পার্ট - ৮

372 14 0
                                    


বলতে গেলে ফারানের অসুস্থতার জন্য আফসোস হচ্ছিল। মনে মনে দোয়া করছিলাম আল্লাহ যেন তারে ভালো করে দেয়।
সকালে ঘুম থেকে উঠে বাড়ি টাকে নতুন রুপে দেখতে পেলাম। আজ মেহেদি অনুষ্ঠান। তাই বাড়ি টাকে ফুল দিয়ে সাজানো হচ্ছে। আমি, মারোয়া, আর মুক্তা মিলে নাস্তা খেয়ে বাড়ি টাকে দেখতে লাগলাম। বাড়ির ছাদ আরও সুন্দর করে সাজানো হয়ছে। মারোয়া হঠাৎ সাগর ভাইয়া বলে ডাক দিল। আমরা ডাক শুনে সামনে তাকালাম। মারোয়া ততক্ষণ এ তার মামাতো ভাই কে জড়িয়ে ধরছে। দুই তিন দিন হল আসছি। অথচ জামাই রাজাকে এখন দেখলাম। সাগর ভাই আসলে খুব চমৎকার ছেলে। হাসি খুশি আর বন্ধু বৎসল। এই কয়দিন অফিসের কাজে বাইরে থাকায় আমাদের সাথে দেখা হয় নি। 
ইতিমধ্যে মেহমান দের আনাগোনায় ঘর ভরে যেতে লাগল। এত মানুষ দেখে আমার মাথা ঘুরে যাবার মত অবস্থা। অবশ্য ঘর বড় ছিল তাই সামাল দেয়া যাচ্ছিল। না হলে দম বন্ধ হয়ে মারা যেত সবাই। মারোয়ার আম্মু পাখির বাচ্চার মত আমাদের সামলিয়ে রাখছিল। অবশ্য উনিও খুব ব্যস্ত ছিলেন। এত ঘোরা ফেরার মধ্যে আমার ফারানের কথা একদম মনে ছিল না। ফারানের কথা মনে পড়তেই চারদিকে ভাল করে তাকালাম। না নাই। আসলে কালকের ঘটনার পর থেকে আমি তাকে আর দেখি নাই। যাক শান্তি তে বিয়ে টা খেতে পারব। 
দুপুরের খাবারের পর সবাই পার্লারে চলে গেল বর কে নিয়ে। মুক্তা ও গিয়েছিল। কারন এখানে তার সমবয়সী কাজিনরা রয়েছে। আমি যায় নি বলে মারোয়া ও যায় নি। অবশ্য আন্টি বলেছিল যেতে। আমি ইচ্ছা করে যায় নি। বাড়িটা একদম ফাকা হয়ে গেছে। মারোয়ার আম্মু আর কিছু মহিলারা আছেন। আমি আর মারোয়া ছাদে ঘুরে বেরাচ্ছিলাম। তখন নিচে একটা কার এসে থামল। ওই খান থেকে ব্যাগ নিয়ে একটা লোক নামল। সাথে সাথে নামল ফারানের আব্বুও। কি হচ্ছে এখানে?? মারোয়া কে বলতেই মারোয়া লাফিয়ে উঠল।
..... চলেন ম্যাম নিচে গিয়ে দেখে আসি কি হচ্ছে!!
..... না মারু। তোমার আম্মু মানা করছে না ওদের আশে পাশে না থাকতে??
..... একটু করে ম্যাম। চলেন না। গিয়েই দেখে আসব।
..... নো
..... প্লীজ ম্যাম
এটা বলে মারোয়া আমার দিকে তাকাল বড় বড় চোখে। দুইটা মুক্তোর মত চোখে পানি টলমল করছে। আসলে আমিও ওকে কোন কিছুর জন্য মানা করি নাই। তো এখন কি করে করি??
....ওকে কিন্তু শুধু মাত্র পাঁচ মিনিটের জন্য আর তোমার আম্মু যেন জানতে না পারে। ঠিক আছে??
.... ডান ম্যাম!!!
আমরা নিচে নেমে একপাশে দাড়িয়ে রইলাম। এমন ভাবে দাড়িয়ে রইলাম যেন কোন কাজ করছি আর কে আসছে যাচ্ছে তাতে আমরা নট ইন্টারেস্টেড।
লোকটা আর ফারানের আব্বু নিজেদের মধ্যে কথা নিচু স্বরে কথা বলছে। কিছু শুনতে পারছিনা। ওরা আমাদের পাশ কাটিয়ে গেল। তারপর ওদের পিছু পিছু হাটতে লাগলাম। তবে এমন ভাবে যাতে কেউ সন্দেহ করতে না পারে। কিন্তু সিড়ি দিয়ে উঠতে গিয়েই বিপত্তি বাধল। বিপত্তি টির নাম হল মামুন। আমাকে তো কোন দিন মামুন কিছু বলবেনা। তবে মারোয়া কে জিজ্ঞেস করল
...... কোথায় যাচ্ছো?
..... এইতো ভাইয়া ছাদে।
মারোয়ার কথার সমর্থনে আমি জোর করে হাসি দিয়ে মাথা নাড়লাম। কারন আমি মামুন নামক বস্তুটার রাগের সাথে কিছুটা হইলেও পরিচিত। একগুয়ে স্বভাবের এক কথার মানুষ। তাই উল্টা পাল্টা কিছু করলে মারোয়ার আম্মুর চাইতে মারাত্মক হবে মামুন।
..... ছাদে কি কাজ আছে?? 
.....না ভাইয়া এমনি যাচ্ছি
...... ছাদে যাওয়া লাগবেনা। আমার সাথে চল কাজ আছে।
..... না ভাইয়া পরে যায়। এখনি চলে আসব।
...... মনে হচ্ছে চুরি করতে যাচ্ছিস। এখন গেলে কি হবে??
মারোয়া এবার করুন চোখে আমার দিকে তাকাল। আমার দিকে তাকায়লে কোন লাভ হবে নাকি। তোমার ভাই আমার কথা শুনবে নাকি। আমাদের এত সাধের গোয়েন্দাগিরি তে পানি ঢেলে দিল। মনে মনে বললাম।
কিন্তু মুখে বললাম ( কি বলব খুজেই পাচ্ছিনা ভাষা)
..... মারোয়া কে আমি নিয়ে যাই। পাঁচ মিনিটে আপনার রুমে এনে দিব প্লীজ। একটু কাজ আছে তাই।
.
মামুন ভ্রু কুচকে বলল
..... কাজটা আমাকে বলা যায় না??
মারোয়া আর আমি একসাথে নাড়লাম। বলা যায় না।
......ঠিক আছে। বাট অনলি ফর ফাইব মিনিটস। ওকে??
৫...... ডান ভাইয়া।
মামুন চলে যেতেই আমরা হাফ ছেড়ে বাচলাম। মারোয়া বলে উঠল
..... চলেন না ম্যাম!!
..... যাচ্ছি যাচ্ছি
আমরা দুজন চলে গেলাম একদম ফারানের রুমের সামনে। কিন্তু ওইখানে দরজা বন্ধ। কি করি। এসময় মারোয়া বলল
..... ম্যাম জানালা!!
বাহ!! আইডিয়া মন্দ না। গেলাম জানালার পাশে। জানালা বন্ধ তবে ভেতরে পর্দা একটু সরে যাওয়ায় কিছুটা দেখা যাচ্ছে। ওইখানে দেখলাম মারোয়ার মেজ মামা চিন্তিত মুখে একপাশে দাড়িয়ে আছে। আর যে লোকটা ব্যাগ হাতে এসেছিল সে স্টেথোস্কোপ দিয়ে পরীক্ষা করছে। তার মানে লোকটা ডাক্তার। তার মানে এও দাড়ায় যে ফারান অসুস্থ। অবশ্য ফারান অসুস্থ তা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। কারন সে শুয়ে আছে। কোনো নড়চড় নেই। মনে হল জ্ঞান নেই। এবার ডাক্তার তার চেক আপ শেষ করে ফারানের আব্বুর মুখোমুখি দাড়িয়ে কথা বলতে লাগল। কি বলছিল বোঝা যাচ্ছিল না। তবে মুখের অভিব্যক্তি বলে দিচ্ছিল যে সিরিয়াস কোনো কিছু। 
তখন কার যেন পায়ের আওয়াজ পেলাম। এখানে দাড়িয়ে থাকা আর মোটেও ঠিক হবে না। আমি মারোয়া কে নিয়ে সাবধানে চলে আসলাম যাতে কারো চোখে না পরি। 
মারোয়া কে নিয়ে আসছিলাম তখন দেখি মামুন ছাদ থেকে নামতেছে। ও আমাদের দেখে এগিয়ে আসল। আমি আর মারোয়া একে অপরের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিললাম।
..... অলরেডি ১০ মিনিট হয়ে গেছে মারোয়া।
আমার দিকে তাকিয়ে মারোয়া কে বলছিল মামুন। 
..... মারোয়া তুমি আমার রুমে যাও।
মারোয়া চুপচুাপ তার ভাইয়ের রুমে চলে গেল।
আমি দাড়িয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আস্থে করে বললাম
...... স্যরি!!!
মামুন কিছু বলল না। চলে গেল ওখান থেকে। 
দুপুরের খাবার খেয়ে আমি আর মারোয়া মেহেদি অনুষ্ঠান এর জন্য সাজতে যাব কিন্তু শপিং ব্যাগ গুলো মারোয়ার আম্মুর রুমে রয়ে গেছে। মারোয়া কে বসতে বলে আমি গেলাম ব্যাগ আনতে। কিন্তু নক করার আগে ভিতরে আন্টির কথা শুনতে পাচ্ছিলাম। কার সাথে জানি কথা বলছিল। আমি আবার চলে যেতে চাইলাম। কারন এখন আন্টি কে ডিস্টার্ব করা ঠিক হবে না। হয়তো কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতেছেন। কিন্তু যাওয়ার জন্য পা বাড়ানোর আগে মোহিনী নাম শুনলাম। আমার খটকা লাগল। আমি দাড়িয়ে পড়লাম কান লাগিয়ে। কি কথা হচ্ছে শুনতে চাচ্ছিলাম। মারোয়ার আম্মু কোনো মহিলার সাথে কথা বলছিল। মহিলাটা অঝোরে কাদছিল। মহিলাটা আর কেউ না স্বয়ং ফারানের আম্মু। কন্ঠ শুনে বুঝতে পারলাম।
...... কাদিও না ভাবি। সব ঠিক হয়ে যাবে।
...... কি করে ঠিক হবে বোন। আমার একটা মাত্র ছেলে। সমস্যা থাকলেও আগে কখনো এরকম করেনি। এখন ওই মেয়েকে দেখার পর থেকে পাগলের মত করতেছে।
...... কোন মেয়েটার কথা বলতেছো??? মোহিনী???
..... হ্যা!!! বিয়ে বাড়ি। কখন কি করে বসে ঠিক নাই। শেষে সবার নাক কাটা যাবে। তাই আমার ছেলেকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখতেছি। 
..... ভাবি কানাডা পাঠিয়ে দেন না কেন??
..... আমিতো ভাবছি সেটা। কিন্তু ছেলে আমার নাকি মোহিনী কে ছাড়া কোথাও যাবে না। হুশ ফিরলেই শুধু মোহিনী মোহিনী করে। কি করব বুঝতে পারতেছিনা।
..... মোহিনী টা কে??
..... সেটাই তো বুঝতে পারতেছিনা। মোহিনী নামে এখানে কোন মেয়ে নাই।
..... জানেন ভাবি!! মোহিনী কে পাইলে আমি এখনি ফারানের সাথে বিয়ে দিয়ে দিতাম। 
.
আমি আর শুনলাম না কথা। আমার চারপাশের সবকিছু ঘুরছে মনে হচ্ছিল। কেননা মোহিনী ফারান আমাকে বলছিল। আর আমি কখনোই ফারানের মুখোমুখি হতে চাই না। জান গেলেও না!!
.

(চলবে)

মোহিনীWhere stories live. Discover now