পর্ব ২

247 3 0
                                    


---
রাইসুল বলতে শুরু করে,
"গত দুই সপ্তাহ আগে অনলাইনে গুলিস্তানকে নিয়ে লেখা একটা আর্টিকেল পাই আমি। গুলিস্তান ইতিহাস, ঐতিহ্য ও নানান অজানা বিষয় নিয়ে সেটি লেখা ছিল। পড়তে বেশ দারুণ লাগছিল। হঠাৎ করেই আমার চোখ আঁটকে যায় এক কথায়। আর্টিকেলটাতে লেখা ছিল;
১৯৮৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে আমিনুল ইসলাম নামের একজন পুলিশ সদস্য কোনো একভাবে একটা গোপন কাল্ট বা সংঘের সন্ধান পান। সেটির নাম ছিল লিলিথিয়ান। সেই কাল্টের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৪০/৫০ জন নর-নারী। তিনি আরো তদন্ত করে জানতে পারেন যে এই লিলিথিয়ান কাল্টের সদস্যরা লিলিথ নামের এক অপদেবীর আরাধনা করে। পুলিশ আমিনুল ইসলাম ব্যাপারটি তার সিনিয়রকে জানান। একদিন তারা পুরো ফোর্স টিম নিয়ে সেই কাল্টের ঘাঁটিতে রেইড ফেলেন। কিন্তু অদ্ভুতভাবে যেন তাদের রেইড ফেলার সংবাদ আগেই পেয়ে গেছিল লিলিথিয়ান কাল্টের মেম্বাররা। তারা তল্পিতল্পা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। শোনা যায় যে তারা আজও বাংলাদেশে আছে। এখনও তারা সেই অপদেবীর আরাধনা চালিয়ে যাচ্ছে।" এতটুক বলে নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য থামে সে। "আমি আর্টিকেলটা এপর্যন্ত পড়েই বন্ধ করে দেই। তুই তো জানিসই যে এসব কাল্ট-গুপ্তসংঘ-অতিপ্রাকৃত ব্যাপার-স্যাপারে আমার আগ্রহ কতটা। আমি পড়া বন্ধ করেই বসে পড়ি লিলিথিয়ান নামক কাল্টটি নিয়ে গবেষণা করতে।"
আমি হাসি। আমি ঠোঁটে ফুটে ওঠা হাসির রেখা ফোনকলের ওপাশে থাকা রাইসুলের দৃষ্টিগোচর হবার কথা নয়। বললাম, "তা কিছু পেলি?"
"হ্যাঁ।" বলে একটু থেমে কোথায় যেন হারিয়ে যায় রাইসুল। ওপাশ থেকে মৃদু হুটোপুটির আওয়াজ ভেসে আসে। যেন কোনোকিছু খুঁজছে সে। একমিনিট পরই ফিরে আসে সে। বলে,
"আমি লিলিথকে নিয়ে লেখা একটা আর্টিকেল পেয়েছি। সেটা তোকে ফরোয়ার্ড করেছি। এখনই পড়ে জানা।" বলে কল কেটে দেয় সে।
আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে পড়লাম। খাদিজার মাংসল পাছা টেপার জন্য হাত বাড়াতেই লক্ষ্য করলাম যে সে বিছানায় নেই। হয়তো রান্নাঘরে চলে গেছে।
আমি শুয়ে শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। ঘুম এলো না। অগত্যা রাইসুলের পাঠানো লিঙ্কটায় ক্লিক করলাম। আর্টিকেলটা হুবহু তুলে দেয়া হলো।

লিলিথ
লিখেছেন তৌহিদ হালদার
দেবী না দানবী তিনি? নাকি তিনি রক্তমাংসেরই মানবী? উত্তর মেলে না। কাহিনি, কিংবদন্তি, লোকশ্রুতি ইত্যাদিতে আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছেন তিনি। আজও তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন বিতর্ক বিদ্যমান। কারও কাছে তিনি মূর্তিমতী অশুভ। আবার অনেকেই মনে করেন, তিনি নারী স্বাধীনতার প্রথম সৈনিক। তাঁর নাম লিলিথ। তার খোঁজ পেতে গেলে পাড়ি দিতে হবে সুদূর অতীতে। সেই মেসোপটেমীয় বা ইহুদি পুরাণসমূহ রচনার কালে।
ইহুদি কিংবদন্তি অনুসারে, লিলিথ প্রথম মানব আদমের প্রথমা পত্নী। হিব্রু ‘বাইবেল’-এর ‘বুক অব ইসাইয়া'-য় তার উল্লেখ রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ইভের আগে লিলিথই ছিলেন আদমের স্ত্রী। কিন্তু আদমের আনুগত্য স্বীকার না করায় ঈশ্বর তাঁকে স্বর্গোদ্যান থেকে বিতাড়িত করেন।
‘বাইবেল’-এর ‘জেনেসিস’ অধ্যায়ে লিখিত আছে যে, ঈশ্বর আদমের পাঁজর থেকে ইভকে তৈরি করেছিলেন। আর আদম নির্মিত হয়েছিলেন মাটির দ্বারা। ইহুদি কিংবদন্তি জানায়, লিলিথকেও ঈশ্বর সেই মাটি দিয়েই তৈরি করেন, যা থেকে আদম নির্মিত হয়েছিলেন। অনেক কিংবদন্তি আবার একথাও বলে যে, লিলিথকে নির্মাণের সময়ে ঈশ্বর মাটির সঙ্গে কিছু ময়লাও মিশিয়ে দিয়েছিলেন।
আদমের সঙ্গে মিলনে লিলিথ দানবের জন্ম দেন। সে হিসাবে দেখলে তিনিই দানবকন্যারা ‘সাকুবাস’ নবদের জননী। ইহুদি পুরাণ অনুযায়ী লিলিথের পুত্ররা ‘ইনকুবাস' নামে পরিচিত। ইনকুবাসরা ঘুমন্ত নারীদের সঙ্গে মিলিত হয় এবং সাকুবাসরা ঘুমন্ত পুরুষের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। এমন মিলনে জাদুকর, ডাইনি প্রমুখের জন্ম হয়।
ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে, লিলিথ শয়তানের দোসর। শয়তানের সঙ্গে তাঁর মিলনের ফলে জিনদের জন্ম হয়। সৃষ্টিকর্তা প্রতিদিনই বেশ কিছু অশুভ শক্তিসম্পন্ন জিনকে হত্যা করেন। এর প্রতিশোধ নিতে লিলিথও আদমের সন্তানদের, অর্থাৎ সদ্যোজাত মানবশিশুদের (বিশেষ করে পুত্রসন্তানদের) প্রতি রাতে হত্যা করেন।
লিলিথকে নিয়ে আজও রচিত হয় কবিতা। লিখিত হয় ডেথ মেটাল বা অ্যাসিড রক ঘরানার গান। লিলিথ অনেকটাই বৈগ্রহিক হয়ে বিরাজ করছেন পাশ্চাত্যের জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে। কিন্তু সাংস্কৃতিক নৃতত্ত্বের গবেষকরা লিলিথের মধ্যে খুঁজে পান এক সন্তানহারা মাকে, এক তীব্র স্বাধীনচেতা বিদ্রোহিনীকে বা মানবীচেতনার প্রথম উদ্গাতাকে।

লিলিথিয়ানWhere stories live. Discover now