পার্ট - ৭

389 15 0
                                    


তাড়াতাড়ি মারোয়ার আম্মুকে ড্রেসটা দিয়ে দিলাম। মারোয়ার আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে বলল
..... এটা কি?
..... আমি জানিনা। একটা গাউন। ছেলে একটা এসে দিয়ে গেল।
মারোয়ার আম্মু প্রথমে গাউন পরে আমার দিকে তাকালেন।
.... এটা তোমার পছন্দ হয়ছে সরাসরি বললেই তো পারো। তুমি কি মনে করছো আমি তোমাকে অবহেলা করব?
..... না না আন্টি এটা সত্যি কেউ একজন দিয়ে গেল। 
আমার কথা বিশ্বাস করল বলে মনে হল না। আন্টি ড্রেস বের করলেন।
.... খুব সুন্দর গাউন। তোমাকে ভাল মানাবে। খুব সুন্দর হয়ছে।
.
আমি আর কিছু বললাম না। 
শপিং শেষে বাড়িতে ফিরে আসলাম। দুপুর হয়ে এসছিল। তবে মারোয়ার আম্মু কাউকে টেবিলে খেতে দিলেন না। নিজের রুমে সব খাবার আনালেন। এই নিয়ে মামুন তার মায়ের সাথে রাগারাগি করল। তার মায়ের সাফ কথা তার মেয়েরা টেবিলে খাবেনা। মামুনের যদি ইচ্ছা হয় তাহলে একা টেবিলে গিয়ে খেতে পারে। তারপর মামুন আর কিছু বলতে পারল না। গাইগুই করতে করতে আমাদের সাথে বসে গেল। আমার মামুনের এই অবস্থায় খুব হাসি পেল। মুখ টিপে টিপে হাসতেছিলাম। এটা মামুন টের পেয়ে ফোস ফোস করতে করতে আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করল। আমি তাড়াতাড়ি ঢোক গিলে খাওয়ার দিকে মন দিলাম। 
খাওয়া শেষ করে রুমে আসলাম ততখনও মারোয়া খাচ্ছিল। বলা বাহুল্য ওর আম্মু খাওয়ায় দিচ্ছে। রুমে ঢুকে আমি মারোয়ার জন্য দরজা বন্ধ করলাম না। এই রুমে কেউ আসেনা। কারন এই রুমের বাসিন্দা দুজন ঘরের নিস্প্রয়োজন ব্যাক্তি। শুধু মাত্র মারোয়া দের ফ্যামিলি ছাড়া আর কেউ প্রবেশ করে না এখানে। এখানে কোন চিরুনি নাই। আছে সব হেয়ার ব্রাশ। তাই হেয়ার ব্রাশ নিয়ে মাথা আচড়াতে লাগলাম। চুল আচড়াতে আচড়াতে কিছুটা অন্য মনস্ক হয়ে পড়েছিলাম। তাই খেয়াল করি নি যে রুমে কেউ একজন ঢুকছে। কিছু একটা মাথায় অনুভব হচ্ছে। মন হল আমার ঘাড়ে গরম বাতাস পড়ছে। কি হচ্ছে বুঝতে পারছিলাম না। আমি তাড়াতাড়ি সরে যেতে গিয়ে পারলাম না। কেউ একজন পেছন থেকে আমার হাত দুটো চেপে ধরেছে তাই নড়তে পারছিনা। তারপর নাকটা আমার চুলের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়ে নিশ্বাস নিতে লাগল আর বিড় বিড় করে কিছু একটা বলছিল। আমি ভয়ে কাঠ হয়ে গেলাম। আর হাত ছাড়ার জন্য আপ্রান চেষ্টা করছিলাম। কোনো রকম শক্তি নিয়ে বললাম
.... কে এ এ আ.. আপ পনি? এগুলো কিইইই কঅঅঅর ছেন?
..... একদম চুপ থাকো। আমাকে তোমার গন্ধ নিতে দাও মোহিনী। কি মিষ্টি গন্ধ!!
..... আমি মোহিনী না। আমাকে ছাড়ুন। নাহলে আমি চিৎকার করব। 
আমার কথার পাত্তা না দিয়ে ওই লোকটা আবার বলতে লাগল
..... তুমি আজকে দুপুরে টেবিলে আসনি কেন? আমাকে ভয় পেয়েছিলে বুঝি? তুমি ভয় পেয়ও না। আই প্রমিজ আমি তোমার কোন ক্ষতি করবোনা। এটা বলেই সে আমার অন্য ঘাড়ে নাক ঢুবিয়ে দিল।
এবার আমি কিছুটা বুঝতে পারলাম মারোয়ার আম্মু কেন টেবিলে খেতে দেন নি। আমার শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে আসতে লাগল। আর এটাও বুঝতে পারলাম যে এই লোকটা মারোয়ার মামাত ভাই ফারান। এর মাথায় নিশ্চয় সমস্যা আছে। তাই কোন রকম শক্তি যোগার করে বললাম
.... আ আ আমা মা মাকে ছে ছেড়ে দেন।। 
এই বলে আমি ফুপিয়ে কান্না শুরু করে দিলাম
আসলে আমার ভয়ে কান্না চলে আসছিল। কোন ছেলে আমাকে এভাবে স্পর্শ করে নাই। আর এই লোকটার সাহস আমাকে কুড়েকুড়ে খাচ্ছিল।
আমার কান্না শুনে ফারান থেমে গেলো। তবে তা এক সেকেন্ডের জন্য। সে আমার হাত ছেড়ে দিল বটে কিন্তু দ্বিগুণ জোরে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমার কাধের উপর মাথা রেখে বলতে লাগল
.... প্লিজ প্লিজ কেদোঁনা।। আমার ভাল লাগছে।
.... আমমমম.. মার ব্যাথা লা..লা..লাগছে।
এই কথা বলায় কাজ হলো। হাতের বাধন একটু আলগা হলো। আমি এই সুযোগ টা কাজে লাগালাম। গায়ের সমস্ত শক্তি এক করে একটা ধাক্কা দিয়ে সামনের বাথরুম এর দিকে পালালাম। ফারান আমার আচমকা ধাক্কায় চমকে উঠেছিল। পরক্ষনে নিজেকে সামলে আমাকে ধরার জন্য সামনে হাত বাড়াল। কিন্তু ততক্ষণে আমি বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিছি। ফারান চাপা গর্জনে বলতে লাগল
..... মোহিনী দরজা খুলো। কি করছো তুমি? তাড়াতাড়ি দরজা খুলো।
আমার প্রাণ গেলেও তো আমি আর দরজা খুলবো না। তাই চুপচুাপ এক কোনে বসে রইলাম। কিন্তু ফারান আমাকে হুমকি দিতে লাগল।
..... মোহিনী দরজা খুলো। না হলে ভাল হবে না বলে দিচ্ছি। আমি দরজা ভেঙে ফেলব বলতেসি। আমি তোমাকে দেখতে চাই। দরজা খোল প্লীজ।
আমি আমার জায়গা থেকে এক চুলও নড়লাম না। ভয়ে আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা। এবার আর হুমকি দিচ্ছিল না। অনুনয় করছিল। আমি আয়াতুল কুরসি পড়া শুরু করলাম। আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল.... এর মধ্যে মারোয়ার আওয়াজ পেলাম। ও আমাকে ডাকছে। তার মানে ফারান চলে গেছে। আমি তাড়াতাড়ি দরজা খুলে মারোয়া কে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কাদতে শুরু করলাম। আমার হঠাৎ এই অবস্থায় মারোয়া হতচকিত হয়ে গেল। আমাকে বার বার জিজ্ঞেস করছিল কি হয়ছে আমি কাদছি কেন? কিন্তু আমি তাকে কিছু বললাম না। কারন সে বুঝবে না।
এর কিছুক্ষন পর খুব চেঁচামেচির আওয়াজ আসছিল। মারোয়া বলল 
....আমি দেখে আসি। 
আমি মানা করলাম। কিন্তু শুনল না। সে চলে গেল। আমার সাহস হচ্ছে না রুমের বাইরে পা দেবার। 
কিছুক্ষন পর মারোয়া এলো দৌড়াতে দৌড়াতে। সে হাপিয়ে গেছে। হাপাতে হাপাতে বলল
.... ফারান ভাইয়া সব কিছু ভেঙে ফেলতেছে। মেজ মামা মামি থামাতে চাইছে কিন্তু পারতেছেনা। 
আমি তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করে দিলাম। মারোয়া কে সহ বসে আল্লাহর নাম জপতে লাগলাম মনে মনে। কিন্তু চেঁচামেচি কমছে না। এর মধ্যে মারোয়ার আম্মু আসল। প্রথমে শিউর হয়ে তারপর দরজা খুলছি। মারোয়ার আম্মু এসে বললেন তোমার আম্মু ফোন করছে। কথা বল। আমি ফোন হাতে নিলাম।
.... হ্যালো আম্মু আসস্লামু আলাইকুম। 
.... ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছ আম্মু?? ভাত খাইছো??
.... হ্যা আম্মু খাইছি। তুমি খেয়েছো? রিফাত আর আব্বু কেমন আছে।
... রিফাত পড়তেছে আর তোর আব্বু শুয়ে পড়ছে। তা বাইরে এত আওয়াজ কেন? কোন সমস্যা হয়ছে নাকি?? তোমার কিছু হয় নাই তো??
.... না আম্মু আমি ভালো আছি। বিয়ে বাড়ি তাই একটু আওয়াজ।
.... মেহেদি কবে??
... কাল। আম্মু শুয়ে পড়। আমার একটু কাজ আছে। আর টেনশন করিও না। আমি ভালো আছি। 
কথা শেষ করে মারোয়ার আম্মুকে ডাকলাম
.... আন্টি!
.... হু বল। কিছু লাগবে।
... না। কিছু লাগবে না। একটা কথা জিজ্ঞেস করতাম।
.... বল
.... মারোয়া তুমি একটু বাইরে যাও। আমি এখন ডাকতেছি তোমাকে।
..... ঠিক আছে ম্যাম। তবে জলদি
.... আন্টি ফারান ভাইয়ের কি হয়ছে?? এরকম ভাঙচুর করে কেন?
.... কি বলব আর? আমার মেজ ভাইয়ের একমাত্র ছেলে ফারান। ছোট বেলা থেকে অন্যরকম। টাকার কোন অভাব নেই। তাই সে যা চাই তাই এনে দেয়। কিন্তু এটা তার খারাপ অভ্যাস হয়ে গেছে।
..... কিন্তু এটা কোন অভ্যাস না।
... জানি। ওর মেন্টাল প্রবলেম আছে। এটা বোঝা যায় না। খুব মেধাবী ছেলে। কিন্তু যখন রেগে যায় তখন কেউ থামাতে পারেনা। এজন্য বলছি তোমাদের ওর আশপাশ না যায়তে। বিয়ে বাড়ি এটা। কি না কি করে ফেলে।
আন্টি চলে গেলেন এগুলো বলে। আমি যথা দ্রুত বিয়ে শেষ করে বাড়ি যাওয়ার জন্য দোয়া করলাম। চেঁচামেচির আওয়াজ আর আসছিল না। তাই রুমের দরজায় দাড়িয়ে উকি দিলাম। মারোয়া আসছে ওই দিক থেকে। আমাকে ওর প্রশ্ন করা লাগল না। ও নিজে থেকে বলতে লাগল
.... জানো ম্যাম সবাই মিলে ফারান ভাই কে চেপে দড়ি দিয়ে বেধে রাখছিল। তারপর একটা ইনজেকশন মেরে দিছিল। আর সাথে সাথে ফারান ভাই ঘুমাই গেছিল। জানো ম্যাম আমার খুব খারাপ লাগতেছিল ফারান ভাইয়ের জন্য
সত্যি আমারও খুব খারাপ লাগতেছিল। বলতে গেলে ফারানের অসুস্থতার জন্য আফসোস হচ্ছিল। মনে মনে দোয়া করছিলাম আল্লাহ যেন তারে ভালো করে দেয়।
.
(চলবে)

মোহিনীWhere stories live. Discover now