৩২

504 28 8
                                    


সকালে ঘুম ভেঙেও তরীর মন খারাপ। আচ্ছা, জিসানও কি ওর মত মাঝে মাঝে পুরাতন ভালোবাসার এলবাম নিয়ে বসে? ওকে না ভেবে পুরাতন ভালোবাসায় ডুবে? তরী বিছানায় হাঁটু উঁচু করে দুই হাতে পা জড়িয়ে ধরে তাতে মুখ গুঁজে বসে আছে। জিসান ঘরে এসে প্রশ্ন করল,
"এভাবে বসে আছো যে? অফিসে যাবেনা?"
"না, শরীর ভালো লাগছে না"
"কেন? কি হলো আবার?"
"কিছু না"
"তাহলে অফিস কামাই দিচ্ছো যে?"
"এত বেশি প্রশ্ন করেন কেন আপনি? না জানলে হয় না নাকি?"
তরী উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল হনহনিয়ে। জিসান অবাক হয়ে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল,
"মেয়েটি অমন রেগে গেল কেন?"

তরীর বাচ্চাদের দিকেও আজ মনোযোগ আসছে না, কেবল অনুভব হচ্ছে, ওকে ডায়রির বাকি অংশগুলোও পড়তে হবে। অথচ একটা ছেলেমানুষী অভিমানও কাজ করছে। কি হবে পড়ে? পীড়াদায়ক সময় কাটাবে কি করে যখন জানবে জিসানের মনের গহীনে অন্য কারো বাস? তরীর মন খুব খারাপ হয়ে যায়। হুট করে ঘরে গিয়ে তৈরি হয়ে নেয়। জিসান অবাক হলো।
"তুমি না বলেছিলে শরীর খারাপ লাগছে, অফিসে যাবে না?"
"মত পালটেছি"
"শরীর ভালো লাগছে?"
"হ্যাঁ"
"মুখ দেখে তো তা মনে হচ্ছে না"
"তাহলে কি মনে হচ্ছে? আপনি বুঝি এখন মানুষের মুখও পড়তে পারেন?"
জিসান নিষ্পাপ হাসি হাসলো। তরীর গলা জড়িয়ে ধরে সে নিজের কাছে টেনে আনলো।
"অমন গাল ফুলিয়ে অফিসে যাবে নাকি? এমনিতেই রসগোল্লার মত ফোলা ফোলা গাল তোমার। তার উপর যদি ফুলিয়ে রাখো..."
তরী একটুও না হেসে জিসানের চোখের দিকে সরাসরি তাকালো। জিসান ওর গালের দিকে মুখ এগিয়ে আনতেই তরী সরে গেল।
"শুধু শুধু ঢং করবেন না, অফিসে দেরী হচ্ছে"
জিসান হতাশা মাখা কন্ঠে স্বগতোক্তি করল,
"মেয়েদের ভালোবাসলে অভিযোগ করে, আবার বাসলেও বিপদ!"
"আচ্ছা, আপনার খারাপ লাগে না আমার মত খারাপ মেয়ের পেছনে নিজের সব গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট করছেন বলে?"
জিসান অবাক।
"খারাপ মেয়ে মানে?"
"এই যে, আপনি আমাকে এত পছন্দ করেন, অথচ আমাকে নিজের করে পাচ্ছেন না, আমি পুরোপুরিভাবে এখনো স্বামীর অধিকার বুঝিয়ে দেইনি আপনাকে। রাগ হয় না আমার উপর?"
"যদি আমার এমন কোনো ইচ্ছা হতো, এতদিনে কম সুযোগ পাই নি। এমন বেশ কয়েক রাত গেছে যখন চাইলেই আমার চাহিদা পূর্ণ করতে পারতাম। আমি করিনি। আমি চাই, তুমি নিজে আমার কাছে আসো, আমি যাবো না। আমি চাই, তুমি নিজে সম্মতিতে আমাকে তীব্রভাবে ভালোবাসবে। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটা ভালোবাসার মাঝে পূর্ণতা পায় তরী, কেবল বিছানার সম্পর্কটাই সব নয়। আর আমার কাছে তো নয়ই! আমাকে এতটা অধৈর্যশীল না ভাবলেও চলবে। তুমি একবার এই তীব্র প্রেমের স্বাদ পেয়েছ, আমি পাই নি। আমি চাই না এ থেকে বঞ্চিত হতে। তাই ধৈর্য্য ধরছি"
জিসান বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। তরী বিড়বিড় করে ভেংচি কেটে বলল,
"যতই ভালো মানুষ সাজুন, ধৈর্যের গল্প শোনান, আমি জানি, নিশ্চিত ঐ মেয়েকে এখনো ভুলতে পারেননি বলেই এমন রিজার্ভ থাকেন। আমি বুঝি সব"

আমি আবার, আর একটা বারWhere stories live. Discover now