part 1

33 4 3
                                    

আজ রিমি  বেশ দেরিতেই ফিরেছে  ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো  10:30pm। আজও একই হলো বাবার বকাবকি ,  রিমি সিড়ি দিয়ে ওঠার সময় দখল ভাই ঢুকছে । রিমি কিছু না বলে ওপরে এসে ফ্রেশ হতে ঢুকলো ...

রিমি , রিমি সেন , কলকাতার দামী অপিসে  কাজ করে সাজপোশাক সাধারণ, দেখে মনেই হবে না যে ও কত উঁচু পদে। অপিসে সবাই রিমি কে সন্মান দেয় ভালোবাসে, রিমির কাজে সবাই বেশ খুশি ,শুধু  খুশি হলো না তার পরিবার , সবাই আজও মনে করে মেয়ের বিয়ে ছাড়া আর কিছু করা সাজেনা । সংসার ,বাচ্চা সামলানো , বর শশুরবাড়ি এটাই একটা মেয়ের জীবন । রিমি একদিন এসবের প্রতিবাদ করায় আজ সব থেকে সে বঞ্চিত, সেদিন তার নতুন বাবা ,(রিমির মায়ের দ্বিতীয় স্বামী , রিমির আসল বাবা মারা যাওয়ার পর যে বলেছিল এই মেয়ের সব দায়িত্ব  আমার আর বিয়ের দু বছরে মধ্যে বুঝিয়ে দিয়েছিল যে সে একটা আশ্রিত) তিনি সেদিন  শান্ত গলায় বলেছিলেন" যে থালায় খাচ্ছ সেই থালায় জল ফেলনা , থালা কিন্তু কেরে নেওয়া হতে পারে। জানো তো আমার বাড়িতে থাকতে হলে আমার নিয়ম আমার আদেশ মানতেই হবে আমার কথার বাইরে কিছু হবেনা জানো নিশ্চই ? এত বছর আছ তাই বলছি শোন, জানি তুমি ভালো সভ্য মেয়ে তাই ভালো করেই বোঝাচ্ছি তোমার বিয়ের ঠিক করা হচ্ছে , তোমার  বিয়ে দেওয়া হবে বিয়ে করে চলে যাবে । পাত্র ভালো মোটা মাইনের চাকরি তোমার অসুবিধা হবে না । দেখ,একটু পরেই তারা তোমায় দেখতে আসবে তাই তৈরি হয়েনাও । সব সময় ভাইয়ের সাথে নিজের তুলনা করোনা। এতে আখের  তোমার খারাপ হবে।তোমায় অনেক দূর পড়ানো হলো যতটা দরকার তার থেকে বেশি পড়েছ , মেয়ে মানুষ হয়ে এত পড়াশোনা চলেনা কি করবে পড়ে? তোমার ইচ্ছা পূরণ হলো এবার আমারটা করো  তোমার  জন্যে এর থেকে বেশি কিছু করতে পারব না।  যাও " । এসব আগে থেকে না জানা রিমি সেদিন তার জীবনের  প্রথম প্রতিবাদ টা করেছিল বাবার মুখের ওপর বলেছিল " না এই বিয়ে আমি করবো না । অনেক ধন্যবাদ আমায় এত পড়িয়োচো । এবার আমি তোমার দেওয়া শিক্ষার মান রাখবো । আমি চাকরি পেয়েছি তাই আনন্দে সবাইকে নিয়ে আজ খাওয়াদাওয়া করতাম কিন্তু তোমরা আমার বিয়ের কথা বলছো. আমি কি এতটাই বোঝা ?? কই বাকিদের তো বলা হয়না আমার দোষ টা কোথায় যে এত বছর ধরে এত কথা সনালে । তুমি তো জেনেই বিয়ে করেছিলে মাকে তাহলে আমায় দোষ দিচ্ছ কীকরে । আমার তো দোষ নাই   ভাইয়ের সব দোষ মাফ আর আমার  ইচ্ছা  আর সখ সবই বোঝা ?? এত বছর তো কিছু চাইনি তোমার কাছে ! আমায় তুমি আজ খাবার খোটাও দিলে ঠিক আছে এত বছর তুমি যত খরচ করেছ আমার পিছনে সব যতটা সম্ভব শোধ করে দেবো দিন রাত তোমার এই অপমান আর সহ্য হচ্ছে না । আমি তোমায় বাবার মতো ভালবাসতাম আর তুমি আমায় কি করলে??  আমি এবিয়ে করবনা  ক্ষমা করো । " সেদিনের পর সবার সাথে রিমির কথা বন্ধ রিমি শুনেছিল মা কে একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে বলা কথা গুলো যার জন্য হাজার ইচ্ছা থাকলেও মা কথা বলেনা ঠিক করে খাবার টেবলও যায়না রিমি ওটা যদি টাইমে বাড়ি আসে তবে ঘরে পাঠানো হয়।  পুজো পার্বনের সময় বাইরের লোকের সামনেই সে শুধুমাত্র বাড়ির মেয়ে হয় , সবার চক্ষুলজ্জা আছে কিনা। এটা নিয়ে রিমি কিছু বলেনি তার মা একদিন বলেছিল "রিমি ঘরে যাই হোক সেটা বাইরের লোকের সামনে প্রকাশ করবিনা । " তাই এটা মেনে নয় সে। এত বছরে এসব এর একটুও পরিবর্তন হয়নি তবে এখন চাকরি করা টা মেনে নেওয়া হয়েছে ।তাও টাকার জন্যই মা কি বুঝিয়েছিল কে জানে ।
সেসব থাক,  অনেক দিন পর রিমির মন খারাপ এর সঙ্গী বারান্দাতে এসে দাঁড়িয়েছে, রিমি জানে আজ রাতে ও দেরি করে ফেরার জন্য খেতে পাবে না , কেও অপেক্ষা করেনি আজ অব্দি রিমির জন্যে, রিমির মা কোনো কোনোদিন খাবার লুকিয়ে নিয়ে আসে তাও অবশিষ্ট অংশ , রিমির বাবা যখন দেখে যে ঘড়ির কাটা ১০ টা পেরিয়ে যাচ্ছে সেদিন সবাই কে তাড়াতাড়ি খাইয়েদিয়ে শুইয়ে দেয়।রিমির এসব অভ্যেস হতে গেছে । আগে খুব কষ্ট পেতো রিমি  এখন সে দেরি করে ফিরলে কিনে আনে খাবার। আজও সে নিজের খাওয়ার নিয়ে এসেছে বাইরে
থেকে  তার প্রিয় তন্দুরিরুটি আর মাংস। বারান্দায় দাঁড়িয়ে রিমি সিগারেট ধরিয়ে কানে বাজতে থাকা প্রিয় গানটায় মন দিতে চেষ্টা করলো  , আজ কিছুতেই মনটা দিতে পারছে না  অনেকদিন পর মনের কোনে জমে থাকা কষ্টগুলো বেরোতে চাইছে। একটার পর একটা সিগারেট শেষ হতে থাকে , কানে বাজতে থাকা গানটা আজ ওকে মুক্তি দিতে পারছে না ,কি করবে রিমি ??কিসের জন্যে কষ্ট পাচ্ছে ও ? মাকে ভেবে? এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ তার চোখ পরে  রাস্তায় কাদতে থাকা একটা কুকুরের দিকে  কানে ফুল ভলিউমে গান চলার জন্যে তার কান্না রিমির কান অব্দি পৌঁছায়নি। সে দেখলো যে কুকুরটা একটা কুকুরের দিকে তাকিয়ে কাদছে যারদিকে তাকিয়ে কাদছে সে কিন্তু শুয়ে , ভালো করে তাকিয়ে দেখে বোঝা গেলো যে সে আর নড়ছে না খুব সম্ভবত , হতে পারে ওই কুকুরটা কাদতে থাকা কুকুরটার খুব কাছের কেও যে তাকে চিরদিনের মতো ছেড়ে চলে গেছে । রিমির এবার চোখের কোনটা ভিজে গেলো হাতে থাকা সিগারেট টা ছুড়ে ফেলে দিয়ে ঘরে চলে এলো , এসব কান্না আর সহ্য হয়না তার । একসময় অনেক কেদেছে সে , একা ঘরে  তারপর সবাই ঘরে থাকলে চানের সময় শাওয়ের টা জোরে চালিয়ে এখন এসব আর সহ্য হয় না কিন্তু রিমি বিরক্ত না কারণ প্রিয় মানুষের হঠাৎ চলেযাওয়ার কষ্ট টা সে বোঝে ।রিমি তার খাবার টা নিয়ে বাড়ির বাইরে চুপিচুপি বেরিয়ে যায় কিছু খাবার কুকুরটাকে দিতে । খাবার টা কুকুরটাকে দিয়ে সে এগিয়ে যায় ওই শুয়ে থাকা কুকুরটার দিকে ঠিকই ধরেছে সে , কুকুরটার হৃৎপিণ্ড কাজ করা ছেড়ে দিয়েছে কাদতে থাকা কুকুরটার দিকে তাকিয়ে এবার তার বড্ড মায়া হলো হয়ত এটা ওর মা কিহবে এবার এর,এও কি রিমির মতো একা হয়ে যাবে ? রিমি নিজের ভুল শুধরে নেয় কুকুরটা সম্পূর্ণ একা আর রিমির সব থেকেও কেও নাই একটু পার্থক্য আছে বটে , মনেমনে একটু হেসে নেয় সে ।কুকুরটাকে খাইয়ে সে আবার সব বন্ধ করে ঘরে ঢুকে পড়ে ,নিজের অংশটুকু খেয়ে শুতে যাবে এমন সময় তার কানে আবার কান্নার আওয়াজ যায় কুকুরটা আবার কাদছে । উফফ এখন কটা দিন বড্ড জ্বালাবে, এমন করলে শোবে কি করে.. দুর বাবা সারাদিন পর কি আজ ঘুমটাও হবে না এবার বিরক্ত লাগে তার আস্তে আস্তে তার কান্না বাড়ছে বই কমছে না এটা তঃ কুকুর কিছুই  বোঝে না মানুষ হলে নয় কিছু হতো । যাকগে আজ একটু শোক পালন করুক বাঁধা দেবে না সে নিজে কানে হেডফোন টা লাগিয়ে গান চালিয়ে দিল
"বড়ো ইচ্ছে করছে ডাকতে
তার গন্ধে মেখে থাকতে

ভালোবাসার বারান্দাWhere stories live. Discover now