পার্ট - ৩

479 12 0
                                    

সকালে ঘুম থেকে উঠে পড়লাম ঘন্টার আওয়াজে। ও আল্লাহ.... এসেম্বলি শুরু হয়ে গেছে নিশ্চয়। আমি আজকেও লেইট। তাড়াতাড়ি উঠে হাত মুখ ধুয়ে রওনা হলাম। বাড়ির অদূরে স্কুল হওয়াই ঘন্টার শব্দটা এখানে শোনা যায়। ফযরের এর নামায পড়ার পর আবার শুয়েছিলাম। তারপর উঠতে দেরি হয়ে গেছিল। স্কুলে পৌঁছে তেমন কিছু হল না। তবে পাশের হাইস্কুলে খোজ নিলাম মারোয়ার। সত্যি সেখানে সে খুব ভাল ছাত্রী।
স্কুল থেকে সোজা টিউশনিতে চলে গেলাম। দুপুরের খাবার খায়নি। ভাল লাগছিল না। আসলে সত্যি বলতে ঘরে চাল ছিল অল্প। রিফাত বয়ঃসন্ধি তে পড়ছে। ও একটু খাবেই। আমি খেলে টানাটানি পড়ে যাবে। আমি অনু দের বাড়িতে যেতে লাগলাম। অনু আমার আরেকটা ছাত্রী। পঞ্চম শ্রেনির ও। আমার স্কুলেই পড়ে। আসলে অনু কয়েক বছর ধরে পড়তেছে। ওকে ছাড়ি নাই তারও একটা কারন আছে। ওটা হলো ওদের বাড়ীর সামনের বেলী ফুলের গাছ টা। বেলী আমার খুব প্রিয় ফুল। এই বর্ষায় কলি আসছে আমি দেখছি। হয়তো আজ গিয়ে ফুটন্ত পাব। 
ভাবনায় ছেদ ঘটল এক মহিলার ডাকে। পিছন ফিরে তাকালাম। মহিলা টাকে আমি চিনি। খুব ভালো না। তার নাতি কে আমি পড়াইছিলাম কোন এক রমজান মাসে। ঈদে ঘরে বাড়তি চাহিদা মেটানোর জন্য। কিন্তু মহিলা খুব পাজি। ঈদের আগের দিন ২/৩ বার আধা ঘন্টার মতো দাড়িয়েছিলাম তাদের দরজায় টাকার জন্য। পাজি মহিলা আর বের হন নি। আমি খুব মনে আঘাত পেয়েছিলাম। কিছু বলিনি। অনেক কষ্ট করে রোজার মাসে তপ্ত রোদে, অসুখে তার নাতি কে পড়াইছিলাম। আর সেটাকা ঈদে পাইলাম না। টাকা দিয়েছিলেন ঈদের সাত দিন পর। তাও সম্পূর্ণ না। তার পর ছেড়ে দিছিলাম। কিন্তু পাজি মহিলা আমার পেছনে লেগে আছে। তবে মুখে উনাকে কিছু বললাম না।
----- আসসালামু আলাইকুম। ভালো আছেন? আপনার বুড়া কই??( বুড়া মানে উনার নাতি। আদর করে ঢাকা।)
----- ওয়ালাইকুম আসসালাম। আমি ভালা আছি।। তুমি ভালা আছোনি? বুড়া কি আর বুড়ির খবর রাখে? সে বাপের সাথে দোকানে গেছে। 
------ তা কি খবর কেন ডাকলেন?
----- আমার নাতিরে একডু পড়াও না। কুনো ছার পাইতেছনা।
----- ওর মাকে দেন। মা ছাড়া কেও ওকে ধৈর্য ধরে পড়াতে পারবেনা।
----- আরে দুররর... হেই বেডি পড়াতে পার নাহি
( অতঃপর বউয়ের নামে নানা কাহিনী বললেন। এদের এই একটা সমস্যা। বউ এর নামে রচনা লিখতে বললে দিস্তার পর দিস্ত কুৎসা লিখতে পারবে)
.
আমি হাল ছেড়ে দিয়ে বললাম 
----- আরেকটা টিচার দেখেন আমার সময় নাই। 
----- কোই? ছার তো পাই না। তুমি খুইজ্যা দাও না।
(খাইছে কপাল মনে মনে বললাম। এত সহজে আমাকে ছাড়বেনা। তাই মাথা ঘুরিয়ে বললাম
----- আপনি ওই স্কুলের আনিস আছে না!
----- হ.. হ
----- ওকে বলেন... ওই যেমনে তেমনে যোগায় দিবে
------ আমিতো আইজকা গেছিলাম। আনিসরে তো পাই নাই।
মনে মনে বিরক্ত হয়ে বললাম
----- আছে ও.... কাজে গেছে...কালকে আসবে। আপনি কালকে যান। পাবেন ওকে। আর আমার কথা বলবেন না ওকে।
.
এই বলে আর উত্তরের অপেক্ষা না করে চলা শুরু করলাম আর একটা নিশ্বাস নিলাম যেটা এতক্ষন মনে হয় চেপে রেখেছিলাম। কিছুক্ষন হাটার পর যখন অনুদের বাড়ি পৌছলাম তখন খিদা টা মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। ওই তো বেলি ফুলের গাছ টা দেখা যাচ্ছে। ও আল্লাহ....! আমি কি দেখছি। বেলি ফুল ফুটে পুরা গাছ টা সাদা দেখাচ্ছে। আর গন্ধে চারদিকে মৌ মৌ করছে। কতক্ষণ তাকায় ছিলাম হুশ নেই। অনুর ডাক শুনে হুশ ভাঙল। 
অনুদের পড়া শেষে গাছের সামনে দাড়ালাম। এক গোছা ফুল ছিড়ে মাথার খোপার সাথে গুজে দিলাম। আর এক গোছা নিয়ে লাগালাম। এবার শুরু করলাম হাটা। আশ্চর্য্য আমি খিদা ভুলে গিয়েছি। আর আমার সাথে বেলি ফুলের খুশবু যেন পারফিউম লাগিয়েছি। অথচ আমি পারফিউম লাগায় না। মন টা ভালো হয়ে গেল। কিন্তু আমার চোখের পাতাটা হালকা ভাবে নড়তে লাগল। বাম হাতে চেপে ধরলাম চোখটা।

(চলবে)

মোহিনীWhere stories live. Discover now