পর্ব ১৬

148 2 0
                                    

১৬
---
লম্বা কালো আলখাল্লা পরা একজন মধ্যবয়স্ক লোক এসে দাঁড়ালেন অডিটোরিয়ামের মাঝখানে।
অডিটোরিয়াম বলা হচ্ছে একারণে যে এই সুবিশাল বাড়িটির একতলায় মূলত থাকার কথা ছিল ড্রয়িংরুম, কিন্তু পুরো একতলাকে এতটাই ফাঁকা করে রাখা হয়েছে যে জায়গাটাকে এখন অডিটোরিয়াম বললেই সঠিক নির্ণয় করা হয়। পুরো রুমের মেঝে জুড়ে খয়েরি রঙের কার্পেটে মোড়ানো। কার্পেটটি এতটাই উন্নত ও নরম যে পা বারবার দেবে যায়। রুমের কোথাও উজ্জ্বল বাতি নেই। একটা মাঝারি সাইজের ঝাড়বাতি জ্বলছে। ঝাড়বাতির আলো এতটাই কম যা আধো-অন্ধকারকে করেছে দ্বিগুণ। বিছানো কার্পেটে প্রায় ৩০/৪০ জন মানুষ জড়ো হয়েছে। সবাই মেঝেতে বসে আছে। প্রত্যেকের দৃষ্টি মেঝেতে, ঘোলাটে। তাদেরকে সায়েন্স ফিকশন সিনেমার হিপনোটিজমে আক্রান্ত বলে মনে হচ্ছে। প্রত্যেকের পরনেই বেশ পাতলা ধবধবে সাদা আলখাল্লা। ভেতরে আর কিছু নেই।
এখানে যারা উপস্থিত তাদের কেউ ভারতীয়, কেউ রাশিয়ান, কেউ আমেরিকান, কেউ বাংলাদেশি। নানান ধর্মের, নানান বর্ণের মানুষ উপস্থিত আজ। কেননা আজ এক বিশেষ দিন।
এত সাদা কাপড়ধারীদের মাঝে আলাদা করে চোখে পরে কালো কাপড় পরিহিত সিলভা গোমেজকে। তার স্বাস্থ্যবান দেহ ঠিকরে অদ্ভুত এক দ্যুতি ছড়াচ্ছে পুরো রুম জুড়ে।
তিনি সবার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। হাতঘড়িতে সময় দেখলেন। রাত ১১ঃ৪০। সময় এগিয়ে আসছে। সিলভা মৃদু কেশে স্পষ্ট বাংলায় বলতে লাগলেন,
"প্রিয় লিলিথের পূজারীরা, আশা করি মহান দেবীর কৃপায় সকলেই ভালো আছেন। আপনারা সকলেই অবগত আছেন যে আমাদের এই কাল্টের উপাসকদের জন্য আজ একটি বিশেষ দিন। আজ আমাদের দলটির পাঁচশো বছর পূর্ণ হবে। তাই আমি আজ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চাই।
আমাদের এই দলটির পথচলা শুরু হয়েছিল কখন তা স্পষ্ট করে জানা যায়নি। আমাদের দেবী লিলিথ এক অনন্য মহা সত্ত্বা। লিলিথের কাহিনি থেকে পরবর্তী কালে এক অন্য সত্যকে তুলে এনেছেন মানবীচেতনাবাদী গবেষকরা। তাদের মতে লিলিথ পুরুষতান্ত্রিক ধর্মের একতরফা অনুশাসনের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ। তিনি একই সঙ্গে ঈশ্বর ও আদমের আনুগত্য অস্বীকার করে নারীর স্বাতন্ত্র্যকে ব্যক্ত করেছিলেন। হ্যা, তিনিই মহান দেবী লিলিথ। যাকে দমাতে পারেনি আদম, ফেরেশতা কিংবা ঈশ্বর। তিনি প্রতিবাদ করেছিলেন আদমের বিরুদ্ধে, স্রষ্টার বিরুদ্ধে। তাই স্বার্থপর স্রষ্টা তাকে অভিশাপ দিয়ে বানিয়ে দিয়েছিলেন অন্ধকারের দেবী, শয়তানের দেবী, কালোর দেবী ইত্যাদি। কিন্তু এতসব গুণাবলীর মাঝেও তার আরেকটা পরিচয় আমাদের আজকের মানবসভ্যতা প্রায় ভুলতে বসেছে। সেটা হলো; তিনি যৌনতারও দেবী।
মহান দেবী লিলিথ যেহেতু স্রষ্টাকে চ্যালেণ্জ ছুড়েছিলেন তাই তারও স্রষ্টার বান্দাদের মতো কিছু উপাসক বা অনুগত প্রয়োজন, তাই নয় কি?
আর মহান দেবীর বাছাইকৃত হাতেগোনা কিছু সংখ্যক সৌভাগ্যবানদের মধ্যে আছি আমরা, লিলিথিয়ান। কিন্তু লিলিথ কোনো ঠুনকো দেবী নন। তার রয়েছে নিজস্ব কিছু নিয়ম, নিজস্ব কিছু নীতি। তন্মধ্যে একটা হচ্ছে গুরু পরিবর্তন। প্রতি একশো বছর অন্তর অন্তর লিলিথিয়ানদের গুরুর পরিবর্তন হয়, যা অবশ্যম্ভাবী। এবারও হবে।
তাই প্রিয় লিলিথিয়ান! মনোযোগ দিয়ে শুনু। এতদিন আপনারা যতটা আনুগত্যের সাথে আমাকে গুরু হিসেবে মেনে আমার সব চাহিদা পূরণ করেছেন ঠিক সেভাবেই আপনাদের নবনির্বাচিত গুরুকেও বরণ করে নিতে হবে। পারবেন না?"
একনাগাড়ে কথাগুলো বলে থামলেন তিনি৷ মৃদু গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লো অডিটোরিয়ামজুড়ে। কিন্তু তখনও উপস্থিত প্রত্যেকের মাথা নোয়ানো।
সিলভা গোমেজ পুনরায় বলতে লাগলেন,
"আপনারা স্বরণ করুন সেই মহান দেবীকে, যিনি যৌনতাকে করেছেন এতটা আনন্দময়।" দুহাত শূন্যে তুললেন। "সাবখুত নাতাস লা না লিলিথ!"
সঙ্গে সঙ্গে পুরো অডিটোরিয়ামের উপস্থিত ৩০/৪০ জন বসা থেকে তড়িৎগতিতে দাঁড়িয়ে গেল। ধপধপ করে প্রত্যেকের গা খসে সাদা আলখাল্লা মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো। উপস্থিত প্রত্যেকে নগ্ন। নারী-পুরুষ কারো গায়ে কোনো জামা নেই।
প্রত্যেকে আকাশের দিকে হাত তুলে উচ্চস্বরে বলতে লাগলো,
"সাবখুত নাতাস লা না লিলিথ!"
"সাবখুত নাতাস লা না লিলিথ!"
"সাবখুত নাতাস লা না লিলিথ!"
"সাবখুত নাতাস লা না লিলিথ!"
"সাবখুত নাতাস লা না লিলিথ!"
সামনের সারিতে থাকা কয়েকজন এরাবিক ভারি স্তনের অধিকারী নারীদের দুধগুলো মন্ত্র পাঠের তালে তালে মৃদুমন্দ দুলতে লাগলো। পুরুষদের নড়ছে কিঞ্চিৎ নেতানো শিশ্ন।
আচমকা কোত্থেকে যেন একটা ছুরি এসে পড়লো সিলভা গোমেজের হাতে। মন্ত্র পাঠরত অবস্থাতেই ছুরিটা নিজের পেটে ঢুকিয়ে দিলেন। গলগল করে রক্ত পড়ে ভিজিয়ে দিতে লাগলো কার্পেট। সামনে উপস্থিত মানুষগুলোর মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখা গেল না। সবাই নির্বিকার।
হিস্ট্রিয়াগ্রস্থ রুগির মতো কাঁপতে কাঁপতে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লেন লিলিথিয়ানদের সাবেক গুরু।
***
পুরো দৃশ্যটা একতলার একদম কর্নারে থাকা ছোট্ট একটা খুপরি জানালা দিয়ে অবলোকন করছি আমি, রাইসুল ও ইমন।
আমার হাত-পা কাঁপছে। কি দেখছি আমি! এসব কি সত্যিই ঘটছে! তাও বাংলাদেশে! মনে হচ্ছে ড্যান ব্রাউন রচিত কোনো গল্পের প্লটে অজান্তেই ঢুকে পড়েছি। এই হাড়কাঁপানো শীতেও সারা গা ঘামছে আমার। কপাল বেয়ে ঘামের স্রোত ছুটেছে যেন। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম রাইসুলের দিকে। সে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে ওদিকে। ইমন পেটে হাত দিয়ে মুখ বিকৃত করে দূরে দাঁড়ানো। সম্ভবত বমি আসছে ওর।
আরো মিনিট পাঁচেক দাঁড়িয়ে রইলাম আমরা। দেখতে ৩০/৪০ জন নর-নারী সেই রক্তমাখা মেঝেতেই মেতে উঠেছে আদিম খেলায়। রীতিমতো অর্জি চলছে রুমে। এই এত নারীর নগ্ন স্তন-পাছা ও বিদেশি ভোদার মাঝে আলাদা করে নজর কাড়লো কয়েকজন। বিখ্যাত পর্নস্টার এঞ্জেলা ওয়াইটও আছে এখানে। নারীদের মৃদু গোঙানিতে সয়লাব পুরো জায়গা। পুরুষরা ঠাপিয়েই যাচ্ছে একের পর একজনকে। অবাক হলাম এটা দেখে যে রাশিয়ান মেয়েগুলো ঠাপ নেয়ার চাইতে ধন চোষাতেই বেশি মগ্ন। অবশ্য এখন এসব দেখার সময় নেই।
এরমধ্যে রাইসুল তার ফোনে সবকিছু ভিডিও করা শুরু করেছে। আমিও ভিডিও করে নিলাম। এত মানুষের অর্জি চোখের সামনে কয়বার দেখা যায়!
"কি করবি এখন?" ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলাম রাইসুলকে। সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে কি যেন ভাবলো। বললো, "থানায় যাওয়া উচিত। কি বলিস? সামনেই থানা। দশমিনিট লাগবে।"
"সেটাই ভালো হবে। চল।"
ঘুরতেই দেখতে পেলাম মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে ইমন। রক্তে ভিজে কালচে আছে সবুজ ঘাসগুলো। গলা শুঁকিয়ে কাঠ হয়ে এলো।
কাঁধের উপর বেশ শক্ত-সামর্থ্য একটা হাতের উপস্থিতি টের পেলাম। সাথে গমগমে কণ্ঠ,
"কোথায় যাচ্ছেন গুরু?"

লিলিথিয়ানWhere stories live. Discover now