অফিস শেষে জিসান তরীকে নিতে এসেছে। গাড়িতে উঠেই জিসান বলল,
"সরি, আজ দেরী হয়ে গেছে বোধহয়"
"সমস্যা নেই। আমারও হাতে কাজ জমে ছিল। মানুষ পারেও! যেগুলো আমার কাজ, সেগুলো নিজেরা তো করেইনি, নিজেদের কাজও কিছু আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে রেখেছে। সিনিয়রদের কিছু বলতে পারি না, সহ্যও হয় না"
"এরকম কাম চোর মানুষ তো আমাদের দেশে এভেইলেবল! অন্যান্য জাতি যেখানে অন্যের বোঝা সুযোগ থাকলে নিজেই টেনে নেয়, সেখানে এরা নিজের বোঝা কি করে অন্যের ঘাড়ে চাপাবে, সেই ধান্ধায় থাকে"
"আপনি তো অফিসে সিনিয়র। আপনিও কি এরকম করেন?"
"না, আমার এসব বদঅভ্যাস নেই। আমি নিজের কাজ নিজে করি, আর যেটা অন্যদের কাজ, সেটা তাদের দিয়ে করিয়ে নেই। আমাদের জীবনে স্ট্রেস এমনিতেই বেশি, খামোখা অন্যের স্ট্রেস বাড়ালে অভিশাপ ছাড়া আর কিছু কপালে জুটবে না"তরী ভাবছে, একটা কথা স্বীকার না করলেই না। জিসান মন থেকে খুব ভালো একটা মানুষ। তার চিন্তা চেতনা, বিচার আচার অনেক উন্নত। ইমরানও এমনই ছিল, ইনফেক্ট ওদের কাজিনদের মাঝে নীতি নৈতিকতা খুব সুন্দর। এদের বাবা মাও এমন, কখনো দুর্নীতি, বাটপারি, মিথ্যা বলা, ঝামেলা পাকানো, এসবের মাঝে নেই। ছোট ছোট দোষ তো সবার মাঝেই থাকে, কিন্তু খুব বড় কোনো ঘাপলা এদের মাঝে নেই বললেই চলে। কিছুদিন আগেও জীবনকে অনেক বেশি কঠিন আর স্রষ্টাকে বড্ড অবিচারক মনে হতো। বাচ্চাদের নিয়ে ছুটতে ছুটতে হাঁপিয়ে উঠেছিল। ও কি জানত জিসান এভাবে ওর ছায়া হয়ে মাথার উপর দাঁড়াবে? তবুও দুশ্চিন্তা হয়। বাচ্চার বাবা তো হয়েছে সে, দায়িত্ব কতদিন পালন করবে? কখনো যদি বাচ্চাদের দায়িত্ব সে অস্বীকার করে বসে? কিংবা বিরক্তিতে ওদের দূরে ঠেলে দেয়? হাজার হোক, নিজের সন্তান তো না। অন্যের ঔরসজাত সন্তানকে নিজের বলে বড় করতে কজন পারে?
জিসান মনোযোগ দিয়ে ড্রাইভ করছে। তরী আড়চোখে জিসানকে দেখে। ওদের ছেলে মেয়ে হলে ইশতি আর তন্দ্রাকে কি সে দূরে সরিয়ে দিবে? যদি দেয়?
জিসান ড্রাইভ করতে করতে তরীর দিকে তাকায়।
"আমার দিকে তাকিয়ে কি ভাবছো শুনি?"
তরী সাথে সাথে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল।
"কিছু না, এমনিই"
"ভাবছো, আমি খুব হ্যান্ডসাম, তাই না?"
"মোটেও তা না! খুব সেল্ফ অবসেসড আপনি, না?"
"তা না। তবে আমি যে হ্যান্ডসাম, এটা জানি!"
"তাই নাকি! অমন মিথ্যা কথা কে বলল আপনাকে?"
"মিথ্যা? তার মানে তুমি বলতে চাও আমি হ্যান্ডসাম না?"
"আপনি এভারেজ!"
"এভারেজ?! দ্যাট ওয়াজ রুড!"
"নো, ইটস দ্যা ট্রুথ"
"তাহলে চলো ডাক্তারের কাছে যাই"
"কেন?"
"তোমার চিকিৎসা দরকার"
"কিসের চিকিৎসা!"
"চোখের, আর কিসের!"
"ইশ!"
"এত সুন্দর একটা মানুষকে তুমি এভারেজ বলো, আমি নিশ্চিত তুমি চোখে কম দেখো"
তরী হাসছে।
"বাই দ্যা অয়ে, তুমি কিন্তু সুন্দরী, যথেষ্ট সুন্দরী! মাঝে মাঝে তোমাকে আগুন সুন্দরীও লাগে"
"আচ্ছা! তো কবে লেগেছিল আগুন সুন্দরী?"
"সেটা বলা যাবে না"
"যেদিন আগুন সুন্দরী লেগেছিল, সেদিনই বুঝি আমাকে পছন্দ করেছেন?"
"তোমাকে পছন্দ করার কারণ তোমার সৌন্দর্য না। হ্যাঁ, সৌন্দর্য অবশ্যই একটা ব্যাপার, আমরা সবাই সুন্দরের পূজারী। তবে এরকম কিছু হয় নি সেদিন। তোমার ভুল ধারণা"
"তাহলে যেদিন আমাকে পছন্দ করেছেন, সেদিন কেন আমাকে পছন্দ করলেন? কেবল ইশতির মা বলে তো নিশ্চয়ই না!"
VOUS LISEZ
আমি আবার, আর একটা বার
Roman d'amourইমরানের মৃত্যুর বছর খানেক পেরোনোর আগেই ওর ভাসুরের সাথে বিয়ে নিয়ে চাপ আসলো। না, আপন ভাসুর নয়, চাচাতো ভাসুর। ওদের বিয়ের পর খুব বেশিদিন তিনি দেশে থাকেন নি। তরীকে তিনি ভাইয়ের বউ হিসেবেও যথেষ্ট স্নেহ করতেন। অথচ এই লোককে কিনা তরীর বিয়ে করতে হবে? তাও আবার...