পার্ট - ৩৩

478 17 0
                                    


খাওয়া শেষ হলে আমি ফারানের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিছুটা ভাবনায় পড়েছিলাম কারন সব তো আমি খেয়ে ফেললাম ওর জন্য রাখি নি। খাওয়ার যোগ্য হলে অবশ্যই রাখতাম।।
এখন কি করবো?? ফারান তো উপোস!!
.
ভাবতে ভাবতে ফ্রিজ খুললাম এক হাতে। ফারান অন্য একটা কাজে ব্যস্ত। না হলে আমাকে চিন্তা করার সময়টুকু ও দিত না।।
ফ্রিজে দেখলাম কয়েকটা নুডলস এর প্যাকেট, ডিম, মিষ্টি, পাউরুটি, নানা জাতের ফল আরো কি সব যেগুলোর নাম পর্যন্ত আমি জানি না। 
.
মাথা ঘুরে গেল।। ওখানে দাড়িয়ে চিন্তা করতে লাগলাম। যদি নুডলস করি আমার একহাত দ্বারা সম্ভব না আবার বার্গার ও করতে পারি তবে একটু কষ্ট হবে।। তবে কাপ নুডলস হলে এত সমস্যা না।
.
সব শেষে চিন্তা ভাবনা করে বার্গার করব বলে ঠিক করলাম। পাউরুটি বের করতেই ফারান কোথ থেকে চলে এলো।। তারপর এসেই বলতে লাগল
...... কি করছো তুমি?? তোমাকে মানা করছি না কিছু না করতে??
...... অ অ অ একটা বার্গার বানাতে চাইছিলাম।।
...... কি জন্য?? আবার খিদা লেগেছে?? অামাকে বললেই পারতে। আমি বানিয়ে দিচ্ছি।।
..... হুম!!
.
আমি কিছু বললাম না। পাশে দাড়িয়ে ওর বার্গার বানানো দেখছিলাম। ও বার্গার বানাতেও অপটু। তাই পাশে দাড়িয়ে নির্দেশনা দিচ্ছিলাম। 
বার্গার বানানো শেষ হলে ফারান সেটা আমাকে দিল। আমি বললাম
...... আমি খাব না। আমার পেট ভরা।।
..... কিন্তু তুমি না বললে খিদা লেগেছে!!
..... কই আমি বলেছি??
..... মোহিনী!!!
..... এটা তোমার জন্য!!
.
ফারান কিছুক্ষন আমার দিকে কিছুক্ষন বার্গারের দিকে তাকাল। তারপর বলল
..... তুমি আমার জন্য বার্গার বানাতে চেয়েছিলে???
উত্তরে আমি মাথা নাড়ালাম শুধু।। ফারান একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল
.... থ্যাংকস!!!
.
এরপর সে দাড়িয়েই বার্গার খেতে লাগল।। আমি ওকে বসতে বললাম। 
খাওয়া শেষে ফারান একটা তৃপ্তির ঢেকুর তুলল। আমি হেসে দিলাম। 
.
রুমে আসতেই কোথা থেকে আযানের সুর ভেসে এলো।। নিশ্চয় অনেক দূরের আযান। কিন্তু খুব ভালো লাগল। আমি তৈরি হতে লাগলাম। এরি মধ্যে ফারান এসে বিছানায় শুয়ে পড়ল।। শুয়েই আমাকে ডাকতে লাগল।। আমি গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম
..... আযান দিচ্ছে। নামাজ পড়বেনা??
এই কথায় ফারান আমার দিকে কিছুক্ষন তাকাল। তারপর জবাব দিল
..... না।
..... কেন??
..... আমি নামাজ পড়ি না। আমার পড়তে ভালো লাগে না।।
..... এটা কোন কথা হল?? যে আমাদের কে বানাইছে তার ইবাদত করবেনা??
.... মোহিনী আমি ক্লান্ত!! এ ব্যাপারে আমি কথা বলতে চাই না।।
.
ফারানের এরকম রুক্ষ আচরনে আমি মনক্ষুন্ন হলাম। তথাপি কিছু বললাম না।। বিছানা থেকে উঠলাম নামাজ পড়ার জন্য। বিছানা থেকে উঠতে গেলে ফারান ডাক দেয়।।
....... তুমি কোথায় যাচ্ছ??
...... নামাজ পড়তে!
...... তুমি অসুস্থ!! নামাজ পড়তে পারবানা।। চলো শুইয়ে পড়
..... না
..... মোহিনী!!
...... তুমি পড়ছোনা তাতে আমি কিছু বলছি!!
..... ঠিক আছে।। তোমার যা ইচ্ছা কর।।
.
.
এই বলে ফারান ধপাস করে বিছানায় আবার শুয়ে বালিশে মুখ গুজে ফেলল।।
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাথরুমের দিকে এগিয়ে গেলাম। অযু শেষে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়ে নিলাম। পড়ার সময় হাতে একটু ব্যাথা হয়েছিল। কিন্তু পাত্তা দিলাম না। আমার প্রিয় নামাজের ওয়াক্ত হচ্ছে ফযর।। খুব ভালো লাগে এই সময় টা।।
.
নামাজ শেষে সালাম ফিরানোর সময় মনে হল কেউ তাকায় আছে।। সালাম ফিরিয়ে দেখলাম ফারান ঘুমায় নি।। বেডের উল্টা দিকে বুকে ভর দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।। ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকালাম।। ও ঠোটের কোন মৃদু হাসি দিল। আমি মুনাজাত ধরলাম।।
.
.
আমার নামাজ শেষ করে জায়নামাজে বসা অবস্থায় জিজ্ঞেস করলাম
...... কি হল?? 
ফারান জবাব দিলনা। বেড থেকে নেমে এসে জায়নামাজে আমার সামনে বসলো।। আমি বুঝতে পারছিলাম না কি হল?? কিছুক্ষন আগেও নামাজ বিরোধী ছিল। আর এখন আমার সাথে জায়নামাজে!!
.
ফারান জায়নামাজে বসে দু আঙ্গুলের পিঠ দিয়ে আমার গালে বুলাতে লাগল।। আমি গাল সরিয়ে ফেললাম। আমি গাল সরিয়ে ফেললে ও আমার নাকের মাথা ধরে টান দিল আলতো করে।। আমি ভ্রু কুচকে হাত দিয়ে নাক মুছলাম।
এটা দেখে ফারান একটা মিষ্টি হাসি দিল।।
...... কি হল তোমার?? কেন এমন করছো??
..... কিছু না।।
..... ঠিক আছে।।
এই বলে আমি উঠতে যাবো অমনি আমার দু হাত ধরে বসিয়ে দিল।। তারপর হাত দুটো ধরে বলতে লাগল
...... আগে তোমাকে হুর ভাবতাম কিন্তু এই সাদা কাপড়ে তোমাকে হুরের চাইতেও বেশি সুন্দর লাগতেছে।। হুরের চাইতে সুন্দর তুমি মোহিনী।।
.
আমি হেসে দিলাম ওর কথা শুনে দিলাম।
...... অনেক প্রশংসা হল।। এবার চল।।
.
এই বলে উঠে দাড়ালাম।। ফারান ও দাড়াল।। বিছানার দিকে এগুতেই ফারান আমাকে ঝট করে কোলে তুলে নিল। আমি কিছুটা চমকে গিয়েছিলাম।।
..... ফারান!!
.
ফারান কিছু বলল না। শুধু ধীরে সুস্থে বেডে শোয়াই দিল।।
তারপর অপর পাশে এসে আমার দিকে ফিরে সে শুয়ে পড়ল। তারপর আমার হাত ধরে বলল
..... তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি??
..... হুম
..... তোমার হাতে আঘাত পেলে কিভাবে??
.
এই কথার সাথে সাথে আমি ওর দিকে তাকিয়ে ঢোক গিললাম।। তারপর কি বলব ভাবছিলাম।। কিন্তু মাথায় কিছু আসছেনা। রুমে এসি চলছে তারপরও আমার গরম লাগছিল।।
...... কি হল?? 
...... ও ও ফারান আ আ আমমি""""""
আবার ঢোক গিললাম।। তারপর দ্রুত এক নিঃশ্বাসে বললাম
.... আমি পড়ে গিয়েছিলাম!!
.
বলে ফারানের দিকে তাকালাম।। কিন্তু ফারানের কোন ভাবান্তর লক্ষ করলাম না।। কি হল?? ভালো করে খেয়াল করলাম ফারান ও ঢোক গিলছে।। আর ও তাকিয়ে আছে"""""
বুঝতে পেরে আমি ওকে ধাক্কা দিলাম।।
......ফারান!!!
ধাক্কা খেয়ে মনে হল ওর হুশ ফিরল।। আমার দিকে তাকিয়ে বলল
..... আমার দোষ কি?? এভাবে কামড়ালে আমি সহ্য ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবো।।
..... যাহ্!!
.
কি সব বলছে?? লজ্জায় আমি ওর দিকে তাকাতে পারছিলাম না। 
তাই তাড়াতাড়ি ওর দিকে পিঠ দিয়ে অপর পাশে শুয়ে গেলাম। না দেখলেও বুঝতে পারছিলাম যে ও মিটি মিটি হাসছে।।
.
ওহ্....... কি যন্ত্রনা!!
.
.
সকালে ঘুম ভাঙল অনেক দেরিতে। ঘড়িতে দেখলাম বারোটা বাজে।। ধড়পড়িয়ে উঠে পড়লাম। উঠতে গিয়ে হাত চাপ পড়ল।। উফফ্!!
এতক্ষন ঘুমিয়ে থাকার কথা না।। আর সাতটা বাজলেই মারোয়া চলে আসে। আজকে মারোয়া কোথায়??
.
বিছানা থেকে নেমে গেলাম। ফারানকেও কোথাও দেখা যাচ্ছে না। রুম থেকে বেড়িয়ে মারোয়ার রুমে গেলাম। ওখানে মারোয়া নাই। মনে হল নিচে বাগানে খেলছে।। নিচে নামতেই শ্যামলা ধরনের মধ্যবয়স্ক মহিলা সামনে এসে দাড়িয়ে সালাম দিল। আমি থমকে গিয়ে জবাব দিলাম। এই মহিলা কে আবার??
..... কে আপনি?? এখানে কি করছেন??
..... ম্যাডাম আমি নতুন কাজে যোগদান করেছি আজকে থেকে।। স্যার আমাকে রেখেছে।।
...... শুধু একজন?? 
..... নাহ্!! তিনজন।
..... বাকি দুজন কই??
..... ওরা কাজ করছে।।
...... ওহ্!! আচ্ছা!!
.
আমি চলে যাচ্ছিলাম। তারপর আবার পিছনে জিজ্ঞেস করলাম
..... মারোয়া কোথায়??
..... ম্যাডাম মারোয়া??
..... ছোট মেয়েটা!!
..... ম্যাডাম ওকে স্যার সাথে করে নিয়ে গেছে।।
..... কি??
.
আমার মাথায় যেন বাজ পড়ল।। ফারান কেন মারোয়া কে নিয়ে গেল?? কোথায় নিয়ে গেল??
.
(চলবে)

 মোহিনী_২ ♥প্রেমান্ধ♥Where stories live. Discover now