#পর্ব ৩ - চন্দ্রাস্ত

12 1 5
                                    

ভোর ৪.৩০, ফোনে এলার্ম বেজে উঠলো,
এবারে আর একবারের বেশি দুবার ভাবিনি, জ্যাকেটটা গলিয়ে, জরুরি যা লাগতে পারে নিয়ে, লাঠিটা মাস্ট ছিল অবশ্য, মা কে বললাম , আমি আসছি,
মা- "কোথায়?"
আমি- চন্দ্রশিলা
আর কথা না বাড়িয়ে, বেরিয়ে পড়লাম অজানার উদ্দেশ্যে।
প্রথম যা দেখলাম তা দেখে ছুটে ভেতরে এসে সবাইকে একবার ডাকতে হলো আমায়।
চাঁদ অস্ত যাচ্ছে, হ্যাঁ ঠিক তাই অত লাল চাঁদ জীবনে দেখিনি আর সেই হয়তো শেষ দেখা ছিল , সেদিনটাই ছিল কোজাগরী পূর্ণিমা , আর তার বিশাল আকৃতির চাঁদ অস্ত যাচ্ছে, ভালো ক্যামেরা না থাকায়, ফ্রেমে বন্দি করতে পারিনি।
বাইরে অসম্ভব ঠান্ডা তখন, -৪℃ সঙ্গে প্রবল হাওয়া।
হাঁটতে শুরু করলাম, একপাশে চাঁদ অস্ত যাচ্ছে আর এক পাশে চন্দ্রশীলার পাহাড় তখনো যেন কালো চাদরে আবৃত হয়ে রহস্যময় হয়ে আছে আমার কাছে ।
খানিকটা হেঁটে আবার দাঁড়াতে হয় হঠাৎ একটা পড়ন্ত তারা দেখে থমকে দাঁড়াই... কি যেন এক প্রকৃতির খেলা চলছে চোখের সামনে ।
যারা আমার লেখাটা পড়ছেন , দয়াকরে জিজ্ঞেস করবেননা কি প্রার্থনা করলাম পরমেশ্বরের কাছে ।
তখনো মন্দির অবধি-ও পৌঁছাইনি, আলাপ হল দুই বাঙালি ভদ্রলোক এর সঙ্গে, একজন বেশ ফিট , তর তর করে এগিয়ে চলেছেন আরেকজন একটু হাঁপিয়ে পিছিয়ে পরছেন অন্যদের থেকে । তাদের মুখে জানতে পারি, আমার জন্মদাত্রী তাদের দেখতে পেয়ে আদেশ দিয়েছেন আমাকে রাস্তায় দেখতে পেলে একসাথে যেতে। অগত্যা উপায় না থাকায় ঘুটঘটে অন্ধকারে টর্চের আলো ফেলে একপাশে খাদ আর আরেক পাশের দেওয়াল ধরে চলতে থাকি।
রাস্তা নেই বললেই চলে, পাথরে বরফ পরে, পিচ্ছিল হয়ে গেছে পথ, ভরসা টর্চ ,লাঠি আর আমার Decathlon-এর জুতো দুটোর ওপর।
আস্তে আস্তে মন্দিরে জ্বলা আলোটা ছোট হয়ে আসে, প্রায় ১০০০মিটার altitude gain মাত্র ২কিমি হাঁটাতে, অর্থাৎ তীব্র খাড়াই , একবার ভাবি আর পারবোনা, কারণ শ্বাসকষ্ট ও হচ্ছিল প্রবল আর এতটাই অন্ধকার আর ঠান্ডা যে একসময় আর নেওয়া যাচ্ছিলনা । কিন্তু সেই বাঙালি ভদ্রলোক বারবার সাহস দিলেন আর মাঝে মাঝেই "হর হর মহাদেব" বলে উঠতে শুরু করলেন । এই চিৎকারে কোথা থেকে যেন প্রবল শক্তি পাচ্ছিলাম আমরা তাই সেই শক্তি সঞ্চয় করে আবার চলতে শুরু করলাম এবং প্রায় ৪৫মিনিটেই পৌঁছে গেলাম শীর্ষে , আমার সঙ্গে আরো প্রায় ১০-১৫ জন ছিলেন যারা উঠেছিলেন শুধুমাত্র সূর্যোদয় দেখার জন্যই।
ওপর থেকে ৩৬০° হিমালয়ের
বিশাল বিশাল সব পর্বত শৃঙ্গ দেখা যায়। কুলীন সেই পর্বতকূলে তখন দাঁড়িয়ে আমি একা, এতদিনের এত অপেক্ষা, এত পরিকল্পনা, এত চিন্তা- ভাবনা, মানুষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা সমস্তই ছিল এই ১৪০০০ ফিট এর শৃঙ্গটায় ওঠার জন্য, কি যেন এক শান্তি হচ্ছিল মনে, অপার শান্তি ।
সূর্যোদয় দেখলাম , এক একটা পর্বত চূড়া কেমন একের পর এক আলোকিত হয়ে উঠছিল, যেন সেই বরফাবৃত পাহাড় এর চূড়ায় আগুন লেগে উঠছে । সেই সঙ্গে চোখ পড়লো আমার সব থেকে প্রিয় দৃশ্য আমার উপস্থিতিসহ পাহাড়ের দীর্ঘ ছায়া যা একটা জায়গা জুড়ে পরে আছে ত্রিকোণ আকারে।
প্রায় ৩০মিনিট কিভাবেই যেন কেটে গেল, হালকা শ্বাস কষ্ট অনুভব করছিলাম তাড়াহুড়ো করে আসার সময় কর্পূর-টাও আনতে ভুলে গিয়েছিলাম। তাই আর কোন রকম ঝুঁকি না নিয়ে নামতে শুরু করলাম।
নামার সময় যেখান দিয়ে উঠেছিলাম সেটা ভালো করে এবার দেখতে পেলাম, আর ভাবলাম, "সত্যি আমি এখান দিয়ে উঠেছিলাম?" মনে মনে নিজেকে অজান্তে একটু বাহবা দিলাম, নামার সময় আলাপ হলো এক মাত্রসমা ভদ্র মহিলার সঙ্গে , তাঁর নানান জায়গায় ট্রেক এর গল্প শুনতে শুনতে ধীর গতিতে নামতে শুরু করলাম , একরাশ স্মৃতি নিয়ে নেমে এলাম যেখান থেকে শুরু করেছিলাম।
একটা ছোট্ট প্রমিস রাখার জন্য আমি অনেকটাই ঝুঁকি নিয়েছিলাম তা নামার সময় বারবার অনুভব করলাম ।
এবার শেষ করি একটা কথায়,
প্রকৃতিকে অনুভব করতে চাইলে ট্রেক করুন, বিশ্বাস করুন যত কষ্ট করবেন ততটাই ভরিয়ে দেবে প্রকৃতি আপনাকে, নিজেকে বলুন Top, Top and Top শুরুতে হয়ত মনে হবে I'm too short to reach the top but at the end of your journey আপনার মনেহবে "yes I can do anything I want"

চন্দ্রশিলা অভিযানWo Geschichten leben. Entdecke jetzt