পর্ব ৬

162 4 0
                                    


---
রাস্তা ফাঁকা থাকায় তিনঘণ্টার পথ আমরা দুই ঘণ্টার মধ্যেই পাড়ি দিলাম।
রাইসুলদের বাড়িটা বিশাল। বিশাল বলতে আক্ষরিক অর্থেই বাড়িটার পরিধি ব্যাপার।
তিনতলা ডুপ্লেক্স স্টাইলে বানানো একটা বাড়ি। তার পেছনে বাঁধানো পুকুর। পুকুরের গা ঘেঁষে বাঁশবন। বাড়ির সামনের উঠানটাপ রীতিমতো চোখে লাগার মতো। আশেপাশে ডেকচিতে আচার শুকাতে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই শীতের মধ্যে রোদও তো নেই।
মনোরম পরিবেশ। মাসখানেক আগে একদিন আড্ডায় রাইসুল বলেছিল যে পরিবার নাকি বেশ সম্ভ্রান্ত, ধার্মিক। কিন্তু তাদের বাড়িতে এসে সেরকম কিছু চোখে পড়লো না। মহিলারা শাড়ি পরে নানান কাজ-কর্ম করে বেড়াচ্ছে। কারো শাড়ির আচল যে বুক থেকে সরে পেটের কাছে চলে এসেছে সেটাও খেয়াল নেই। এতটাই কাজে মগ্ন তারা।
বাড়ির কাছাকাছি যেতেই রাইসুলের এক চাচা কোত্থেকে যেন উড়ে এলো। গদগদ হয়ে আমাদের নানান বিষয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করলেন।
আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো?
কিভাবে এলে? অটো পেয়েছিলে?
বেশি শীত করছে কিনা, ইত্যাদি।
আমি প্রশ্নগুলো এড়িয়ে গেলেও রাইসুল প্রতিটার উত্তর দিচ্ছিল। তাকে কিছু বলতে যেয়েও বললাম না। হয়তো বহুদিন পর গ্রামে এসে এসে আবেগাপ্লুত হয়ে গেছে। একজন ১৩/১৪ বছর বয়সী ছোকরা এসে আমাদের ব্যাগপ্যাকগুলো নিয়ে কোথায় যেন চলে যেতে লাগলো। আমি তার পিছু নিলাম।
বাড়ির ভেতরের প্যাচানো তিনতলা পর্যন্ত চলে গেছে। সেটা বেয়ে বেয়ে উপরে উঠে এলাম। ছেলেটার সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করলাম। ওর নাম সফা। ছোট থেকেই এই বাড়িতে কাজ করছে। তার কাছ থেকে জানলাম, এই বাড়ির একতলায় থাকে মুরুব্বিরা। মুরুব্বি বলতে রাইসুলের দুই চাচা, বুড়ো বাপ-মা ও দাদি। দ্বিতীয় তলায় থাকে বউঝিরা। অর্থাৎ রাইসুলের দুই চাচাতো ভাই ও তাদের বউ আর বাচ্চাকাচ্চা। বুঝলাম যে একান্নবর্তী পরিবারের কালচারটা বেশ যথাযথভাবেই বজায়ে রেখেছে রাইসুলরা। তিনতলায় তেমন কেউ থাকে না। এখানে পাঁচটা বেডরুম। বাড়ির কাজের ছেলে-মেয়েরা ভাগাভাগি করে থাকে।
রাইসুলদের পরিবার যে বেশ স্বচ্ছল সেটা সফার কথার টোনেই বুঝে গেলাম। কাজের ছেলে-মেয়েদের জন্য একটা ফ্লোর যারা বরাদ্দ করতে পারে তারা আর যাইহোক মধ্যবিত্ত নয়। এত বড় ফ্ল্যাটে আমরাও থাকতে পারি না।
রুমে ঢুকে জামাকাপড় বদলে ফেললাম। পরনের হুডিটা খুলে আগেরটার চাইতে মোটা ও আরামদায়ক একটা সোয়েটার চাপালাম। বারান্দায় গিয়ে সিগারেট ধরালাম। একফাঁকে ভদ্রতার খাতিরে সফা নামক ছেলেটার হাতে পঞ্চাশ টাকার নোট গুঁজে দিলাম। প্রথমে গাইগুই করলেও একপর্যায়ে টাকা নিয়ে সটকে পড়লো।
সিগারেটে লম্বা টান মেরে পেছনে ঘুরতেই দেখি রাইসুল এসে গেছে। মুখ বেজার করে সে বললো,
"কিরে দোস্ত! এটা কেমন অসভ্যতা? নিচে সবাই তোর সাথে পরিচিত হওয়ার অপেক্ষা করেতসিল, আর তুই এভাবে উপরে চলে এলি?"
"স্যরি দোস্ত।"
"আরে, সমস্যা নাই। একটা বিড়ি দে।"
মুখে 'স্যরি' বললেও কাজটার জন্য আমি বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত নই। কেননা এসব ফর্মালিটি আমার মোটেও পছন্দ না৷ ধোঁয়া ছেড়ে বললাম,
"তো বন্ধু! তুমি কাজ নামছো কবে?"
"কোন কাজে?"
"লিলিথিয়ান নামক কাল্টকে এক্সপোজ করার কাজে।"
"সেটা মাথায় আছে।" গম্ভীরমুখে ধোঁয়া ছাড়লো সে। "শালাদের ঠিকঠাক এক্সপোজ করতে পারলে এমন ফেম পামু যে আজীবন বইয়ে খাইতে পারুম।"
আমি হাসলাম। কিছু বললাম না। জুতা-মোজা খুলে বিছানায় গা এলিয়ে শুলাম। শীতটা মন্দ লাগছে না। কাঁপা কাঁপা হাতে মোবাইলে গান ছাড়লাম। আমার পাশে বসে বারান্দার গ্রিল ছাড়িয়ে যতদূর চোখ ততদূর তাকিয়ে রাইসুল। কি যেন ভাবছে সে। গান বাজছে;

যদি বারে বারে একই সুরে প্রেম তোমায় কাঁদায়,
তবে প্রেমিকা কোথায় আর প্রেম-ই বা কোথায়...

লিলিথিয়ানWhere stories live. Discover now