড়াতে পারে।  প্রতি মিনিট অপেক্ষা করা টা ও কষ্টের হয়ে যাচ্ছে ।  আবার অনুভূতি টা ভালো ও লাগছে৷ দেড় ঘন্টা পর শেষ হলো ক্লাস। দেড়টা ঘন্টা দেড় বছর মনে হচ্ছিল।  ক্লাস শেষ হওয়ার সাথে সাথে সুপ্রিয়া দৌড় দিলো।  এতো জোরে দৌড় দিলো যে সিঁড়িতে ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলে।  আর ধপ,ধপ,ধপ করে পাঁচটা সিঁড়ি পার করে দেয়।  সুপ্রিয়ার কি যে ব্যাথা অনুভব হচ্ছিল।  গঙ্গানো শুরু করবে এমন সময় পেছন থেকে একটা অওয়াজ আসল," সবখানে না পড়লে ম্যাডামের মনে শান্তি লাগে না।  আবার আসে তর্ক করতে।"

হ্যাঁ।  অবশ্যই সুপ্রিয়া জানে এটা কে।  কে আর হবে? তার লাভ লাইফের কুফা।  ৬ ফুটের দানব।  সুপ্রিয়া নিজেকে শক্ত করে উঠে দাঁড়ালো।  খুব ব্যথা হচ্ছিল।  কিন্তু সে আওয়াজ করল না। দানব টা যদি আবার কিছু বলে।  উঠে পেছনে ফিরে বলল,"আপনার মেনার্স এর কমতি আছে দেখে উঠার জন্য সাহায্য করলেন না।"
দানব টা বলল,"এহহহ। শুভ তোমাকে মুক্তমঞ্চ নিয়ে যেতে বলসে। "
সুপ্রিয়া সব বিরক্তি মুছে দিয়ে রওনা হলো।  যাওয়ার পথে দানব টা মনে হয় যেন প্রতিযোগিতা শুরু করল জোরে হাঁটার।  এখানে সুপ্রিয়া ও হারার পাত্রী নই।  ঠিকই জোরে হেঁটে দানব টাকে হারিয়ে দিলো।।  তার তখন এক পৈশাচিক আনন্দ অনুভব হচ্ছিলো।  মুক্তমঞ্চ যেয়ে দেখল সেই ভালোবাসার মানুষটা তার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। সুপ্রিয়া কাছে যাওয়ার পর মানুষটা তার সামনে মাথানত করে বলব,
-"জীবনে খুব মানুষের সামনে এসে আমি থমকে গেছি গেছি।খুব কম মানুষই আমাকে অবাক করতে পেরেছে সেসব মানুষের মধ্যে তুমি ও একজন।  আসলে তুমি ওদের থেকে ভিন্ন।  আমি ভাবি নি আমি এভাবে প্রেমে পড়ে যাব কিন্তু পড়ে গেলাম।  তুমি কি প্রেমে পড়ে আমাকে উদ্ধার করবে?"

কথা গুলো মোটেও সাহিত্যিক ছিলো না।  কিন্তু বলার ভঙ্গি ছিলো অন্যরকম।   বলার সময় মনে হচ্ছিল আসলেই কোনো স্বপ্নের দুনিয়া। চারপাশে বাতাস শো শো করছে।  বাতাস টা মধুর ছিল না কিন্তু।  আকাশটাও কালো ছিলো।  এটাই সুপ্রিয়ার কষ্ট ছিলো, আকাশটা কেনো কালো? তার সব সুন্দর মোমেন্ট এ আকাশ ও খেলা করে। । 

কিন্তু যাকগে সে যাকে চেয়েছিল, সে তো আজকে নিজে তাকে ভালোবাসে বলেছে।  এটা ই তো মধুর।  সুপ্রিয়া ও জলদি হ্যাঁ বলে দিলো। আর চার পাশে তালি বেজে উঠল।
............................

মেঘবালিকা Onde histórias criam vida. Descubra agora