পার্ট - ৬

393 14 0
                                    


উনি তখন আমার কাছে আসতে লাগলেন মারোয়া কে কোলে নিয়ে। আমার একদম কাছাকাছি এসে চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস নিলেন আর আমি পিছু হটে গেলাম। উনি কিছু না বলে চলে গেলেন। আর আমার চোখ নাচুনি শুরু হয়ে গেল। আমি তাড়াতাড়ি চোখে হাত দিয়ে ফেললাম। বুঝতে পারলাম না কি হল?? দরজা বন্ধ করে ভেতরের দিকে আসতেই আয়নার দিকে চোখ পরল। আমি শকড হয়ে গেলাম। আমার চুল গুলো গোসলের কারনে ভেজা এলোমেলো হয়ে আছে। চোখ দুটো বোজা বোজা আর সবচেয়ে বড় কথা আমার গায়ে ওড়না ছিলনা। আমার লজ্জায় তক্ষুনি মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিল। এই অবস্থায় আমি কোন পুরুষের সামনে ছিলাম। ছি... ছি... নিজের উপর ঘৃনা হচ্ছে।। কিন্তু এখন কিছু করার নেই। যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন থেকে সাবধানে থাকতে হবে।
রাতে সবাই কে ডাইনিং টেবিলে খাবার দেওয়া হল।
এত পদের খাবার দেখে আমার মাথা ঘুরে গেল। অধিকাংশ খাবারের নাম আমি জানিও না। সবাই নির্বিঘ্নে নিচ্ছে। আমি টেনশনে পড়ে গেলাম কি নিব? আমি যেটা চিনি ওইটা নেওয়া দরকার। ডাল ডিম আর মুরগীরর মাংস নিলাম। খেতে যাব এমন সময় আমার মনে হল কেউ যেন আমার দিকে তাকায় আছে। উপরে চোখ তুলতেই দেখলাম কিছুক্ষন আগের লোকটা। মারোয়া কে হাতে ধরে নিয়ে আসতেছে। এবারও উনি দিকে তাকিয়ে আছে। কি হল?? আমার চেহারা এত দেখার কি হল?? কিছু আছে নাকি?? হাত দিয়ে দেখলাম, মুক্তা কে জিজ্ঞেস করলাম। সে বলল কিছু নাই। তাহলে এত কি আছে দেখার?? ওই লোকটা আমার মুখোমুখি এসে বসলেন। মারোয়া দৌড়ে এসে আমার পাশের চেয়ারে বসল। আমি নার্ভাস হয়ে পড়লাম। লোকটা একটা লাইট ব্লু কালার শার্ট পড়েছিল। লম্বায় মামুনের চেয়ে হবে। আমি কোন রকম খেয়ে উঠে চলে এলাম। কিছুক্ষন পর মুক্তা, মারোয়া, মারোয়ার আম্মু এলো। কালকে সবাই শপিং করতে যাবে। সুতরাং মারোয়ারা যাবে। আমাকেও যেতে হবে। কারন আমি কোনো কাপড় আনি নাই। তাই কালকে জলদি যেতে হবে তাই। আমি শুয়ে পড়লাম। সাথে মারোয়া ও। মারোয়া কে লোকটার কথা জিজ্ঞেস করলাম।
... মারোয়া ওই লোকটা কে?
.... কোনটা??
.... যেটার কোলে উঠেছিলে।।
...... ও ওটা ফারান ভাইয়া।।। আমার মামাতো ভাই।
.... এটার বিয়ে নাকি??
.... না। বিয়ে হচ্ছে সাগর ভাইয়ার।
....তাহলে এটা??
.... মেজ মামার ছেলে। ওরা কানাডা থাকে। বাংলাদেশে শুধু মেজ মামা আসেন কাজের জন্য। আসলে আমাদের ঘরে আসেন।
.... ঠিক আছে।
.... ম্যাম!!
.... হু
.... একটা কথা বলি?
... বল
...... ফারান ভাইয়ের কাছে কখনো যাবেন না।
..... কেন? 
..... ফারান ভাইয়ার নাকি কি সমস্যা আছে। আম্মুও আমাকেও যেতে দেয় না।
..... কিন্তু তুমি তো কাল যে গেলা উনার সাথে??
....আমার উনাকে খুব পছন্দ তাই।
.... ঠিক আছে তাহলে। তবে কালকে থেকে উনার কাছে যাবেনা।
.... ওকে!!
.
ঘুম ভাঙল খুব ভোরে। অথচ এত ভোরে ঘুম ভাঙার কথা না। ঘড়ি দেখলাম। মাত্র সাড়ে চারটা বাজে। বাইরে নিশ্চয় খুব চেঁচামেচি আর ভাঙচুরের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এই ভাঙচুরের আর আওয়াজের কারনে ঘুম ভেঙে গেল। ভেঙেই যখন গেল তখন নামাজ টাও পড়ে ফেলি। এই ভেবে ঘুম থেকে উঠে গেলাম। মারোয়া এখনো গভীর ঘুমে। রুমের বাই রে আসতেই দেখলাম মারোয়ার আম্মুর রুমের দরজা খোলা। ভেতরে ঢুকলাম। কেউ নেই ভিতরে। গেল এত ভোরে?? ওইদিকে চিৎকার, চেঁচামেচির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। ওই দিকেই যায়। কি হয়ছে দেখি। একটু এগিয়ে যেতেই দেখলাম ঘরের প্রায় সদস্য একটা রুম থেকে আসা যাওয়া করছে। আর প্রচুন্ড ভাঙচুরের আওয়াজ আসছে। আমি কানে হাত দিয়ে জানালার দিকে এগিয়ে গেলাম। ওই খানে যা দেখলাম তা দেখার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। ফারান লোকটা রুমের সব জিনিস নিয়ে ভাঙচুর করছে। আর কি সব জানি বলছে। আর পিছন পিছন মধ্যবয়স্ক দুজন পুরুষ মহিলা হাটছে। সম্ভবত এরা লোক টার মা বাবা। ম আর অদূরে দাড়িয়ে আছে মারোয়ার মামা মামি।। আমি চাই... আমি চাই... এরকম কিছু বলছিল। আর উনার মা বাবা মানা করছিল। মানা করাতেই আমার মনে হয় বেশি রেগে গেল। হাতের সামনে বড় দামি টিভি টা নিয়ে আচাড় মারতে উদ্ধত ঠিক সেই সময় আমার দিকে তাকাল। ঠিক তাকাল না আমার দিকে চোখ পড়ল। ওর লাল চোখ দুটো দেখে আমার অন্তরাত্মা পর্যন্ত কেপে উঠল। উনি এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকায় রইলেন। টিভি টা আর আছাড় মারলেন না। আর জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিতে লাগলেন। আমি জানালা ছেড়ে দিলাম ভয়ে। এমন সময় কে যেন পিছনে হাত রাখল। আমি চমকে উটলাম। মারোয়ার আম্মু।
.... এখানে কি করছ??
.... আন্টি কি হয়ছে এখানে?
.... চলো কিছু হয়নি।
অগত্য চলে আসতে হল। যাওয়ার আগে পিছন ফিরে তাকালাম। উনি এখনো তাকায় আছে। কি সাংঘাতিক রে বাবা। এভাবে কেউ তাকায় থাকলে নিশ্চয় যে কেউ হার্ট এট্টাক করবে। আমার গা শিউরে উঠল। ওদিকে আর তাকালাম না। নামাজ পড়ে আবার ঘুমাতে চলে গেলাম। মারোয়া এখনো বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। আমি পাশে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ঘুম আসছেনা। চোখের পাতাটা নাচছে আবা। কি করব বুঝতে পারছিনা।
এভাবে সকাল সাত টা বেজে গেল। মারোয়া কে উঠালাম। মারোয়া বাথরুমে যেতেই মারোয়ার আম্মু আমাকে টেনে নিয়ে গেলেন কথা আছে বলে। একপাশে নিয়ে বললেন ফারান এর সামন যেন আমি না যায়। আমি কিছু বুঝলাম না। কিন্তু উনার কথা মান লাম। আর আমাকে রেডি হতে বললেন শপিংয়ে যাওয়ার জন্য। কারন এখানে পরার জন্য আমি কোন কাপড় আনি নাই। পড়তেছি সব মুক্তার কাপড়। অবশ্য বাড়িতেও আমার তেমন কাপড় ছিল না। 
যেই ভাবা সেই কাজ। মারোয়া আর আমি শপিংয়ের জন্য রেডি হলাম। বাইরে বেড়িয়ে দেখলাম বাড়ির প্রায় সবাই রেডি কেনাকাটা করতে। মামুন মুক্তাকে কিসের জন্য বকা দিচ্ছিল। কিন্তু ওরাও রেডি। সবাই এক সাথে যাত্রা শুরু করলাম। প্রায় ১০/১২ টা কার রেডি ছিল বাইরে। আমরা ওগুলো তে চড়ে আসলাম। মলে এসে আমার মাথা ঘুরে গেল। এত সুন্দর কাপড় চোপড় আমি আর কখনো দেখি নি। মারোয়ার আম্মু আমার জন্য শপিং করছিল। আমাকে জিজ্ঞেস করতেছিল পছন্দ হচ্ছে কিনা। আমি সায় দিলাম। আর এগুলোর দাম আমার এক বছরের বেতনের চেয়েও অনেক বেশি। আমার মাথা ধরে এলো। কিন্তু সবাই শান্তি মত শপিং করছিল। মারোয়ার আম্মু বেছে বেছে কত গুলো গাউন আর লং স্কার্ট নিলেন। সবগুলো খুব সুন্দর ছিল। মারোয়ার আম্মু মারোয়ার জন্য কিনছিলেন তখন আমি কিছু স্কার্ফ দেখছিলাম। এমন সময় আমার ওড়নায় টান পড়ল। কে যেন টানছে। পেছন ফিরে দেখলাম একটা নয়/দশ বছরের ছেলে। হাতে একটা শপিং ব্যাগ। কিছু না বলে ব্যাগটা আমার হাতে দিল। আমি নিলাম। তারপর জিজ্ঞেস করলাম
.... এটা কার?
.... আপনার।
.... আমার!!! কে দিছে??
... কে দিছে??
.... ওই ভাইয়া
হাত দিয়ে পেছনে কাউকে দেখাল। কিন্তু কাউকে দেখলাম না। 
.... কোথায়? আমি তো দেখতেছিন।
এমন সময় মারোয়ার ডাক দিল। সামনে ফিরে দেখলাম ছেলেটা নাই। মারোয়া বলল
... এটা কি ম্যাম??
.... জানি না।
.... আমি দেখি??
.... দেখ
মারোয়া খুলে ফেলল। এটা একটা গাউন। তবে সিম্পল। সিলভার কালার নেক এবং বর্ডারে কাজ রয়েছে।
আমি মহা চিন্তায় পড়ে গেলাম। তাড়াতাড়ি মারোয়ার আম্মুকে ড্রেসটা দিয়ে দিলাম। 
.
(চলবে)

মোহিনীWhere stories live. Discover now