পার্ট - ১০

330 13 0
                                    


ফারানের কথা মনে পড়তেই শরীরে লোম খাড়া হয়ে গেল ভয়ে। বড় বড় নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করতে চাইলাম। আর একদিন, শুধু আর একদিন, এরপর এখান থেকে চলে যাব। তারপর এই ঝামেলা মিঠে যাবে। মারোয়ার হাসি মুখের দিকে তাকালাম। নিজের জন্য এদের খুশি নষ্ট করতে পারি না। 
এরপর মারোয়ার সাথে আমি খুনসুটি তে যোগ দিলাম। মারোয়া আমার একজন ভালো বন্ধুর মত হয়ে গেছে। অসম বয়সিদের মধ্যে যে ভালো বন্ধুত্ব্ব হতে পারে তা আমাকে আর মারোয়া কে না দেখলে কেও বুঝবে না। সবাই নাচছিল। মারোয়াও নাচল খুব। আমি নাচলাম না। নাচ করা না নাচ দেখা পছন্দ ছিল। মারোয়া কে সাফোর্ট করছিলাম। নাচা শেষ হলে আমরা দুজনে ক্ষুদার্থ হয়ে পড়লাম। কাউন্টারে খাবার রাখা ছিল। আমি আর মারোয়া বেচে বেচে প্রতিযোগিতা করে খেতে লাগলাম। কাউন্টারে পিট রেখে দাড়িয়ে মারোয়া আর আমি তার মুখোমুখি দাড়িয়ে। তাই আমার পিছনে যে কেউ আসলে মারোয়া আগে দেখতে পাবে। আমাদের খানা শেষ হয়ে গিয়েছিল। তবুও ওইখানে দাড়িয়ে সালাদের জন্য কাটা ফল, গাজর চিবুচ্ছিলাম। খেতে খেতে মনে হল মারোয়ার কথা থেমে গেছে। কারন জানার জন্য ওর দিকে তাকালাম। কিন্তু ও বড় বড় চোখ করে আমার পিছনে তাকায় আছে। আমার পিছনে কি আছে যে ও এইভাবে আমার পিছনে তাকায় অাছে। আমি পিছন ফিরে তাকাতে যাব তখন কেউ একজন আমার কানের কাছে এসে বলল
..... তোমাকে খুব খুব সুন্দর লাগছে। একেবারে পরীর মত।
এই কথা শুনে আমি চমকে গেলাম। ধীরে ধীরে পিছন ফিরে দেখলাম ফারান দাড়িয়ে। আর তাতে আমার বেহুঁশ হওয়ার মত অবস্থা।
.....আপনি এখানে??
আমি ঢোক গিলে মারোয়ার দিকে তাকালাম। সেও কিছু বুঝতে পারছে না। এরপর চারদিকে তাকালাম। চারপাশে সব মেহমান। আজ আমার মান সম্মান সব যাবে। ইয়া আল্লাহ তুমি রক্ষা কর।
..... কেন আসছেন এখানে?? কি চাই??
...... তুমি জান না কি চাই!!
এই বলে ফারান আমার হাতে থাকা আধ খাওয়া ফলের ঠুকরাটা নিল। নিয়ে ওইটা খেয়ে ফেলল। আমি হা করে তাকায় থাকলাম। কি করে লোকটা কারো এটো খেতে পারে!!! ইয়াক!
আমি পিছু হটতে শুরু করলাম। কিন্তু ও আরো কাছে আসছিল। এবার ওইখান থেকে দৌড়ে পালাতে চাইলাম। কিন্তু ফারান তার আগে হাত দিয়ে ফেলল। ওই পাশ দিয়ে যেতে চাইলাম ওইখানেও ফারান ঝট করে হাত রেখে দিল। আমি বন্ধি হয়ে গেলাম। পিছনে কাউন্টার সামনে ফারান। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। সাহায্যর জন্য এবার মারোয়ার দিকে তাকালাম। ও এতক্ষন হা করে তাকিয়ে দেখছিল কি হচ্ছে। আমি যখন করুন চোখে তাকালাম তখন মারোয়া বুঝতে পারল আমার সাহায্যের দরকার। তখন সে বলে উঠল
..... ফারান ভাইয়া আমার ম্যাম কে ছেড়ে দাও।
ফারান এতক্ষন এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকায় ছিল। এবার মারোয়ার এই কথাতে ফোস ফোস করতে করতে মারোয়ার দিকে তাকাল চোখ লাল করে। আর তক্ষনি মারোয়া ভয়ে এক দৌড়ে ওখান থেকে পালাল। এবার ফারান আমার দিকে তাকাল। আমি ভয়ে কুল কুল ঘামছিলাম। আমার চোখে চোখ রেখে বলল
...... আমার মোহিনী!!!
...... আ আ আমা মা মাকে যেতে দেন। 
...... কোথায় যাবা তুমি?? তোমার জায়গা এখানে আমার বুকে। (ও হাত দিয়ে তার বুক দেখিয়ে বলল)
একবার শুধু ছুয়ে দেখো এখানে।। আমার হৃদপিন্ড টা শুধু তোমার জন্য বাজছে।
এই বলে আমার ডান হাত জোড় করে টেনে নিয়ে ওর বুকের সাথে চেপে ধরল। আমি ভয়ে ফুপিয়ে কান্না শুরু করে দিলাম। ও সাথে সাথে আমার চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বলল
...... তুমি ভয় পেয়োনা। আমি তোমার কোন ক্ষতি করবোনা।
এই বলে সে আমার হাত দুটো নিয়ে দেখতে লাগল। আর বলতে লাগল
..... খুব সুন্দর লাগছে তোমার হাত দুটো। এই হাত দুটো আমার। কেউ কোনো দিন আমাদের আলাদা করতে পারবেনা। 
এই কথা বলে আমার হাত দুটো মুখের মধ্যে চেপে ধরে গন্ধ শুকতে লাগল। আমি ছাড়াতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু কান্না ছাড়া কিছুই করতে পারলাম না। ইতিমধ্যে আশে পাশের মানুষরা খেয়াল করতে শুরু করল। কেউ কেউ ডাকও দিল। কিন্তু ফারানের ওদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সে আমার হাতেন মেহেদীর গন্ধ নিতে ব্যস্ত। এক সময় সে এলোপাতারি আমার হাতে চুমু খেতে লাগল। আমি হাত নিতে চেষ্টা করায় সে আরো জোড়ে চেপে ধরল। আমি চিৎকার দেওয়ার সাথে আশে পাশের মানুষ ওকে চেপে ধরল। এরি মধ্যে মারোয়া তার আম্মুকে ডেকে নিয়ে আসল। মারোয়ার আম্মু প্রথমে কিছু বুঝতে পারলেন না। কিন্তু অনেক কষ্টে আমার হাত ছাড়া পেয়ে আমি এক দৌড়ে গিয়ে মারোয়ার আম্মুকে জড়িয়ে ধরলাম। আর ওদিকে ফারান কে সবাই চেপে ধরে ছিল। সে তাদের সাথে ধস্তাধস্তি করছিল ছাড়া পাওয়ার জন্য। মারোয়ার আম্মু আমাকে ধরে আমার চেহেরা দেখে বুঝতে পারলেন কি হল। তিনি সরাসরি গিয়ে ফারান কে গিয়ে কষে এক থাপ্পড় লাগাল আর বলল
..... কি করলি তুই এটা?? এই মেয়ে আমার কাছে আরেকজনের আমানাত। এখন ওর মা বাবার কাছে আমি মুখ দেখাব কি করে??
..... ফুপি তোমার যতক্ষন খুশি আমাকে মার। কিন্তু প্লিজ আমার মোহিনী কে আমাকে দিয়ে দাও। তোমার কাছে আর কিচ্ছু চাইবো না। প্লীজ ফুপি। 
মামুন, ফারানের বাবা মা মারোয়ার মামা, সাগর ভাই সবাই চলে আসল। মামুন ফারান কে মারতে ধরল কিন্তু সাগর ভাইয়ের জন্য পারল না। এদিকে মারোয়ার আম্মু আমাকে উনার রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে চলে গেলেন। আমি একা হয়ে গেলাম। বাইরে এখনো শোরগোলের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। আমি কাদতে লাগলাম। কতক্ষণ ধরে কাদতেছি তা আমার জানা নেই। এক সময় ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভাঙল মারোয়ার আম্মুর আওয়াজে। আমি ঘুম থেকে উঠে বসলাম। বাইরে শোরগোলের আওয়াজ আর আসছেনা। কেমন নিরব হয়ে আছে সবকিছু। মারোয়ার আম্মু ব্যাগ গোছাচ্ছেন আর আমাকে বলছেন হাত মুখ ধুয়ে নিতে। আর সামনে মামুন দাড়িয়ে আছে। কি হচ্ছে বুঝলাম না। আন্টি আরেকবার তাড়া দিলেন। আমি প্রশ্ন না করে হাত মুখ ধুয়ে নিলাম। হাত মুখ ধুয়ে বেড়ুলে আন্টি আমার সামনে দাড়াল।
...... তোমাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছি। মামুন তোমাকে দিয়ে আসবে। আর আমরা কালকে বিয়ে শেষ হলেই আমরা চলে আসব। তোমাকে এখানে রাখার ভরসা পাচ্ছি না। ভালো থেকো। আল্লাহ হাফেজ। 
আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝড়তে লাগল। আমি আন্টি কে জড়িয়ে ধরে থাকলাম কিছুক্ষন। এরপর মামুন গলা খাকরি দিয়ে বলল
..... দেরি হয়ে যাচ্ছে। জলদি আস তুমি।
এই বলে মামুন ব্যাগ নিয়ে নিচে নেমে গেলো। আমি আর আন্টি বের হলাম। নিচে নেমে দেখলাম পুরো বাড়িতে কারো সাড়া শব্দ নাই। সবাই মনে হয় ঘুম। শুধু মাত্র জেগে আছে মারোয়ার আম্মু আর মারোয়ার বড় মামা মহিবুল সাহেব। তিনি এ অবস্থার জন্য আমার কাছে মাফ চাইলেন। আমি সায় দিলাম। এখানে কারো হাত নেই। বাইরে বেড়িয়ে কারে উঠে বসলাম। তারপর কার চলতে শুরু করল। আমার চোখের পানি বাধ মানছিল না। যতক্ষণ ওদের দেখা যাচ্ছিল ততক্ষণ তাকায় ছিলাম। এরপরে জানালার কাচ তুলে দিলাম। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস বেরিয়ে এল বুক চিড়ে। এভাবে মারোয়ার আম্মু ফারানের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করতে মাঝ রাতে নিঃশব্দে কেউ না জানে মত গাড়িতে তুলে বাড়ির জন্য পাঠিয়ে দিলেন। 
মামুনের দিকে না তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম
.... কয়টা বাজে??
..... তিনটা!!
..... বাড়ি পৌছতে পৌছতে তো তাহলে একদম সকাল হয়ে যাবে।
..... হু।
আমি আর এক দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো ভাবতে লাগলাম।
.
(চলবে)

মোহিনীWhere stories live. Discover now