পার্ট - ১৮

290 12 0
                                    


খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে গেলাম। ঘুম থেক উঠে প্রথমে গোসল সেরে নিলাম। তারপর ফযরের নামাজ পড়ে নিলাম। এই কয়দিন আমার নামাজ পড়া হয়নি একদম। তাই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলাম যেন সব ঠিক হয়ে যাই।
ঠিক সকাল সাড়ে আট টায় ফারান আসল খাবারের ট্রে নিয়ে। আমি চুপচাপ খাচ্ছিলাম। কিন্তু অনেক নার্ভাস লাগছিল। ফারান নিশ্চই এটা বুঝতে পারল। তাই জিজ্ঞেস করল 
......কি হয়ছে?
...... কই কিছু না।
...... তাহলে ঠোট কামরাচ্ছ কেন?
ঠোট কামরানো বন্ধ করে বললাম
...... এমনি!
..... এমন নার্ভাস হচ্ছো কেন?? আমি তোমাকে খেয়ে ফেলবো নাকি?? বিয়েই তো করতেছি। জোর করে ইনটিমেট হচ্ছি না। 
এই কথায় আমি মাথা নিচু করে বললাম
....... আপনার ফোন ভুলে রেখে গিয়েছেন।
টেবিল থেকে ফোনটা এনে ফারানের হাতে দিলাম। ফারান সন্ধিগ্ন চোখে আমার দিকে তাকাতে লাগল। এরপর ফোনটা হাতে নিয়ে দেখতে লাগল। তারপর আমার দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকালো। আমি আমতা আমতা করতে বললাম
...... আমি কিছু করিনি। ফোন লক ছিলো।
...... ফোনটা লক না থাকলে কি করতা??
এই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে আমি মাথা নিচু করে রাখলাম।
খাওয়া শেষ হলে ফারান যেতে বলল
..... রেডি হয়ে নাও। এক ঘন্টা পরেই আমাদের বিয়ে হবে।
একটু চুপ থেকে আমি বললাম
........ একটু দাড়ান।
ভ্রু কুচকে ফারান দাড়াল। আমি ধীরে ধীরে ফারানের সামনে দাড়ালাম
........ আমার একটা কথা ছিল
....... কিছু লাগবে??
....... আমি বিয়েতে রাজি। তবে"""""""
এই কথায় ফারানের চোখে মুখে হাসি দেখা দিল কিন্তু তবের সাথে সেটা মিলিয়ে গেল।
...... আমি বিয়ে আব্বু আম্মুর দোয়া নিয়ে করতে চাই।
এক টানে বললাম কথাটা। 
...... সম্ভব না।
বলেই ফারান চলে যেতে লাগল। আমি তাড়াতাড়ি দৌড়ে গিয়ে ফারানের সামনে দাড়ালাম।
....... আমি বিয়ে করবো তো। কিন্তু পিতা মাতার দোয়া না থাকলে নাকি বিয়ে সুখের হয় নানা তাই।
...... লাগবেনা ওদের দোয়া।
এইটা বলে ফারান দরজা খুলতে যাচ্ছিল। আমি ওর হাত ধরে ফেললাম। ফারান একরাশ বিস্ময় নিয়ে আমার দিকে তাকাল। আমি ভ্রুক্ষেপ না করে বললাম
..... প্লিজ!!!
ফারান একটা নিশ্বাস ফেলে আমার হাত ধরল। তারপর কিছু একটা ভেবে বলল
...... ঠিক আছে তবে কোনো উল্টা পাল্টা কাজ করবেনা আর সবসময় আমার পাশে থাকবা।
আমি মাথা নেড়ে সায় জানালাম। আমার খুব আনন্দ হচ্ছিল। কিন্তু সেই সাথে ভয়ও হচ্ছিল। কারন ফারান যদি কোন ভাবে জেনে যায় তাহলে আমাকে আস্ত রাখবেনা। 
কিছুক্ষনের মধ্যে রেডি হযে গেলাম। অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন ফারান আসবে।
অবশেষে ফারান এলো। আমি আগে আগে বেরুতে চাইলাম। কিন্তু ফারান হাত ধরে ফেলল
....... সামনে না। আমার পাশে পাশে হাটবা।
কিছুটা বিরক্ত হলেও কিছু বললাম না। যেতে দিচ্ছে এটাই বড় কথা।
রুম থেকে বের হলাম পাক্কা দুই দিন পর। এই দুই দিন আমি একট রুমের বন্দিনী হিসেবে ছিলাম। রুম থেকে তো মুক্তি পেলাম। কিন্তু ফারান থেকে না। সে আমার হাত ধরে রাখল। বাংলোর বাইরে গিয়ে দেখলাম দুটো গাড়ি। ফারানকে জিজ্ঞেস করতেই বলল বিয়ের সব সরঞ্জাম নেওয়ার জন্য একটা নেওয়া হয়ছে। আমি কিছু বললাম না। যা ইচ্ছা করুক। গাড়িতে উঠে বসলাম। এখানেও হাত ছাড়াছাড়ি নাই। এটা নিয়ে কিছুটা অস্বস্তি তে ছিলাম। তাই ফারান কে বললাম
..... হাত টা একটু ছাড়েন।
..... উহু। হাত ধরেছি ছাড়ার জন্য না। ধরে রাখার জন্যে।
..... কতক্ষণ ধরে রাখবেন??
এই প্রশ্নে ফারান এক মুহুর্তের জন্য আমার দিকে তাকাল। তারপর বলল
...... মরন পর্যন্ত!! 
আমি আর কিছুে জিজ্ঞেস করলাম না। গাড়ি চলতে শুরু করলকরল। এবারও জানালা লক করা। সিটে মাথা রেখে বাইরে দৃশ্য দেখতে লাগলাম। জানিনা কি হবে?? প্ল্যান অনুযায়ী তো নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু ফারান যদি উল্টা পাল্টা কিছুরকরে বসে?? তখন কি হবে?? 
ফারান কে দেখে মনে হচ্ছিল যে সে এসব নিয়ে একবারে মাথা ঘামাচ্ছে না। সর্বদা মুখের মধ্যে হাসি লেগে আছে। তারপর হঠাৎ করে জিজ্ঞেস করল
...... তোমার না গাড়িতে বমি আসে??
...... হুম
.....আমার সাথে গেলে বমি আর হবে না।
.... গতবারও আমি আপনার সাথে আসছিলাম!!
..... হ্যা আসছিলা। তবে পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল।
আমি আর কিছু বললাম না। ফারান কি কি বলতেছিল কিন্তু আমি শুনি নাই। আমার ঘুম আসছিল। কখন দু চোখের পাতায় ঘুম নেমে এলো জানতেই পারলাম না। যখন ঘুম ভাঙল তখন সূর্য মাথার উপরে। ফারান ডাকছিল আমাকে। বাইরে বেরুতে বলছিল।
কি ব্যাপার?? কি হল?? বাইরে বেরুলাম। কার টা থামানো হয়েছে একটা লোকাল হোটেলের সামনে আশে পাশে আরো দু একটা ছোট খাট দোকান আছে। এটা কোন জায়গা?? চারদিক টা মোটামুটি গাছগাছালি ঘেরা।
একটা ঘাট বাধানো ছোট পুকুর ও রয়েছে। ফারান হাত ধরে পুকুর ঘাটে নিয়ে গেল। সেখানে নিয়ে বলল
...... হাত মুখ ধুয়ে নাও
আমি প্রশ্ন করলাম না। ঘুম থেকে উঠেছিলাম তাই হাত মুখ ধুয়ে নিলাম। খুব ভালো লাগছিল। ফ্রেশ মনে হচ্ছিল। ফারানও হাত মুখ ধুয়ে নিল। দুহাত দিয়ে চুল থেকে পানি ঝেড়ে নিচ্ছিল তখন ওকে দেখতে ভালোই লাগছিল।
..... এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা ভালো না।
এই কথায় আমি তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে ফেললাম। ফারান একটু হেসে বলল
..... চলো
হোটেল ভাত, চা নাস্তা ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না। আমি ভাত খেলাম। ফারান আমার দেখা দেখি ভাত নিল। কিন্তু মনে হল ও ভাতে অভ্যস্ত না। ভাত খাচ্ছিল ও চামচ দিয়ে! আমি বললাম
.... ভাত হাত দিয়ে খায়। আপনি চামচ দিয়ে কেন খাচ্ছেন??
..... ঠিক আছে। আমি ভাত খায়নি আগে কখনো এত বেশি তাই।
ফারান এবার হাত দিয়ে চেষ্টা করল। কিন্তু ভাত মুখে দেওয়ার আগে বাসনে পড়ে যাচ্ছিল। একবার মনে হল আমি খাইয়ে দিই। আবার মনে হল না থাক। কি দরকার এত আন্তরিকতা।
ও যখন হাত দিয়ে খেতে পারছিল না তাই আমি ওকে চামচ দিয়ে খেতে বললাম। খাওয়া শেষ হলে আমি যখন কারে উঠতে যাবো তখন ফারান বাধা দিল। আমি জিজ্ঞাসু চোখে ওর দিকে তাকালাম। ও বলল
....... এদিকে আস!
...... কোথায়??
ও আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগল। কিছুদূর হাটার পরে একটা প্রায় খোলামেলা জায়গায় নিয়ে এলো। এরপর ফারান আমার চোখ ধরে ফেলল। আমি বললাম
....... কি করতেছেন?
...... শসসসস
ফারান আমাকে চুপ করতে বলছিল। এরপর কোথায় নিয়ে এসে চোখ খুলতে বলল। আমি চোখ খুললাম। আমি দেখলাম একটা বিশাল দীঘি। পানি খুবই পরিষ্কার। ছোট ছোট সোনালি রুপালী মাছ। আমি আস্তে আস্তে পানি গুলো হাত ছুলাম। আমার খুব ভাল লাগছিল। ছোট ছোট মাছ গুলো আমার হাতে ঠোকর মারছিল। এরকম সৌন্দর্যমন্ডিত দীঘি আমি দেখি নাই। বলতে গেলে দীঘিরর এক কোনে পদ্ম ফুল ফুটে আছে। দরিদ্র হওয়ার কারনে আমার ভ্রমন করা হয় নি তাই এসব কিছুর জন্য আমার চোখ এখনো শিশু।
...... মোহিনী!!
আমি চমকে উঠলাম। কারন এতক্ষন আমার ফারানের কথা একদম মনেই ছিল না। সে আবার বলল
...... এই দীঘির বৈশিষ্ট্য কি জানো??
...... কি?
...... এই দীঘি তে জোয়ার ভাটা হয়।
...... দীঘিতে জোয়ার ভাটা হয় না। 
...... রাইট।। কিন্তু এই দীঘি তে হয়।
এরপর ফারান দীঘির একটা কোনা আমাকে দেখালো। ছোট পাহাড় এর মত উচু ঢিবি দীঘির এক কোনা। ওই কোনায় একটা ফাটল। ওই ফাটল দিয়ে নিরবচ্ছিন্ন জল এসে পড়ছে দীঘিতে। একেবারে ঝরনার মত।
আমি এতক্ষন খেয়াল করি নাই। আসলেই এত সুন্দর দৃশ্য আমি কখনো দেখি নাই। ঝরনার মত এক নাগারে ওপর থেকে পানি পড়ছে। কিন্তু খটকা লাগল। আমি বললাম
...... এটাতো পানি এসে জমা হচ্ছে। কিন্তু দীঘির পানি বাড়তেছে না।
...... মোহিনী তুমি খুব বুদ্ধিমতি। ঠিক তাই। কেউ জানে না এই পানি কোথায় যায়।। আর এটাই এই দীঘির রহস্য। কেউ কেউ বলে এই দীঘির নীচে সুরঙ্গ আছে। তা দিয়ে পানি অন্য খানে চলে যায়। আর আমিও এটা বিশ্বাস করি। যখন প্রথম দেখেছিলাম তখনি কিনে নিই। কারন এটার সৌন্দর্যে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম।
তারপর ফারান আমার আমার দু হাত ওর দু হাতে নিল। তারপর বলতে লাগল
....... মোহিনী আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।
...... বলেন।
..... মোহিনী!! আমি তোমাকে প্রথম দেখি মারোয়া কে আনতে গিয়ে। যখন তুমি দরজা খুলেছিলে তখন আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল। তোমাকে দেখতে ভোরে সদ্য প্রস্ফুটিত কোন ফুলের মত লাগছিল। আর তোমার ঘুমন্ত চোখ দুটো!! ইশ আমি! আমি তোমারে কেমন করে বোঝাই যে আমার কেমন লাগছিল!! তোমার ভেজা ভেজা চুল তোমার গালের উপর, চোখের উপর পড়েছিল। আমি পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। আর একটা মিষ্টি গন্ধ অাসছিল তোমার থেকে। আমার তক্ষুনি মনে হচ্ছিল তোমাকে জড়িয়ে ধরে তোমার গন্ধ টা নিই। কিন্তু তুমি ভয় পেয়েছিলে। তাই কিছু করিনি। ওখান থেকে এসে আব্বু আম্মু কে তক্ষুনি জানিয়েছি যে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই কিন্তু ওরা রাজি হচ্ছিল না। আমার প্রচুন্ড রাগ হয়। মনে হচ্ছিল সব কিছু ধ্বংস করে দিই। কিন্তু যখন তোমাকে জানালার পাশে দেখি আমার চারদিক নিস্তব্ধ হয়ে উঠে। আমির সব রাগ চলে যাই। এরপর তোমার রুমে যাই কারন আমি আর তোমাকে না দেখে থাকতে পারছিলাম না।
.
(চলবে)

মোহিনীWhere stories live. Discover now