৫.

19 9 7
                                    

খালের ধারে কতগুলো শিয়ালমতি গাছ গজিয়েছে বেশ  বহুদিন হলো।এটাকে বেশ গাছ গাছরা বলেই চালানো যায়। দেখতে আবর্জনার মত। তবে এর বেশ ভালো উপকারিতা রয়েছে, এটি  ভূমিক্ষয় রোধ করে।  তাই খালের পাশে জন্মানোটা বেশ ভালই হয়েছে বলে বলা যায়।  আর পাশেই প্রকাণ্ড এক বট গাছ আর তার অপর পাশে একটি তেঁতুল গাছ।  রাতুল তেঁতুল গাছে উপর উঠে একের পর এক  তেঁতুল ছিড়ে ছিড়ে মাটিতে ফেলেছিল আর মোহনা তা কুড়োচ্ছিল।
তিন্নি পাশে বট গাছের ঠেস দিয়ে বসে, এক বাটি থেকে লবণ নিয়ে সমানে তেতুল খাচ্ছিল।

রাতুল উপর থেকে বলে উঠলো, “এই মেয়ে আমি কালকে রাতে তোমাকে ভাবা পিঠা ট্রিট দিয়েছি, চিতল পিঠা ট্রিট দিয়েছি, আজকে তেঁতুল পেড়ে দিচ্ছি,  আজকে আমাকে তুমি ভিডিওর আইডিয়া দিবা, আর কোনো কথা নেই। ”

“ধরো এটা যদি গরমের সময় হতো এই আবছা আলোতে তোমাকে দেখে মনে হতো গাছের উপর ঠেস দিয়ে একটা ভুত দাঁড়িয়ে আছে।সেবেলায়  আমি তোমাকে যদি দেখতাম আমি তোমার নাম দিতাম গোবর্ধন। কারণ তুমি এই একটা ভালো কথা বলো, আর এই একটা খারাপ কথা বলে পুরো মুডটাই নষ্ট করে দাও। ”

“এভাবে যদি তুমি আমাকে গোবর্ধন মহাশয় বলে সম্বোধন করো, আমিও তোমাকে খালের  জলের রুপালি রূপে বাধা দানকারী  কচুপাতা বলেও সম্মোধন করতে আগ্রহী হবো।”

তিন্নি অন্যমনস্ক। একের পর এক তেঁতুল খেয়েই যাচ্ছে।
রাতুল গাছ থেকে ঝাঁপ দিয়ে নেমে, তিন্নির হাত থেকে লবণের বাটিটা  নিয়ে বলে, “মা~রেহ্! তুই যদি এতগুলা করে লবণ খাস তোর জিভ্ ছিলে যাবে না?  তুই যে এতগুলো করে তেঁতুল খাচ্ছিস  তোর যে এলার্জি, মারাত্মক আকার ধারণ করলে, চাচি এসে আমাকে মার দিবে।” 

এই খালের ওপর পুল পার হয়ে,ওপাশে দুটি চাষার ক্ষেত কিছু দূর অবধি।
চাচি হন্তদন্ত হয়ে কোথা থেকে জানি আসছে।
চাচির চেহারা দেখে বুকটা কেমন কেঁপে উঠলো রাতুলের, মনের গতি আর ঠিক ঠিকানা পাচ্ছে না।
আজ তিন্নির স্কুলে এডমিশনের রেজাল্ট ছিল। তাহলে কি তিন্নি চান্স পায়নি? 
গত মাস থেকে এ পর্যন্ত দুটো স্কুল চেষ্টা করল। একটাতেও  তিন্নি ঠিক করে উত্তর দেয়নি। পারে না যে তা না, সে টিচারের সামনে গেলে সব ভুলে যায়।
এটাতে না হলে, শহরের স্কুলে ভর্তির আশা বাদ দিতে হবে। সামনের বছর আসতে আর বেশি সময় নেই। তখন তাকে পাড়ার স্কুল এই ভর্তি করাতে হবে।

শান্তিনিকেতনের ভ্রম 🕊️Where stories live. Discover now