পার্ট - ৮

611 21 0
                                    


খাবারের পর ঔষুধ খেয়ে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। মনে মনে ভাবছিলাম কি করব?? আসলে আমার ঠান্ডা মাথায় ভাবা উচিত কি করা দরকার। না হলে অস্থির হয়ে কোন দিন হার্ট এট্টাক করি। মারোয়া এতক্ষন আমার কাছেই ছিল। বেচারির অবস্থা আমার চেয়ে বেশি খারাপ। খেয়ে না খেয়ে কান্না করতে করতে মেয়েটি একদম শুকিয়ে গেছে এই দুই দিনে। এখন জোর করে পাটাইছি মুক্তার সাথে খাওয়ার জন্য। না হলে আমাকে ধরে বসে থাকবে।। আমি ভাবছিলাম মামুন আর সিয়ার কথা। আগে মনে হয়েছিল আমি দেয়াল হয়েছি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছিল যে আমার স্বামী আমি কাউকে ভাগ দিবো না। আল্লাহ আমার সাথে জোড় দিসে সিয়ার সাথে না। চলে যাবো এখান থেকে। তখন সিয়া আর পাশে আসবেনা। আমার শান্তির সংসারে অশান্তি লাগাতে কাউকে দিবোনা। এত মহৎ না যে নিজের স্বামী কে অন্য কে দানে দিয়ে দেবো!! যে আসবে উড়িয়ে দেবো।
এসবই ভাবছিলাম চোখ বন্ধ করে। আরো ভাবছিলাম সিয়া কে কিভাবে দূর করা যায়। তখন দরজা টা খোলার আওয়াজ পেলাম। কেউ একজন রুমে ঢুকেছে। আমি চোখ খুললাম না। মামি না হলে মারোয়া হবে তাই। অপেক্ষা করতে লাগলাম যে এসেছে তার কথা শোনার জন্য। কিন্তু কিছুক্ষন ধরে সবকিছু নিরব। কি ব্যপার?? কেউ একজন ঢুকেছিল নিশ্চিত। তাহলে নিরব কেন?? আমি চোখ খুললাম। দেখলাম ফারান বসাতে আমার পাশে। আমি চমকে উঠলাম। ফারান আমার কপালে হাত রাখতে চেয়েছিলো। কিন্তু আমি চোখ খুলে ফেলায় সে আর পারেনি। আমি ধরপড়িয়ে উঠে বসলাম। তারপর আমতা আমতা করে বললাম
..... আপনি এখানে??
..... দেখতে আসছিলাম।।
...... কেন?? চলে যান এখান থেকে।
...... এত দৌড়াচ্ছিলে কেন?? তারপর শুনি দু দিন ধরে তুমি বেহুশ!! 
.
আমি লক্ষ করলাম সে আর আমাকে আপনি বলছেনা তুমি করে বলছে। কিছুটা ভয় হলেও আমি জোর গলায় বললাম
.... তাতে আপনার কি??
..... আমি শুধু দেখতে আসছিলাম।
...... দেখেছেন?? এবার চলে যান। আর আসবেন না।
..... এভাবে বলছো কেন?? আমাদের পূর্বের শত্রুতা আছে নাকি??
ফারানের এই কথায় আমি বুঝতে পারলাম যে কোন ভাবে ওর সন্দেহ সৃষ্টি হয় এমন কিছু করা যাবে না।
...... নেই। তবে আমার ভালো লাগছেনা তাই।
..... ঠিক আছে। আমার কেন জানি মনে হল আমি তোমাকে চিনি। গতকাল চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জানি না শুধু তোমার কথা মনে পড়ছিল। শুধু মনে হচ্ছিল তোমাকে একটু দেখে আসি। কিন্তু কেউই আমাকে তোমার সাথে দেখা করতে দিচ্ছিল না। তাই লুকিয়ে এসেছি।
.
কি বলবো বুঝছিলাম না। শুধু ঘাম ঝড়ছিল। আর ওর কথা শুনছিলাম।
..... তোমাকে কি আগে থেকে চিনি নাকি বলো না?? আমার মনে পড়ছেনা।।
...... না না।। আমি প্রথম দেখলাম আপনাকে।। 
...... মিথ্যা!!
..... না এটা সত্যি।।
...... তাহলে ঠোঁট কামরাচ্ছোচ কেন?? 
আমি একটু চমকে গেলাম এই কথায়!! ও চিনে গেল না তো?? ঠোঁট কামরানো বন্ধ করলাম।
....... এমনি!!
..... তাহলে ঘামাচ্ছো কেন??
..... কই?? না আসলে একটু গরম লাগছে তাই
..... তুমি কিছু লুকাচ্ছো না তো??
...... একদম না!!
..... একটা কথা বলি??
..... না!!
..... মানে??
...... না বলেন বলেন।
..... তোমার নাম মোহিনী???
এই কথায় মনে হল আমার মধ্যে এটম বোমা ফাটল ভিতরে। উত্তরে মাথা নেড়ে না বললাম। সে বলল
...... সত্যি???
...... জি!! আমার নাম রেনুমা।। 
অনেকটা তোতলিয়ে বললাম। 
...... আগে কেমন জানি মনে হত আমার কাছে যেন কিছু একটা নেই। কিন্তু অনেক কষ্টে জানতে পারি আমার মোহিনী আমার কাছে নাই। তাই ওকে খুজছিলাম। এখানে এসে বার বার মনে হল তুমিই হবে।। যেদিন আমার সামনে পড়লে তখন মনে হচ্ছিল এইতো আমার হুরপরি, আমার মোহিনী!! আমি পেয়েছি!! এই আমার মোহিনী। যাকে আমি খুজছি। 
...... আমি মোহিনী না। আমি রেহনুমা হাসান।
...... জানি আমি। কিন্তু একটা কথা মনে রাখবা!!
.... কি??
..... আমার মনে হচ্ছে তুমিই আমার মোহিনী। আর যেদিন আমি তা ধরতে পারবো সেদিন দেরি করবোনা। আমার মোহিনী কে আমার সাথে নিয়ে যাব।
...... না না আমি মোহিনী না। আমি বিবাহিতা। আমি অন্যর স্ত্রী। আমার স্বামী ও এখানে আছে।
...... আই ডোন্ট কেয়ার! আমি এত কিছু জানি না। যদি জানতে পারি তুমিই আমার মোহিনী তাহলে তোমার নামের শুরুতে আর শেষে শুধু আমি থাকবো।
.
তারপর ফারান থেকে উঠে চলে যাচ্ছিল। তারপর আবার কি মনে করে পিছন ফিরে আসল। ওর মুখটা একদম কাছাকাছি নিয়ে আসল। তারপর হাত দিয়ে আমার কপাল থেকে টপটপ করে পড়া ঘাম আঙ্গুলের মাথায় নিতে নিতে সে বলল
...... জানো প্রতিদিন রাতে তোমার সাথে দেখা হয়। একটা দিঘিতে।। তুমি তখন সাদা রঙের গাউন পড়। সাথে সাদা ফুলের মুকুট তোমাকে হুরপরির মত লাগে। ঠিক আমার হুরপরি!!!
.
ঘামগুলো আমার মুখের উপর ছিটকে মেরে এই কথা গুলো বলল। ঘামের নোনতা ছিটকে পড়ার সাথে সাথে আমি মুখ ওদিকে ফিরে ফেললাম। আর সাথে সাথে ফারান গটগট করে বেড়িয়ে গেল। রুমের দরজা বন্ধ হওয়ার আওয়াজে মনে হল এক সাথে কয়েক রাউন্ড গুলি আমার মাথায় ঠেসে দেওয়া হল। আমি বুঝতে পারছিলাম না কি হলো এখন। ফারান তো প্রায় আমাক চিনে ফেললো!!! এখন?
ফারান মনে হয় এখনো কিছু একটার অপেক্ষায় আছে। যেটা সে বুঝতে পারছেনা। 
না!! সেটা বুঝতে দেওয়া যাবে না। আমি চলে যাবো। থাকবো না এখানে। সবাইকে বলে দিবো। এই ভেবে আমি বিছানা থেকে নামলাম। দরজার দিকে হেটে যাচ্ছিলাম। কিন্তু কার্পেটের মধ্যেই আমার পা আটকে গেল। তার উপর আমি প্রচুন্ড দুর্বল ছিলাম। আর টাল সামলাই তে পারলাম না। পা আটকে পড়ে যাচ্ছিলাম কিন্তু কেউ একজন ধরে ফেলল। আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ছিলাম। কিন্তু নিজেকে মাটিতে পড়তে না দেখে চোখ খুললাম দেখার জন্য। আশ্চর্য!!! আমি ঝুলে আছি এমন ভাবে যেন কেউ আমাকে ধরে রেখেছে!! অথচ কেউ নেই!! সব শুন্যতা!! কিসে ধরে রেখেছে তা জানতে না পেরে আমি ভয়ে চিৎকার দিলাম। আর সাথে সাথে ওটা আমাকে ছেড়ে দিল। আমি ধপাস করে ফ্লোরে পড়ে গেলাম। পড়ে গিয়ে কোমড়ে প্রচুন্ড ব্যাথা পেলাম। ব্যাথায় আমার শরীর কুকড়ে উঠল। আমি উঠার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু উঠার আগেই আবার পড়ে যাচ্ছিলাম। শক্তি পাচ্ছিলাম না। ভয় সব কোথায় চলে গেল। শুধু মাত্র উঠার চেষ্টা করছিলাম। ব্যাথার কারনে উঠতে পারছিলাম না। আমি যখন উঠার চেষ্টা করছিলাম তখন আমার শরীর অনেক হালকা মনে হল। মনে হচ্ছিল আমি উপরে উঠছিলাম। কিন্তু দেখলাম আমি সত্যি উপরে উঠছি তবে নিজের পায়ে না। অলৌকিক ভাবে। কেউ যেন আমাকে কোলে তুলে নিল। অথচ আমি তাকে দেখছিলাম না। আমি চুপসে গেলাম। নিজেই সহজবোধ করছিলাম না। তারপরও কিছু বললাম না। কাকে কি বলবো?? আমি তো কাউকে দেখছিলাম না। 
এরপর অপার্থিব বস্তুটা আমাকে ধীরে ধীরে বিছানাই শুইয়ে দিল। তারপর গায়ের উপর কাঁথাটা টেনে দিল। আমার শরীর কাঁপছিল মৃগী রোগীর মত।। সব অলৌকিক ভাবে!! এরপর আমার মনে হল আমার মুখের উপর কারো নিঃশ্বাস পড়ছে। আমি দেখছিলাম না। কিন্তু অনুভব করছিলাম। ওই নিঃশ্বাস টা মানুষের নিঃশ্বাস ছিল না। কারন ওই নিঃশ্বাসে শুধুই বেলি ফুলের গন্ধ ছিল। আর মানুষের নিঃশ্বাসে কখনো বেলি ফুলের গন্ধ হতে পারে না। তাহলে অপার্থিব কোন কিছু!!! 
ধীরে ধীরে আমার কপালে কিছু একটার স্পর্শ আসলো। বুঝলাম না কি। আমি কাঠ হয়েছিলাম। নিঃশ্বাস নিচ্ছিলাম না একদম। এরপর দরজায় নক করার আওয়াজ আসলে গন্ধ টাও চলে যায়। মনে হল এতক্ষন যে অপার্থিব বস্তুর উপস্থিতি ছিল সেটা চলে গেছে। এরপর আমি নিঃশ্বাস টা নিতে পারলাম। জানি না কতক্ষণ চেপে রেখেছিলাম। মারোয়ার খাওয়া শেষ তাই সে চলে এসেছিল। আমি তাকে কাছে আসতেই ঝাপিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। শক্ত করেই ধরলাম। মারোয়া চমকে উঠে বলতে লাগল
.... কি হয়ছে ভাবি?? আপনি এমন করতেছেন কেন?? কি হয়ছে??
আমি ওকে কিছু বলতে পারলাম না। শুধু বললাম
....... কিছু না কিছু না।
তারপর ওকে দুহাতে ধরে তাকিয়ে বললাম
...... মারোয়া আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবা না!! একদম যাবা না।
এক নিঃশ্বাসে বললাম।
..... ঠিক আছে ভাবি।।
.
সন্ধা হয়ে এসেছে। সবাইকে নাস্তা করার জন্য টেবিলে ডাকা হয়েছে। আমি আর মারোয়া গেলাম নাস্তার টেবিলে। মামুন শুধু ঔষুধের সময় গিয়ে দেখে আসত। আর ভালো করে কথা বলত না। আমার খুব খারাপ লাগত। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমার সংসারে ওই মেয়ে প্রবেশ করে ফেলেছে। তাই মামুনের আমার প্রতি যে মায়া টা জন্মেছিল সেটা নষ্ট হতে চলেছে। এই বাড়িতে আমার কখনো ভালো হয়নি। সবসময় খারাপ হয়েছে। টেবিলে বসলে ফারানও কোথ থেকে চলে আসল। ভ্রু কুচকে শুধু তাকাতে লাগল। সে সোজাসুজি আমার মুখোমুখি বসল। আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম। সিয়া আসল। সে আমার দুই চেয়ার পড়েই বসল। তারপর মুক্তা। মুক্তা অলওয়েজ বিজি। ফোন টিপতে টিপতে এলোএলো। সে এসে সিয়ার পাশে বসল। আমি কিছুটা মনঃক্ষুণ্ণ হলাম। মুক্তা কি মনে মনে সিয়া কে সাপোর্ট?? হতেও পারে। সে তো আমাকে পছন্দ করেনা। কিছুক্ষন পর মামুন আসল। সে এসে দেখল। তারপর আমার পাশেই বসে পড়ল। কারন সিয়ার পাশে সিট ছিল না। এক পাশে মামি অন্য পাশে মুক্তা। আমার খুব আনন্দ হল। আমি হাসি মুখে মামুনের দিকে তাকালাম।
.
(চলবে)

 মোহিনী_২ ♥প্রেমান্ধ♥Where stories live. Discover now