পার্ট - ১

1K 23 4
                                    


চোখটা এদিক ওদিক ঘুরাচ্ছি। মানে রাস্তা টা দিয়ে হেটে যাচ্ছি। রাস্তা টা ভীষন খারাপ। পারত পক্ষে আমি এই রাস্তা কখনো মাড়ায় না। কিন্তু আজকে মাড়াতে হবে। হতে পারে এখন থেকে প্রতিদিন মাড়াতে হবে। কারন একটা বাড়িতে আমাকে ডাকা হয়েছে।। যে বাড়িতে ডাকা হয়েছে তাদের আমি চিনি।। ওরা এখান কার ধনী ও জমিদার পরিবার। আমার মত একটা নিম্ন মধ্য বিত্ত পরিবারেরর মেয়েকে কেন দেখা করতে ডাকবে? 
হাটতে হাটতে নিজের মাথায় নিজেই একটা থাপ্পর মারলাম। আরে গাধী তোকে তো সবাই ডাকবে। তুই একটা টিচার.... না গাধী টিচার। মনে মনে স্বগতোক্তি করলাম।
এই বলে সামনে পা ফেললাম মনে হল কিছু একটা হয়ছে। আমি বুঝতে পারলাম না। চোখ বন্ধ করে ফেললাম যাতে কি হয়েছে তা যেন দেখতে না হয়। কিন্তু চোখ আমার টা বন্ধ হলেও পাবলিকের চোখ বন্ধ ছিল না। কারো খিক খিক, খ্যাক খ্যাক, কারো অট্টহাসি, কারো বাইজ্জা বাশের মত হাসি শুনতে পেলাম। কি হলো?? সবাই হাসছে কেন?? মাথা আর হাতে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করলাম। আহ.... কি ব্যথা!! চোখ খুললাম। কিন্তু বিশাল আকাশ ছাড়া কিছু চোখে পড়ল না। খটকা লাগল। আমি কি মরে গেছি?? হতে পারে। যাক ভালোই হলো। এখন একটু শান্তি তে ঘুমাই তে পারব। এই বলে যখন পাশ ফিরলাম তখনই ভেজা ভেজা লাগল। তড়াক করে লাফিয়ে উঠলাম। ভেজা জিনিস আমার একদম পছন্দ না। এবার আমি দুনিয়া তে ফিরলাম। চার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম কি হলো। আমি মারাত্মক খারাপ ভাবে একটা আছাড় খেয়েছি। শুধু তাই না। এমন ভাবে খেয়েছি যাতে আমি চিৎপটাং হয়ে রাস্তায় শুয়ে আছি। আর তা দেখে আবাল বৃদ্ধ বণিতা সবাই হাসছে। হাসুক.... হাসির তো ব্যাপার। অমন একটা গাধী মেয়ে রাস্তায় পড়ে গেল তাতো হাসির ব্যাপার। আমি ওদের পরোয়া না করে উঠতে চেষ্টা করলাম, পার লাম না। হাত ছিলে গেছে, পাও ছিলে গেছে নিশ্চই। ভাগ্যিস এটা মেইন রোড ছিল না। না হলে দ্বিগুন লজ্জার মুখে পড়তে হত। এটা সাধারন যাতায়াত এর রাস্তা। অনেক কষ্ট করে উঠে দাড়ালাম। তারপর ময়লা ঝেড়ে হাটা শুরু করলাম। আশে পাশের মানুষের হাসিকে তোয়াক্কা না করেই। আসলেই যখন আপনাকে কেউ লজ্জা দিবে তখন এমন ভাব দেখাবেন যেন আপনি একদমই লজ্জা পাচ্ছেন না। 
ওইতো বাসা দেখা যাচ্ছে। মানে গেট। গেট টা এত বড় না। মিডিয়াম সাইজ। গেইটের ওপরে লতা পাতা জড়ানো। তাতে ছোট ছোট ফুল ফুটে রয়েছে। গেট টাকে একদম জীবন্ত বানিয়ে দিছে। খানিক টা তাকাই থাকলাম গেইটের সৌন্দর্যের দিকে। যখন আমি আমার বাড়ি বানাব তখন এইরকম ফুলের গাছ গুলো লাগাব যাতে গেট জীবন্ত হয়ে উঠে। নিজে নিজে স্বগতোক্তি করলাম।
এই পরিকল্পনা করে যখনই গেইটের ভিতর ঢুকলাম অমনি একটা ধমকা বাতাস গায়ে লাগল। বাতাস আমার ভালো লাগে কিন্তু এই বাতাস কেন জানি আমার ভালো লাগল না। বাতাসে আমার গায়ের ওড়না একদিকে পড়ে গেল। ভাগ্যিস কোন মানুষ জন নাই। না কিযে লজ্জার মুখে পড়তে হতো। ওড়না ঠিক করতে করতে মনে হল যেন কোন অশুভ সংকেত। এই ভেবেই ঘরের মধ্যে পা রাখতেই পিলারের সাথে বাড়ি খেলাম। আউচ..... আমি গাধী মেয়েটা যেখানেই যাই সেখানেই কিছু একটা হয়ে থাকে। কিন্তু এখানে ব্যপারটা তেমন মনে হচ্ছে না। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে মনে হল যেন কেউ আমাকে ঢুকতে মানা করছে। কলিংবেলে হাত দিলাম। বাজল না। বুঝতে পারলাম এটা নষ্ট। দরজায় হাত দিয়ে টোকা দিতে লাগলাম। এই ফাকে চারদিকে তাকালাম। সুন্দর গোছানো ছোট্ট উঠান। একপাশে বাহারি ফুলের বাগান। পাশ দিয়ে প্রশস্ত জায়গা।। এমন সময় দরজায় খুট করে শব্দ হল।

(চলবে)

মোহিনীWhere stories live. Discover now