২.

29 11 0
                                    


আশেপাশে সারা শব্দ না পেয়ে মোহনা জানালা দিয়ে উকি দিয়ে দেখলো  আশেপাশে কেউ আছে কিনা।  এতক্ষণ সে ঘাপটি মেরে এক কোণায় লুকিয়ে ছিল; কেউ আবার এসে তাকে দেখে ফেলে কিনা!
সামনে এবং আশেপাশে জানালা দিয়ে যতদূর চোখ যায় কাউকে না দেখতে পেয়ে, মোহনা খুব সতর্কতার সাথে রুমটি  থেকে বের হলো। হতে পারে এটি ভাঁড়ার ঘর ছিল। যাকে ইংরেজিতে বলার স্টোররুম। 
রাতের বেলা ঘুটঘুটে অন্ধকারে আশেপাশে কিছু বোঝা যায়নি। আসলে এই  স্টোর রুমটার দুটো দরজা। সকালবেলা যে দরজাটি দিয়ে ঢুকে ছিল এখন সে দরজাটি দেখতে পেল আটকে আছে। কেউ হয়তো বাইরে থেকে আটকে দিয়েছে। এখন উপায় হচ্ছে দ্বিতীয় দরজা দিয়ে বের হওয়া। যেটা হচ্ছে মেইন দরজা। কিন্তু সেটাতো মুশকিল ব্যাপার।  এ দরজার পরেই হচ্ছে বিশাল বড় উঠান। রাতের বেলা বোঝা যায়নি তেমন, এটা তেমন একটা ভাঙা বাড়ি নয় বরঞ্চ বলা যায় পুরানা আমলের বাড়ি। 

সে গুটিগুটি পায় কয়েকবার  সকলের চোখ এড়িয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু নাহ! পারলো না। কারা যেন ধান নিয়ে কি যেন করছিল। অনেকে পা দিয় ধান মাড়াচ্ছিল কিন্তু কি যে করছিল তা  ঠিক বুঝতে পারল না। মনে হলো বেশ  প্রভাবশালী পরিবারের মানুষ, হতে পারে জমিদার! 

হঠাৎ করে চতুর্থবার এর মতন যখন  বের হওয়ার চেষ্টা করলো  তখনই মোহনার মায়ের বয়সী এক মহিলা চেঁচিয়ে  উঠল, “দেশের মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছে আর তারা খেয়ে খেয়ে মোটা হচ্ছে। তারা খেয়ে খেয়ে ইউটিউবে জন্য শুটিং করছে, ভিডিও বানাচ্ছে, ডকুমেন্টারি বানাচ্ছে। এ বয়সে আর কত কিছু দেখতে হবে গো বাবু!  আমাদের সময় এসব ছিল না!  ১৮ বছর তো হলো, সে তো কলেজ মনে হয় না আর পাস করবে !  সারাদিন শুধু ইউটিউব- ইউটিউব,  খাবার -খাবার, ডকুমেন্টারি ডকুমেন্টারি! আর এই সোহান টাও  হয়েছে!  সেই কই ভাই কে বলবে, পড়ালেখা কর পড়ালেখা কর!  না সে আরো উৎসাহ দিচ্ছে, বন্ধুদের নিয়ে আসছে! এই রাতুল তোর দাঁত ব্রাশ করা হলো?? নাকি আমি এখন উপরে আসবো! তিন্নি ঘুম থেকে ওঠ!”
না! এই চতুর্থ বারও বের হতে পারল না মোহনা। রুমটির  ভেতরে ঢুকে পড়ল,  দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে সে ২০ মিনিট পর আবার বের হওয়ার চেষ্টা করল যখন আশেপাশে কেউ ছিল না।  কিন্তু নাহ! এবারও পারলো না! এক কদম নিতে না নিতেই, পাঁচ থেকে ছয় বছর বয়সী এক মেয়ে এসে উঠোনে দৌড়ানো শুরু করলো।
বাড়ির এক  বুঁড়ো লোক, হতে পারে দাদু, পীড়িতে বসে বসে মাথায় তেল দিচ্ছিল।
এই মেয়েটি বোধ হয় তিন্নি  নামের মেয়েটি।  সে দৌড়ে গিয়ে বলল, “দাও দাদু, আমি তোমার মাথায় তেল দিয়ে দেই! "
“এই নে!” বলে বুঁড়ো তেলের বোতলটি, তিন্নির হাতের কাছে এগিয়ে দিল।
“দাদু তেল দিলে চুল উঠবে।”
“তাই? ঠিক বলছিস দাদু চুল উঠবে?” - বুঁড়োর চোখ খুশিতে জ্বলজ্বল করে উঠলো।
“হ্যাঁ, দাদু উঠবে তো!”
এই বলে তিন্নি হাতের মধ্যে  কতগুলো চুল পাকিয়ে একসাথে করে এনে বলল, “এই যে দেখো কতগুলো চুল উঠেছে!  উঠবে না?  বুড়ো বয়সে তেল দিলে সব চুলতো উঠেই যাবে!”
এই বলে তিন্নি দিল এক দৌড়,  আর বুড়ো মেঝেতে পড়া ঝাড়ু নিয়ে দিলো তিন্নির পিছনে আরেক দৌড়!

শান্তিনিকেতনের ভ্রম 🕊️Where stories live. Discover now