পর্ব ৫

175 2 0
                                    


---
মঙ্গলবার। সকাল ৭টা।
রাইসুল উত্তরবঙ্গের ছেলে। তার বাড়ি রংপুর জেলার কাহালু নামক এক অঞ্চলে। গ্রামটা নাকি শহর থেকে প্রায় বিশ কিলোমিটার ভেতরে। যাকে বলে একদম অজপাড়াগাঁ।
ট্রেন থেকে নেমেই বুঝতে পারলাম যে কখনো কখনো লোকমুখে প্রচলিত কথাগুোলকেও গুরুত্ব দেয়া উচিত। শোনা যায়, উত্তরবঙ্গের শীতে নাকি বাঘও কাপে। হাড়েহাড়ে টের পেলাম উক্তির সত্যতা।
আমার পরনে তি টা কাপড়। ভেতরে সান্টু গেঞ্জি, তার উপর একটা টি-শার্ট, সেটার উপরে হুডি। এতসব সুরক্ষা কবচ নেয়ার পরও শীতের চোদানে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছি না। দাঁতের পাটি বারি খাচ্ছে অনবরত। এই শীতের সামনে ঢাকার শীত নস্যি, দুধের শিশু।
হুডির আস্তিনে দু'হাত ঢুকিয়ে রেখেছি। গুঁজো হয়ে হেঁটে হেঁটে রেলস্টেশনের পাশেই একটা চায়ের দোকানে আশ্রয় নিলাম দুজন। একহাত দূরের জিনিসও স্পষ্ট দেখ যাচ্ছে না।
দোকানে বেঞ্চিগুলো প্রায় ফাঁকাই বলা চলে। ট্রেন থেকেও বেশি মানুষ নামেনি এই স্টেশনে।
দুটো চায়ের অর্ডার দিয়ে বেঞ্চিতে বসে পড়লো রাইসুল। পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করতে করতে বললো, "দাঁড়িয়ে আছিস ক্যান? বয়।"
বেঞ্চিতে পাছা রাখামাত্রই বুঝলাম যে কতবড় ভুল করে ফেলেছি। এ তো কাঠের বেঞ্চ নয়, আস্ত বরফখণ্ড। কেঁপে উঠলাম বারবার।
চা দোকানি কনডেন্সড মিল্কে চামচ চালাতে চালাতে দাঁত বের করে হাসলো। বললো,
"বায়ে হতুন নি এরিয়ায়?"
আমার কিছু বলতে হলো না। রাইসুলই জবাব দিয়ে দিলো।
"আমি এই এলাকারই। তয় আমার বন্ধু আইজ পরথম আইসেন উত্তরবঙ্গে। হের নাম সাবের।"
"আইচ্ছা, আইচ্ছা।"
চায়ের কাপ হাতে পাওয়ার পর কিছুক্ষণ সেটাকে গালে চেপে ধরলাম। স্থানটা উত্তরবঙ্গ না হয়ে যদি ঢাকাশহর হতো, তাহলে আমার গাল পুড়ে যেত।
সিগারটের একটা শলা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে রাইসুল গা-জ্বালানো হাসি দিলো। বললো,
"কেমন লাগতেসে রে উত্তরবঙ্গ?"
"মন চাইতেসে রেলস্টেশনে তোরে ফেলি চুদি।" বহু কষ্টে জবাব দিলাম।
প্রতিত্তোরে সে আরো কিছুক্ষণ খ্যাখ্যাক করে হেসে জানালো, "আমি গে না৷ একদম বছিলা হাইওয়ের মতো স্ট্রেট।"
খামোখা তর্কে গেলাম না। চুপ থাকলাম। কিছুক্ষণ পর সে আবার জানালো,
"দশ মিনিট পর মেইন রোডের দিকে যাইতে হবে। ওদিকটায় অনেক অটো থাকে। একটা রিজার্ভ নিয়া দুইজনে ডাইরেক্ট বাড়িতে যামু।"
"এখান থেকে তোদের বাড়িতে যেতে কতক্ষণ লাগবে?"
"বেশিক্ষণ না। এই ধর, আড়াইঘন্টা।"
"মাদারচোদ!" বিড়বিড় করে বলে সিগারেটে লম্বা লম্বা টান দিতে লাগলাম।
রেলস্টেশনে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা চিকন চিকন পিলারগুলোর উপরে চোখ আঁটকে গেল। চার-পাঁচটা অতিথি পাখি দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার ক্লান্তি ঘোচাতে আশ্রয় নিয়েছে। অপূর্ব দৃশ্য।
আমার দৃষ্টি অনুসরণ করে রাইসুলও দেখলো পাখিগুলো। এরপর তার দ্রুত পকেট মোবাইল ফোন বের করে ছবি তুলতে সামনে এগিয়ে গেল।
হঠাৎ করেই আমার চোখের সামনে খাদিজার মুখটা ভেসে উঠলো। সত্যি বলতে, খুব মিস করছি তাকে। ইচ্ছা ছিল তাকেও সঙ্গে নিয়ে আসার। কিন্তু সেটা করলে ঝামেলাতেই পড়তাম।
প্রথম ঝামেলা হচ্ছে, রাইসুলের পরিবারবর্গ। মেয়ে নিয়ে এসেছি দেখলে বাড়ির চৌকাঠেই উঠতে দিতো কিনা সন্দেহ।
দ্বিতীয় সমস্যাটা হচ্ছে, মেসের ঝামেলা। আমার পাগলাচোদা রুমমেটদের কেউই মেনে নিবে না যে ওদের ভাগের খাবার আমি একা দূরে নিয়ে খাবো। ঝগড়াঝাটি, এমনকি হাতাহাতিও লেগে যেত পারতো। আমি আনমনেই মেয়েটার কথা ভাবতে লাগলাম। এই সাতসকালে কি করছে ও? নিশ্চয়ই ঘুমাচ্ছে, তাই না? নাকি ওকে বিছানায় ফেলে আচ্ছামতো চুদতেছে কেউ? রবিন? শফিক? নাকি আনিস?
মাথা নেড়ে খাদিজার কথা দূরে সরানোর চেষ্টা করলাম। আমি কি ওর প্রেমে পড়ে যাচ্ছি? একদমই নয়! প্রশ্নই আসে না। কারণ আমি বহুগামী। একজনের প্রতি আসক্ত হওয়ার আমার ধাতু না। আর প্রেম-পিরিতি আমার কম্ম নয়। আমার শরীরিপ্রেমে বিশ্বাসী।
আমাকে চিন্তার সাগরে হাবুডুবু খেতে দেখে রাইসুল বললো, "আরেহ, বিদ্যসাগরের নাতি চিন্তাসাগর! কি ভাবছিস এত?"
"কিছু না।"
"খাদিজার কথা?"
বন্ধুর অনুমানের তারিফ না করে পারলাম না। বললাম,
"জলদি চল, দোস্ত। ঠান্ডায় বিচি জমে যাইতেসে।"
হাসতে হাসতে ব্যাগপ্যাক কাঁধে নিয়ে সে হাঁটা ধরলো। তার পাশাপাশি আমিও হাঁটতে লাগলাম।
পেছনে তাকিয়ে দেখি অতিথি পাখিরা একে অন্যকে লাগাচ্ছে। এই কুয়াশারচ্ছন্ন আবহাওয়ায় রীতিমতো অর্জি করছে ওরা।

লিলিথিয়ানWhere stories live. Discover now