পার্ট - ১১

567 22 0
                                    


ফারানের মায়ের আধ পোড়া লাশ আমার চোখের সামনে ঝোলানো।। এত বড় নৃশংস কে হতে পারে?? ফারান!! না না! নিজের মা কে কেউ এই ভাবে খুন করতে পারেনা।। কিন্তু নিজের পিতাকেও সে ধাক্কা দিয়ে মেরে ফেলেছিল। তাহলে এই কাজটাও কি ফারান করেছে!!! তাহলে কি কারনে করেছে?? নিশ্চয় কোন কারনে করা হয়েছে। আমি লাশটার দিকে আরেকবার তাকালাম। নিচের দিকটাই প্রায় গলে গেছে। আমার সেদিকে নজর পড়তেই গা গুলিয়ে বমি আসতে লাগল। তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেড়িয়ে বাথরুমের দিকে ছুটলাম। হড়হড় করে বেসিনে বমি করে দিলাম। তারপর ভালো করে হাত মুখ ধুয়ে নিলাম। তারপর মুখ তুলে আয়নাই তাকাতেই দেখতে পেলাম একটা কালো ছায়া আমার পিছনে দাড়িয়ে!! চিৎকার করে পিছনে ফিরলাম। কিন্তু পিছনে কিছু ছিল না। আমি তাড়াতাড়ি বাথরুমের দরজা খুলতে গেলাম। কিন্তু দরজাটা খোলা গেল না। আমি আবার পিছনে তাকালাম। দেখলাম কালো ছায়া টা আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমার ভয়ে বুকটা দুরদুর করতে লাগলে। দরজায় ক্রমাগত ঠোকা দিয়ে চিৎকার করতে লাগলাম। ছায়াটা অনেক কাছে চলে এসেছে। আমি আরো জোরে জোরে ঠোকা দিতে লাগলাম। হঠাৎ করে দরজা খুলে গেল। বাইরে বেরিয়ে দেখলাম মারোয়া। ও বলল
..... ভাবী কি হয়ছে???
..... কিছু না মারোয়া। তোমার ব্যাগ গোছাও মারোয়া। আমরা এখনি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।
..... ভাবি কেন??
..... মারোয়া যেটা বলছি সেটা কর।
..... ঠিক আছে!!
মারোয়া কে ব্যাগ গোছাতে বলে আমি মামুন কে খুজতে বেরুলাম। মামুন কে খুজে পাচ্ছি লাম না। কোথায় যেতে পারে মামুন??? মুক্তার রুমে গিয়ে মুক্তা কে জিজ্ঞেস করলাম। সে ছাদে যেতে দেখেছিল বলল। আমি ছাদে গেলাম। ছাদে ঢুকবো এমন সময় শুনলাম একটা মেয়ের আওয়াজ। দরজা একটু ফাক করে দেখলাম মামুন আর সিয়া পাশাপাশি বসে আছে!! হঠাৎ এটা দেখে আমার বুকে প্রচুন্ড ব্যাথা হতে লাগল। না জানি আমার কেন এত কষ্টে হচ্ছিল। আমি নক করলাম। দুইজনেই আমার দিকে তাকাল। সিয়া উঠে তাড়াতাড়ি মাথা নিচু করে ফেলল। আর মামুন বলল
..... রেনুমা তুমি এখানে?? কোন দরকার ছিল??
..... জি!! আমি এখান থেকে এখনি চলে যাব। আমি আর থাকবোনা এখানে।
...... কিন্তু এখন এভাবে যাওয়া আমাদের ঠিক হবে না।
..... ঠিক আছে। আপনি থাকেন। আমি চললাম।
..... রেনুমা!!!
আমি এটা বলে চলে এলাম। আমার চোখের পানি বাধ মানছিলনা। রুমে এসে ব্যাগ গুছাতে শুরু করলাম। কিছুক্ষন পর দরজায় নক করার শব্দ এলো। আমি পিছনে তাকালাম। সিয়া এসেছে। আমি তাকাতেই ও রুমে ঢুকল। আমার অনেক কষ্ট হচ্ছিল তারপরও বললাম
...... কনগ্রাচুলেশন!!! মাই হাসবেন্ড ইজ ইয়োর নাও!!!
..... আপু এরকম বলবেন না।। আমি জানি""""""
..... কি জান তুমি??? কতটা কষ্ট হচ্ছে তোমার জানা আছে?? নেই।
দোয়া করি সুখে থাকো।
..... আপু আমার কিছু কথা ছিল।
...... গেট লস্ট!!
...... প্লিজ আপু!!
...... আমি কোন প্রেম কাহিনী শুনতে চাই না। নাউ গিভ মি সাম পিস এন্ড লিভ।
আমি হাত জোড় করে বললাম।
আমি চলে যাচ্ছিলাম কিন্তু সিয়া বলে উঠল।
...... আমার আব্বুর হাতে বেশি সময় নেই আপু!!
আমি এই কথায় থমকে দাড়ালাম। 
সিয়া বলতে লাগল
...... আমি মামুন কে পছন্দ করতাম মামুন ও আমাকে।। আমাদের ঘরের সবাই জানত এ কথা। কিন্তু হঠাৎ একটা দুর্ঘটনাই মামুন আপনাকে বিয়ে করে। আমি খুব ভেঙে পড়ি। ডিপ্রেশনে চলে যাই। কয়েকবার সুই সাইডের চেষ্টা ও করি। কিন্তু আব্বু আম্মুর জন্য পারি নি। খানিকটা সুস্থ হলে ওরা আমার বিয়ের জন্য উঠে পড়ে লাগে। কয়েকটা ভালো প্রস্তাব ও আসে। এরি মধ্যে আমার একটা ছেলেকে পছন্দ হয়। বাবা তার সাথে বিয়ে ঠিক করে। কিন্তু এই খুশি বেশি সময় থাকলো না। যে দিন আকদ হওয়ার কথা ছিল। সেই দিনই ও রোড এক্সিডেন্টে মারা যাই। এরপর এটাও ভুলতে লাগলাম। কিন্তু আরেকটা প্রস্তাব আসলেও ছেলেটা মারা যায়। এভাবে যে ছেলের সাথে বিয়ের কথা ফাইনাল হয় সেই ছেলেই কোন না কোন ভাবে মৃত্যুর হাত ধরেছে। কোন উপায় না দেখে আব্বু আমার হাজিরা দেখে। ওই খানে বিস্ময় কর ভাবে জানতে পারে যে খারাপ কোন কিছুর প্রভাবে আমার বিয়ে হচ্ছে না সাথে নিরপরাধ সব ছেলেরা মৃত্যু বরন করছে। হুজুর একটা ওঝার সন্ধান দেন। ওঝা বলে যে কেউ একজন ব্ল্যাক ম্যাজিক করে আমার বিয়েটা হতে দিচ্ছে না। আর এই জাদু কাটানো সম্ভব না। ওঝা বলেছিল বিয়ে করতে হবে। কিন্তু বিয়ে করলে তো ছেলেটা মারা যাবে। এটারও সমাধান দেন। বিয়ে করতে হবে একমাত্র তুলা রাশির কুমার একটা ছেলেকে। তবে বিবাহিত হতে হবে। উপায় ছিল এই একটা।
....... কি উপায়??
..... মামুন কে বিয়ে করা। 
...... মানে????
....... মানে আমি জানি না। মামুন তুলা রাশির কিন্তু বিবাহিত ছিল। এখানে এসে জানতে পারলাম তোমার সাথে মামুনের কোন শারিরীক সম্পর্ক নেই। তাই আমি ভেবেছিলাম আমার পিতার শেষ ইচ্ছা পূরনের একটা মাত্র উপায়। আর আমার কথা ভেবে বাবার অবস্থা। বাবার শেষ ইচ্ছা হচ্ছে আমাকে বিয়ে করতে দেখা। না হলে একটা সংসার কখনো ভাঙতাম না।
দরকার হলে সারাজীবন অবিবাহিত থাকতাম। কিন্তু আমার বাবার শেষ ইচ্ছা বলে কথা।
তিনি এখন আই সিউ তে ভর্তি। আমি বিয়ে করে উনার সামনে যেতে চায়। উনাকে দেখাতে চায় আমি সুখি, আমি বিবাহিত, আমার একটা গতি হয়ছে।। 
..... শুধু মাত্র বাবা শেষ ইচ্ছা পূরনের জন্য একটা সংসার নষ্ট করে দিলে!!!
...... আমি অনেক বড় স্বার্থপর!! আমাকে মাফ করে দিও।।
....... জীবনেও না!
আমি বাইরে চলে এলাম। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। ফাঁটা বাশের মধ্যে পড়েছিলাম। এদিক ও যেতে পারছিলাম না ওদিক ও না।
ফারান আমার জীবন টা তছনছ করে দিসে। ফারান? ব্ল্যাক ম্যাজিক তাহলে ফারান করছে?? কেন? ওর সাথে তো সিয়ার কোন সম্পর্ক নেই। তাহলে?? নাহ!! আমার মাথা ব্যাথা করছে। কিছু ভাবতে পারছিনা।। কিভাবে সে এত মানুষের জান নেয়। নিজের মাকে কিভাবে কোন মানুষ এমন নৃশংস ভাবে হত্যা করতে পারে?? সব কি আমার কারনে?? এসব মানুষের মৃত্যুর দায় কি আমার?? উত্তর জানা দরকার। আমি আর এসব বইতে পারছিনা। অনেক ওজন বেশি এসব সত্যর। তারপরও আর কোন মানুষের জীবন শুধু আমার কারনে না যায়। 
.
চোখ মুছলাম দু হাতে। তারপর ফারানের রুমের দিকে এগুলাম। ভয় ডর সব কোথায় উবে গেছে। দরজার সামনে দাড়িয়ে নক করব না কি করব না কিছুটা দ্বিধায় ভুগলাম। তারপর ভাবলাম যা হবে দেখা যাবে। এই ভেবে দরজায় নক করলাম। কোনো সাড়া শব্দ নেই। আবার নক করলাম। কোনো সাড়াশব্দ নেই এবারও। কি হল!! এবার নক করতে গিয়ে খেয়াল করলাম দরজা খোলা। আমি আস্তে আস্তে ভিতরে ঢুকলাম। রুমটা অন্ধকার। লাইট টা জ্বালালাম। ফারান কোথায়?? 
ফারান কে পেলাম। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় না। ফ্লোরে শোয়া অবস্থায়। নাক মুখ দিয়ে রক্ত বেরুচ্ছে। কি অবস্থা!! তাড়াতাড়ি ফারানের কাছে গেলাম। মাথা টা কোলে তুলে নিলাম। তারপর ফারান কে জিজ্ঞেস করলাম
..... কি হয়ছে তোমার??
ফারান জবাব দিল না। কিন্তু মনে হল ওর হুশ আছে। আমার কথা শুনছে।।
তার ঠোট টা একটু একটু নড়ছিল। আমি তাড়াতাড়ি কিছু টিস্যু পেপার আর পানি নিয়ে এলাম। নাক মুখ মুছে দিলাম আর একটু করে পানি খাইয়ে দিলাম। এবার ও আমার দিকে একটু একটু তাকাচ্ছে। তারপর ও আমার গালে হাত বুলাতে লাগল। আমি হাত সরিয়ে দিতেই ও আমার হাত ধরল শক্ত করে।
...... কি করছেন??
...... তোমারও কি তাই মনে হয়??
...... কি মনে হয়??
...... তুমি জান না।
..... না
এই কথায় ফারান একটু হাসল। তারপর হাতের দিকে তাকিয়ে বলল
...... মোহিনী ওরা সবাই বলছে আমি নাকি আমার মাকে মেরেছি।। বলো তাই কি হয়?? কোন ছেলে কি তার মাকে মারতে পারে??
আমি হতবম্ভ হয়ে গেলাম। কি বলবো বুঝলাম না। আমি বললাম
..... নিশ্চয় কোন না কোন কারন আছে বলার। এমনিই কেউ বলবেনা যে কোন ছেলে তার জন্মদাত্রী কে খুন করেছে। নিশ্চয় কারন আছে। বল সেই কারন টা কি।
এই কথায় ফারান আমার হাত তার দুহাতের মুটোয় পুরে নিল। তারপর বলল
...... এই দুনিয়ায় আমি সবচেয়ে বেশি তোমাকে ভালবাসি। তোমার কসম খেয়ে বলছি মোহিনী আমি আমার মা কে খুন করি নি। আমি জানি না কি হয়েছে। ওরা আমাকে ভুল বুঝছে মোহিনী। আমি আমার মাকে খুন করি নি। 
এই বলে ফারান আমার কোমড়ে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আমার পেটের মধ্যে নিজেকে চেপে ধরল। তারপর শুধু বলতে লাগল আমি খুন করিনি।। তুমি বিশ্বাস কর। আমি খুন করি নি।
আমি বিশ্বাস করতে বাধ্য। কেন জানি না। তবে মনে হল ভিতরে অনেক বড় কিছু রয়েছে। যেটা কেউ ধরতে পারছেনা। যেটাতে ফারান ফেসে চলেছে। বুঝতে হবে কি সেটা। না হলে যে অনেক দেরি হয়ে যাবে!!
.
(চলবে)

 মোহিনী_২ ♥প্রেমান্ধ♥Where stories live. Discover now