#পর্ব ১ - উষ্ণতা

14 1 6
                                    

পৃথিবীর সর্ব্বোচ্চ শৈব তীর্থ তুঙ্গনাথ মন্দিরের ঠিক উল্টোদিকের পশ্চিম আকাশ জুড়ে তখনও সূর্য বিরাজমান। আমি মন্দির এর ঠিক সামনেই সবুজ ঘাসের গালিচা পাতা বুগিয়াল-টায় বসে আছি একটু উষ্ণতার জন্য । তখন-ও হাতঘড়িতে তাপমাত্রা 4℃ তবুও শীতল হাওয়ার হাত থেকে বাঁচার জন্য বেশ লাগছিল সেই পড়ন্ত বিকেলের নরম উষ্ণতা । সূর্যাস্তের রঙ মাখা পশ্চিম আকাশে চোখ রেখেও বার বার ঘুরে তাকাচ্ছিলাম পূবের মন্দির ও তার সংলগ্ন উঁচু খাড়া উঠে যাওয়া শৃঙ্গটার দিকে। ঠিকই ধরেছেন এই উঁচু শৃঙ্গটাই হলো চন্দ্রশিলা।

এবারে উত্তরাখন্ড আসার প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল ট্রেকিং। খুব tough না হলে একে moderate ট্রেকিং কিন্তু বলাই যায় আর জীবনে প্রথমবার এই রকম একটা ট্রেক করতে এসে চন্দ্রশীলা না উঠে ফিরে যাব এ কথাটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না আমি।

তুঙ্গনাথজী-র মন্দির অবধি তো উঠেই গিয়েছিলাম, কিন্তু তারপরের অত্যন্ত চড়াই পেরিয়ে ২কিমি চন্দ্রশীলা ওঠার মানসিক বা শারীরিক সাহস পাচ্ছিলামনা কিছুতেই ।
এখানে বলে রাখি সাহস না পাওয়ার প্রধান দুই কারণ হচ্ছে :
১. সেদিনের ৪.৫ কিমি খাড়া চড়াই উঠতে হয়েছিল ৮.৫কেজি ব্যাগ নিয়ে কারণ আমাদের রাত্রি যাপনের সামগ্রী নিয়েই আমাদের চড়তে হয়েছিল পাহাড় হয়ত সেই কারণেই ১৩,৬৮০ ফুট উচ্চতা ট্রেক করার পর সম্পূর্ণ শারীরিক শক্তি নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিলো আমাদের সব্বার ।

২. তুঙ্গনাথ মন্দির উঠতে উঠতে পথযাত্রীদের মুখে শোনা যে সেদিনই নাকি এক ব্যক্তির চন্দ্রশীলা থেকে নামতে গিয়ে বরফে পা পিছলে পড়ে মাথা ফেটে যায়, কেউ কেউ আবার বললেন চরম শ্বাস কষ্টেও সারারাত ঘুমোতে পারেননি তারা চারিদিকে বিচ্ছিন্ন ভাবে জমে থাকা বরফ-ও ভীতির সঞ্চার করছিল তখন মনে ।

তাই এসব ভাবতে ভাবতেই বার বার ঘুরে তাকাচ্ছিলাম সেই উঁচু শৃঙ্গ-টার দিকে আর মনোবল-টা বার বারই যেন ভেঙে যাচ্ছিল আমার।
বার বার ভাবছিলাম,
তাহলে কি সত্যি এতটাই দুর্গম এই রাস্তা? এতটা এসে, আর এইটুকু পারবোনা? তাহলে ছোটবেলা থেকে Bear Grylls কে মনে প্রাণে hero মানার ব্যাপারটা.. সেটাও কি তাহলে মিথ্যে হয়ে যাবে এবার?"
ইত্যাদি প্রভৃতি ভাবতে ভাবতে হঠাৎ কানে এলো দিদির ডাক, "ভাই এখান থেকে উঠে পরি চল" , ওর একথা বলার কারণ বোঝার আগেই ও আমাকে আরেকবার ধমক দেয়, আর আমরা উঠে পরি সেই বুগিয়াল থেকে । পরে পিছনে ফিরে দেখি, কিছু নেশাখোর ব্যক্তি গাঁজা টানার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তাই তুষার শুভ্র পর্বত শৃঙ্গে রঙের খেলায় চোখ রাখতে রাখতেই ফেরার পথে পা বাড়ালাম আমরা ।

Homestay ছিল বুগিয়াল থেকে খানিকটা নীচে নেমে । মন্দির চত্বর থেকে দু-পা হেঁটেই পৌঁছে গেলাম তাই।

ঘড়িতে তখন বিকেল ৪.৩০ সূর্যাস্তের সাথে সাথে ঠাণ্ডাও বাড়ছিল পাল্লা দিয়ে আর মেঘের কম্বল জড়িয়ে ধরেছিল তুঙ্গনাথ-ji র পাহাড়টাকে । বাইরে বসেও খুব একটা সুবিধে হচ্ছিল না, মেঘ আর রোদের লুকোচুরি দেখতে দেখতেই একবার একবার মাথায় আসছিল যে আজ বিকেলেই চন্দ্রশীলা উঠলে হয় এই অপার্থিব সূর্যাস্ত দেখতে , কিন্তু এত মেঘ আমার মনটাকে অন্ধকার করে তোলে মুহূর্তেই । অনেক চিন্তা করেও কোনো ভাবেই সেই মনের মেঘ কাটিয়ে সাহস করতে পারিনি চন্দ্রশীলা ওঠার।

চন্দ্রশিলা অভিযানWhere stories live. Discover now