পার্ট - ১৭

347 15 0
                                    


.
গোসল করায় মনে হল গায়ে অনেকটা শক্তি ফিরে এলো। নিজেকে অনেক ফ্রেশ মনে হল। যা হোক এখন ভালো করে ভাবতে পারবো কিভাবে এখান থেকে পালাতে পারবো।
গোসল করে যখন গাউন টা পড়লাম। দেখতে ভালোই কিন্তু ওড়না খুজে পেলাম না। পরে মনে পড়ল গাউনে ওড়না থাকেনা। ওই বিয়েতে ম্যাচিং ওড়না ছিল বলে পড়তে পারছিলাম। কিন্তু এখন এখানে কি করব?? ওড়না ছাড়া ফারানের সামনে?? না না.... কি করব আমি?? গাউন টা খুলে ফেলবো? খুলে ফেললে যদি রেগে যাই তখন কি করব?? সাত পাচ ভেবে গাউনটা খুললাম না। তবে ওড়না ছাড়াও ফারানের সামনে যাওয়া যায় না। একটা আইডিয়া মাথায় এলো। চুলের পানি নেওয়ার জন্য টাওয়েল মাথায় পেছিয়ে ছিলাম। ওইটা দিয়ে চুল ভালো করে মুছে টাওয়েল টা মাথার ওপর ওড়নার মত দিয়ে রাখলাম।
যখন বাথরুম থেকে বেড়িয়ে এলাম তখন রুমে কেউ ছিলনা। যাক ভালোই হল। স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। এবার ওড়না খুজতে লাগলাম। কিন্তু আলমারিতে তালা মারা। কি করবো এখন?? 
এই সব কথায় চিন্তা করছিলাম তখন বাইরে চার পাচ জন লোকের পায়ের আওয়াজ পেলাম। কোন কিছু চিন্তা করার আগেআগেই ফারান রুমে ঢুকে গেল। ও ঢুকতেই প্রথমেে অামার দিকে নজর পড়ল। ও হাটা বন্ধ করে দিল। হা করে কি তাকায় আছে?? আমি একবার ফিরে পিছনে আয়নায় তাকালাম মুখে কোন কিছু আছে কিনা দেখার জন্য। কই না! কিছুই তো নাই। আবার ফিরলাম। ফারান এখনো তাকায় আছে। নিশ্বাস নিচ্ছে কিনা কে জানে? রুমে আরো কয়েকজন মহিলা প্রবেশ করল। এরা কারা?? সবার হাতে কিছু জিনিস পত্র। তারা ফারান কে ডাকছে। কিন্তু ফারান যেন শুনতেই পেলনা। আমি বিব্রত বোধ করলাম। তারপর মনে পড়ল নিশ্চই মাথায় টাওয়েল রাখায় ফারান তাকিয়ে আছে। আমার দিক থেকে চোখ না ফিরিয়ে সে মহিলা দের বেডের দিকে ইশারা করল। আর তখন মহিলারা জিনিসপত্র বেডে রেখে চলে গেল। তারপর ফারান খুব দ্রুত আমার সামনে এসে দাড়ালো। আমি চমকে গিয়ে একটু পিছু হটলাম। ও খুব দ্রুত নিশ্বাস ফেলতে ফেলতে বলল
...... মোহিনী আমি তোমাকে একটু করে জড়িয়ে ধরি?? ব্যস একটু করে প্লীজ।
বলে কি লোকটা?? মাথা ঠিক আছে। আমি আমতা আমতা করতে মাথা নেড়ে না বললাম। 
..... প্লীজ একটু করে। শুধু একটু করে ছোব।
আমার প্রচুন্ড রাগ হল। তারপরও রাগ প্রকাশ না করে বললাম
...... আপনি আমার হাসবেন্ড নাকি?? কেন ছোবেন আমাকে? কে আপনি আমার??
এই কথায় ফারান রেগে গেলেও প্রকাশ করল না। শুধু হাত দিয়ে একবার আমার গাল ছুতে চেষ্টা করল। কিন্তু আমি সরে গেলাম। কারন এটা গুনাহ। ফারান আমার কাছে নন মেহরাম পুরুষ। এতদিনে আল্লায় জানে ফারানের জন্য কত পাপ হয়ছে।
ফারান একটা নিশ্বাস ফেলে চলে যেতে লাগল। আর আমি ফেলার জন্য একটা স্বস্তির নিশ্বাস নিলাম কিন্তু তার আগেই ফারান আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমি চমকে উঠলাম। ফারান না গিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে। আর এত জোরে চেপে ধরেছে যে আমি ঠিকমত নিশ্বাস নিতে পারছিলাম না। দু হাতে ওকে ধাক্কা দেবার বৃথা চেষ্টা করছিলাম। আমার ভেজা চুলে মুখ ঢুকিয়ে ফিস ফিস করে ফারান বলতে লাগল
...... তুমি আমার কে জানো?? তুমি আমার মোহিনী। আমার আত্মার সঙ্গী। আমার সোলমেট। আর তোমার হাসবেন্ড হতে আমার বেশি সময় লাগবেনা। 
কিছুক্ষন চুপ থেকে আবার বলতে লাগল
....... এত সুন্দর কেন তুমি?? আমি তো নিশ্বাসই নিতে পারছিলাম না। আর এত মিষ্টি গন্ধ কেন তোমার?? যদি পানির ফোটা হতাম তাহলে চুল থেকে, শরীর থেকে আমি কখনোই নামতাম না। কিন্তু এখন আমার প্রচুন্ড জ্বলুনি হচ্ছে। তোমার চুল বেয়ে এক ফোটা এক ফোটা পানি তোমার ঘাড়ে পড়ছিল। ইশ মনে হচ্ছে এক একটা পানির ফোটা আমি শুষে নিই। আমি পারবোনা তোমাকে না জড়িয়ে থাকতে। হোক পাপ। 
.
ফারান এভাবে বকবক করছিল আর আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না ওর চাপে। কোন রকম বললাম
....... আমি নিশ্বাস নিতে পারছিনা।
ফারান কথা থামিয়ে বলল
...... আমি জানি আমি খুব হট এ্যান্ড হ্যান্ডসাম। তাই নিশ্বাস নিতে পারছনা। অসুবিধা নেই আমি জড়িয়ে ধরছি তোমাকে।
বলে কিরে লোকটা। একে বারে আত্মপ্রশংসা!!
আমি আবার বললাম
........ আমার ব্যথা লাগছে তাই নিশ্বাস নিতে পারছিনা প্লিজ ছাড়ুন।
এবার ফারান ছেড়ে দিল। সাথে সাথে আমি বুক ভরে নিশ্বাস নিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লাম
....... মোহিনী!!
আমি তাকালাম না ওর দিকে। এরপর ফারান বেড়িয়ে গেল রুম থেকে। আর আমি বড় বড় করে নিশ্বাস নিচ্ছি। না এভাবে তো চলতে পারে না। আমাকে যে করে হোক এখান থেকে চলে যেতে হবে।
রাতে ফারান আবার খাবার নিয়ে আসল। এবার আর ওড়না নিয়ে সমস্যা নাই। একটা ওড়না মহিলারা আনছিল কিছু শপিং ব্যাগ ওখান থেকে পাইছি। 
আমি চুপচাপ বিছানাই বসে ছিলাম। ফারান নিজ হাতে খাইয়ে দিতে লাগল। ওর হাতে খেতে আমার অস্বস্তি লাগছিল। তাই বললাম
....... আমি নিজ হাতে খাই!!
........ না
........ প্লিজ!
এবার ও চোখ গরম করে তাকাল। আমি আর কিছু বললাম না। চুপচাপ খেয়ে নিচ্ছিলাম। কি সব খাওয়াচ্ছে নাম জানি না। সব ঝোল জাতীয়। নিশ্চয় সু্প। আমাকে দিচ্ছে তারপর নিজে খাচ্ছে। খাওয়া শেষ হলে দুপুরে আনা সব জিনিস পত্র বের করতে লাগল। তারপর একটা ব্যাগ থেকে গাউন বের করল। গাউন টা খুবই গর্জিয়াছ ভারী কাজের। এত ভারী গাউন কে পড়ে?? আমি হা করে থাকায় থাকলাম। আমাকে তাকায় থাকতে দেখে ফারান বলল
...... কি পছন্দ হয় নি?? না হলে বলো আমি আরো এনে দিচ্ছি।
আর একটা ব্যাগ থেকে বড় নরম তবে ওড়না বের
করে বলল
...... এটা দেখো! এটা পছন্দ হয়ছে??
ওড়নাটা দেখতে বিয়ের ওড়না মত। তাহলে ফারান''''''''''''
...... এগুলো কিসের জন্য??
আমি জিজ্ঞেস করলাম।
...... তুমি জানো না?
আমি মাথা নাড়ালাম। জানি না
....... এগুলো আমাদের বিয়ের জন্য। আর গাউনটা আমি নিজে পছন্দ করেছি তোমার জন্য। কালকে সকালে আমাদের বিয়ে। তুমি তৈরি থেকো।
আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না আমি কি শুনছি। আমি চিৎকার দিয়ে বললাম
...... কি বললেন? বিয়ে!! আমি আপনাকে বিয়ে করবোনা। কখনোই না।
রাগে আমার শরীর কাপছিল। কিন্তু ফারান কে ফুসতে দেখে আমার রাগ চলে গিয়ে ভয় স্থান নিল। এখনো শরীর কাপছিল তবে ভয়ে। ফারান দাতে দাত চেপে বলল
...... কি বললা তুমি??
...... আ আ আমি বিবিয়ে করবওওওনা
...... তুমি বিয়ে করিও না। বিয়ে আমি করব। এখানে সব গহনা আছে। এটা গাউন, এটা ওড়না আর এখানে বাকি সব জিনিস আছে। 
এই বলে চলে যেতে লাগল। আবার পিছন ফিরে বলল
........ তুমি চাও বা না চাও বিয়ে কাল সকালে হবে। তো কাল সকাল পর্যন্ত সময় আছে। নিজেকে মানিয়ে নাও। আমি কোন সমস্যা চাই না। 
এই বলে ফারান গটগট করে চলে গেল। আমি মাথা এলোমেলো হয়ে গেছে। কি করব বুঝতে পারছিনা। চোখ ফেটে কান্না বেড়িয়ে এলো। আমি কোথায় ছিলাম এর এখন কোথায় আছি?? জানি না আব্বু কেমন আছে?? কাল সকালে আমার বিয়ে। ফারান কে বিয়ে করলে আমার জীবন টা তছনছ হয়ে যাবে। এভাবে কান্না করছিলাম। তখন হঠাৎ নজর গেল টেবিলের ওপর কিছু একটা রাখা। উঠে দাড়ালাম। ফারানের ফোন। খাওয়ার সময় এখানে রেখেছিল হয়তো লক করা। আমার মনে আশা জেগে উঠল। আমি তাড়াতাড়ি ফোনটা হাতে নিলাম। কিন্তু আবার হতাশ হতে হল। এটা লক করা। কি হবে পাসওয়ার্ড। ফারান দিলাম, পুরো নাম দিলাম, আরো কয়েকটা নাম দিয়ে দেখলাম। হচ্ছেনা। 
ফোনটাতে পাসওয়ার্ড কি হবে মনে করছিলাম। হঠাৎ একটা নাম মনে পড়ল কাপা কাপা হাতে লিখলাম "মোহিনী" 
আর সাথে সাথেই ফোনের লকটা খুলে গেল। এটা কেন হল না ভেবে রিফাতের ফোনে কল দিলাম। ফোন টা বন্ধ। আব্বুর টাতে কল দিলাম। সেটাও বন্ধ। কি ব্যাপার!! সব ফোন বন্ধ কেন? এবার কি করব?? আর কারো নাম্বার আমার মুখস্ত নেই। আছে!! মারোয়া দের টা। সাথে সাথে কল দিলাম। রিং বাজছে কিন্তু কেউ ধরছেনা। আবার করলাম, এবারও কেউ ধরল না। আর তিন বার করলাম। কিন্তু কেউ ধরল না। এবার শেষ বারের মত করব। প্লীজ কেউতো ধরিও। কল করলাম। রিং বাজছে। শেষে কেউ একজন ফোন ধরল। এটা মারোয়া। আমি কোন বনিতা না করে বললাম
....... মারোয়া তোমার আম্মু কে ফোন দাও।
....... ম্যাম আপনি??
....... মারোয়া যা বলছি তা করো।
........ ম্যাম আম্মুতো নাই।
...... কোথায় তোমার আম্মু? জলদি উনাকে ফোন দাও।
...... ম্যাম আম্মু""""""""
মারোয়া আর কথা বলতে পারল না। কেউ যেন মারোয়া বলে ডাক দিল।
ওই পাশ থেকে শোনা যাচ্ছিল। এটা মামুন। সে মারোয়া কে বকা দিচ্ছিল আমার সাথে কথা বলার জন্য। তারপর ফোন টা কেটে দিল। আমি আবার করলাম। ধরল না। আবারও করলাম। এবার ধরল। ধরেই আমাকে একটা ঝাঝরি মারল
..... কেন ফোন করতেছো? কি চাই??
.... এরকম করে বলবেন না। আমাকে ফারান কাল সকালেই বিয়ে করবে। প্লিজ আন্টি কে একটু করে বলুন। যাতে আমার আব্বু আম্মুকে এই কথা বলে।
......বিয়ে করতে চাচ্ছে ভালো কথা। বিয়ে করে ফেলো। এখানে কেন ফোন করছো?? এত কিছু করার পরও তোমার শান্তি হয় নাই?? ধনী ঘরের ছেলে তোমাকে বিয়ে করছে এটা তোমার সাত জনমের ভাগ্য। না হলে ফারানের ড্রাইভারেরও বউ হওয়ার যোগ্য না তুমি। আর যদি বিয়ে করতে না চাও তাহলে মরে হলেও যাও কিন্তু এখানে আর ফোন করবানা।
ঠাস করে মামুন ফোনটা রেখে দিল। আমি কিছু তেই কান্না থামাতে পারছিলাম না। টলটলিয়ে চোখের পানি সব ঝরে পড়ছিল। মনে হচ্ছে কেউ আমার কলিজাটা ধরে ধুমরে মুচড়ে দিসে। নিঃশব্দে কাদতে পারছিলাম না, হাউমাউ করে আমি কাদতে লাগলাম। কিছুক্ষন পর ফোনটা আবার বাজল। এটা রিফাত। তাড়াতাড়ি চোখ মুছে ফোনটা ধরলাম।
......হ্যালো রিফাত প্লিজ আমাকে বাচা ভাই
.....তুই টেনশন করিস না। এক কাজ কর।
এই বলে রিফাত আমাকে একটা কাজ করতে বলল। তারপর রিফাত ফোন কেটে দিল। আমি ফোনের কল ডিটেইলস সব ডিলিট করে দিলাম। ফোনটা ঠিক যেভাবে ছিল সেভাবে অফ করে রেখে দিলাম।
কিন্তু এই ভেবে আমি অবাক হলাম যে রিফাত এত কিছু কিভাবে জানে। এখন কিছুটা ভালো লাগছিল। কিন্তু কাজটা আমি করবো কিভাবে??
.
(চলবে)

মোহিনীWhere stories live. Discover now