পর্বঃ৩৬

9 1 0
                                    

# বাস্তবতা
      পর্ব-৩৬

মা,বাবার কাছে মেয়েদের বিদায়ের মুহূর্ত বড় কষ্টের।
আদর ,যত্ন ও ভালোবাসা দিয়ে একটু একটু করে মেয়েকে বড় করে ।
সেই মেয়েকে একদিন পরের হাতে তুলে দিতে হয়।
ছেড়ে দিতে হয় নিজের দাবি।
তখন মেয়েটির ওপর থাকে শুধু ,
স্বামীর অধিকার।
সাহানা কে বিদায় দিয়ে তাঁর মা,বাবা ও বোনেরা কান্নায় ভেঙে পড়লো।
ইতি ছোট এতো কিছু না বুঝলেও
সে এটা বুঝতে পারছে তার আফু তারে রাঁইখে বেড়াইতে যাচ্ছে।
তাই সে চিৎকার করে কাঁদতেছে আর বলছে , আমি যামু আমি যামু।
ইতির কান্না দেখে সাহানা  জোরে জোরে কাঁদতেছে
আর বলছে সোনা পাখি কাঁইদো না।

সাহানা কাঁইদা কাঁইদা ওর মাকে বলছে,মা ...মা গো ওরে আমার সাথে দিয়া দাও ।
ওরে ছাড়া আমার মন টিকবো না ঐখানে।
মাঃ মা তুই এমন কইরা কাঁন্দিস না , ওরে পরের বার নিস,
এহন তোঁর লগে দেওয়া যাইবো না।
এরপর সাহানা কে বিদায় দিলো।

সাহানা কে বিদায় দিয়ে , ঘরের ভিতরে যাইয়া মা ও মেয়েরা কান্নায় ভেঙে পড়েছে।
যাওয়ার সময় বর যাত্রীরা, বর ও তাঁর বন্ধুরা ছাড়া সবাই ভ্যানে এ আসছিল আর বর ও তাঁর বন্ধুরা আসছিলো টেম্পুতে।

সাহানা কে নিয়ে আসার সময় বর, কনে ও বরের বন্ধুরা  টেম্পুতে আসছে। আর  বর যাত্রীরা বেশি ভাগ হাঁইটা আবার কেউ কেউ ভ্যানে আসছে।

বাশারের বাড়িতে যাওয়ার  রাস্তা কাঁচা  ও উঁচুনিচু হওয়ায়  বাড়ি পর্যন্ত টেম্পু আইতে পারে নাই।
তাই ওগো বাড়ি থিকা কিছুটা আগে নামাই দিছে।
সাহানা,বাশার ও তাঁর বন্ধুরা অতোটুকু রাস্তা হাঁইটায় বাড়িতে আসছে। বাড়ির সামনে দরজার কাছে আইসা দাড়াইয়া আছে।
বাশারদের বাড়ি আগে ছাপড়া ছিলো এক বছর হয়লো ফ্লোর পাঁকা কইরা‌ কাঠের পাটাতন দিয়া দুই তালা
করছে।
আর ছয় মাস হয়লো দুতলায় দুইটা কেবিনেট  ( কেবিনেট বলতে কাঠের বেড়া দিয়ে যে রুম বানানো হয় তাকে বোঝায়।) করছে।
পিছনের বারান্দা র সাথে লাগাইয়া টয়লেট ও গোসল খানা করছে।
তবে দিনের বেলা গোসল ও টয়লেটের কাজ সারতে হয় একটু দূরে। সেখানে আরেকটা বানানো হয়েছে।

বাশারের মা আইসা  দরজার সামনে প্রথমে কাঁদা ভর্তি বড় থালা রাইখা, তারপর ঘরের দরজার সামনে পাটা রাখছে।
সাহানারে কইলো ও বউ আগে কাঁদার থালাই  পাড়া দাও তারপরেত পাঁটাই  আমার পোলার সাথে একলগে দাড়াও।

সাহানা চুপচাপ কাঁদায় ভিতরে পাড়া দিয়া পাঁটার ওপরে দাঁড়ায়লো।

বাশারের মা বাশার ও সাহানা মিষ্টি মুখ করাইয়া ঘরের ভিতরে ঢুকাইলো।
সন্ধ্যা থিকা এশার  পর্যন্ত সাহানার কথা বইলা  বাশারের সাথে তাঁর বন্ধুরা
মজা  করলো।
রাকিবঃ দোস্ত  প্রথম রাতেই বিলাই মারতে হয়বো‌ বুঝলা।
আদিলঃ একটা প্যাকেট হাতে দিয়া কইল দোস্ত নে বিলাই মারতে কামে লাগবো।
বাবু এ কথা শুনে হাঁইসা দিলো।

কিছুক্ষণ পর,,

বাশারের এক ফুফাতো বোন সাহানা কে নিয়া দোতলায় যাইয়া বাশার যে কেবিনেট এ থাকে সেহানে বসাই দিয়া কইল ,
এহানে বইসা থাকো আমি তোমার জামাইরে  পাঠাইতেছি।
যাওয়ার আগে বলে গেলেন স্বামী কে  সালাম করতে ও দুই রাকাত নফল নামায পড়ার জন্য ।
আরও বললেন স্বামী যা বলে তা শুনতে।
সব শুনে সাহানার রাগে ফুঁসছে নতুন জায়গা ভিন্ন ধরনের পরিবেশ তাই কিছু কইলো না।
রুমের চারপাশে  তাকাইয়া দেখলো  এ রুমে কি কি আছে ।
কাঠের আলনা, বড় আয়না দিয়া কাঠের ড্রেসিং টেবিল, ট্রাংক ও কিছু হাবিজাবি।
দেখতে দেখতে হঠাৎ কাইল রাইতের কথা মনে পইরা গেলে।
বিয়ে ঠিক হইবার পর সাব্বির এর সাথে দেহা করতে পাগলের মত করছিলো।

কিন্তু কোনো ভাবেই যহন দেহা করতে পারছিলো না ।
তহন শেষে একটা সিদ্ধান্ত নিলো সে কোনো মতেই এই বিয়া করবে না।
তাই বিয়ার আগের দিন মধ্যে রাইতে বাড়ি থিকা পালাইতে চায়ছিলো ।
বিয়ার আমজে যহন সবাই ঘুমিয়ে আছে।
তহন বাড়ি থিকা বাইর হইয়া আসছিলো ।
কিন্তু কেমনে যানি তার মা দেইখা ফালাইলো।
তাঁর মা বুদ্ধিমতি মহিলা বুঝতে পারলো সাহানা পালাইতে চায়ছিলো ।
তখন কোনো শব্দ না কয়রা বাড়ির পিছনে সাহানা কে নিয়া  কসম কাটাইলো যে সাহানা পালাইলে তাঁর মার মরা মুখ দেখবে।
সাহানা প্রথমে কসম কাটাতে রাজি না হয়লে।
তাঁর মা তাকে জোরে দুইটা চঁর মারলেন।চঁর খাইয়া মায়ের মুখের দিকে তাঁকাইলো ।

তাঁর মায়ের অগ্নি রুপ দেইখা সাহানা ভয়ে কসম কাটালো।
হঠাৎ রুমের দরজার সামনে আওয়াজ পাইয়া ভাবনা থিকা বাস্তবে ফিরলো।

বাহিরে বাশারের বন্ধুরা কইলো আমগো কিছু দিয়া তর
অপেক্ষার প্রহর শেষ কর।

চলবে.....,,

গল্পঃ#বাস্তবতাWhere stories live. Discover now