#11

62 6 0
                                    

পর্ব - ১১
*
লীলাকুঞ্জ নামটা ইশিতার মুখে শুনে চমকে ওঠে দুই বোন। ওরা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি বাড়িটা ইশিতার হতে পারে। ইশিতার প্রতিটি কথাই যেন একটা একটা করে জট খুলছে আবার নতুন করে একটা জট সামনে আনছে।
নিলার শরীর রীতিমত কাঁপছে । কারণ ইমরানের সম্পর্কে এই ধরনের মন্তব্য শোনার জন্য ও মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। বেশিকিছু খটকা নিজের মনেও ছিলো কিন্তু সেসবের এইরকম কিছু মানে দাঁড়াবে কল্পনা তো দূর, দুঃস্বপ্ন তেও ভাবেনি।
নিজেকে যথা সম্ভব শক্ত রেখে ইশিতার কথাগুলো শুনে যাচ্ছিলো।

ইশিতা বলেই যাচ্ছে -
আমার মা খুব সৌখিন মানুষ ছিলো। ছোটবেলা থেকেই গল্পের বই তার প্রিয়। বাবার মুখে শুনেছি মা নাকি হুমায়ূন আহমেদ বলতে প্রায় পাগল ছিলো।
মা খুব রেস্ট্রিকটেড ফেমিলিতে বড় হয়েছিলো। আমার নানাভাই একজন সৎ সরকারি অফিসার ছিলেন। সেই আমলেও তিনি বেশ কড়া ও শক্ত ধাচের মানুষ ছিলেন। বেতন অল্প হলেও তার কাছে সততাই বড়। নানুমণি নানাভাইকে খুব সম্মান করতেন আবার ভয়ও পেতেন। নানাভাই মেয়েদের লেখাপড়া কিংবা প্রয়োজন ব্যাতিত অন্য কোথাও সময় নষ্ট করা পছন্দ করতেন না।
তাই  বিয়ের আগে তেমন কোথাও ঘুরতে যেতে পারেনি মা। বাবা মায়ের বিয়ের পর মা প্রথমবারের মতো বাবার সাথে নুহাশ পল্লী বেড়াতে যায়। বাবা বলেন, ওখানে গিয়েই নাকি মায়ের মাথায় ভুত চাপে এরকম একটা কিছু মা'ও করবে তার সন্তানের জন্য। মা'ও একটা লীলাবতীর পদ্মপুকুর বানাবে। যেখানে তার মেয়ে বা ছেলের বউ অভিমান করে বসে থাকবে। আর অন্যজন এসে সেই রাগ বা অভিমান ভাঙাবে।
বাবা মায়ের সম্বন্ধ করে বিয়ে হলেও, "মা'কে বাবা খুব বেশি ভালোবাসতো, তাই মায়ের আব্দার রাখতেই শুরু করে দেয় মায়ের মনের মত ছোট্ট একটি বাড়ি। বাবার মুখেই শুনেছি - বাড়িটার কাজ প্রায় শেষ। একদিন মা বাড়ির ফাঁকা জায়গাটায় বসে হুমায়ূন আহমেদ এর লীলাবতী বইটা পড়ছিলো।  শুনেছি এর কিছুদিনের ভেতরেই মা জানতে পারে আমার আগমনী বার্তা।
জানি না কিভাবে মা নিশ্চিত ছিলো মেয়েই হবে। মা নাকি বলতো বাবাকে - "তুমি দেখো আমার মেয়েই হবে। আর ওর নাম আমি রাখবো লীলাবতী। আর আমাদের নতুন বাড়ির নাম হবে লীলাকুঞ্জ। ওইটা শুধুই আমার লীলার বাড়ি। ওখানে আমি কাউকে ভাগ দেবো না "
বাবা প্রথম দিকে খুব হাসতো মায়ের কথায়৷ কিন্তু আমি হওয়ায় বাবা মা দুজনেই যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছিলো। মা আমার জন্য খুব যত্ন করে লীলাকুঞ্জ সাঁজিয়ে গেছে। আমার জন্য মস্ত এক লাইব্রেরি বানিয়ে গেছে, যদিও আমি ওসব বইটই পড়ি না।....
''আপনি কাঁদছেন?'' হঠাৎ ইশিতার লক্ষ্য করে নিলা বলে ফেললো।
''ওহ শীট! কখন যে চোখে পানি এসেছে খেয়ালই করিনি। আই এম সরি। ''
দ্রুত হ্যান্ড ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে চোখদুটো মুছে ফেললো ইশিতা।
''না না ইটস ওকে। আমরা বুঝতে পারছি তোমার মনে অনেক কিছু জমে আছে। শুধু এটা বুঝলাম না তুমি হঠাৎ এসব আমাদের কেন বলছো!''
কৌতুক বশত রাইসা প্রশ্নটা করেই ফেললো।
রাইসার কথায় যেন ইশিতা কোথাও মজা খুজে পেলো। হালকা হেসে বললো, '' কারণ ছাড়া আমি কোনো কাজ করিনা রাইসা। আর আমার মনে হয়েছে এই কথাগুলো তোমাদের বলাটাই সব থেকে জরুরি। বিশেষ করে নিলাকে।''
'' আমাকে?'', নিলার চোখে মুখে আবারও বিষ্ময়। ও সত্যিই কিছুই বুঝতে পারছে না।
'' হ্যাঁ, তোমাকে। সবটা শুনলেই তুমি এমনিই  বুঝে যাবে। তোমরা দুজনেই বুঝবে। তো যা বলছিলাম, চোখদুটো আবারও মুছে ইশিতা বলা শুরু করলো,

হঠাৎ দেখা [ Completed✔]Where stories live. Discover now