পার্ট - ১১

345 11 0
                                    


আমি আর এক দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো ভাবতে লাগলাম।
মামুন এর সাথে কথা হত না। এখনও তার ব্যতিক্রম না। আমি নিরবে বাইরে তাকিয়ে আছি আর ও একমনে গাড়ি চালাচ্ছে। এরকম কত সময় পার হয়ছে আমি জানি না। মামুন প্রথম কথা বলল
...... বমি আসলে বলিও
....... হুম।
আমি কিছুক্ষন ভেবে আবার বললাম।
...... অামাকে দিয়ে আপনি চলে যাবেন??
...... হ্যা।
...... আচ্ছা।
আমি আর কিছু বললাম না। সিটে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলাম।
যখন চোখ খুললাম সকাল হয়ে এসেছে। তার মানে আমি ঘুমাচ্ছিলাম। কিন্তু মামুন কোথায়? গাড়িতে আমি একা কেন?? দরজা খুলতে চেষ্টা করলাম। হল না। দরজা লক করা। আমি খুব ভেয়ে গেলাম। কোন খারাপ কিছু হয়নি তো?? হঠাৎ কিছু অস্পষ্ট শব্দ কানে এলো পিছন থেকে। পিছনে থাকালাম। দেখলাম মামুন উপুর হয়ে ঘুমাচ্ছে। আর আওয়াজ টা হল তার নাক ডাকার। এজন্য ঘুমানোর আগে দরজা লক করছে। এখন মহা ভাবনায় পড়ে গেলাম। ওকে জাগাবো নাকি জাগাবো না। কাচা ঘুম হলে জাগানো ঠিক না। আর যদি অনেকক্ষণ হয়ে থাকে তো কিভাবে জাগাবো??
মামুনের দিকে তাকিয়ে চিন্তা করছিলাম। তখন ওর প্যান্টের পকেটের দিকে নজর গেল। কিছু একটা বের হয়ে আছে। একটু ভালো করে দেখেই বুঝলাম চাবি। গাড়ির চাবি। টিভি সিনেমায় দেখছি গাড়ি লক হলে চাবি ছাড়া খোলা যায় না। আস্তে আস্তে চাবি নিলাম যাতে ও টের না পায়। এরপর চাবি দিয়ে লক খুলতে যাব। সুন্দর করে লক খুললাম। কিন্তু চাবি লাগল না। চাবি লাগত যদি গাড়ির বাইরে থাকতাম। এখন ভিতরে তাই চাবি ছাড়া লক খুলতে পারলাম। বাইরে বেরিয়ে আগে কোথায় আছি এটা দেখলাম। হাইওয়ের পাশে ছোট খাট ঝোপঝাড় এর মত রয়েছে। ওই ঝোপঝাড় এর আড়ালে মামুন গাড়ি রেখেছে। রাস্তায়ও গাড়ি রাখতে পারত। কারন রাস্তায় এখনো গাড়ি চলাচল শুরু হয়নি। ১/২ ঘন্টা পর শুরু হবে। আশে পাশে হেটে দেখলাম। বাথরুম এ যাওয়ার দরকার ছিল। কিন্তু এখানে যাওয়ার কোনো মানে হয়না। কিছুক্ষন হাইওয়েতে হাটলাম। আবার গাড়িতে ফিরে এলাম। না!! মামুন এখনো ঘুমাচ্ছে। আবার হাটতে শুরু করলাম। একটু হাটার পর দেখলাম দুরে একটা টং দোকান খুলছে। আমি তাড়াতাড়ি গাড়িতে গেলাম। ওইখানে পিছনের ডিকিতে ব্যাগ ছিল। টাকা নিলাম। আমার কাছে সবসময় অল্প টাকা থাকত। তা নিয়ে টং দোকানে গিয়ে কিছু পাউরুটি আর কলা নিয়ে আসতে লাগলাম। হঠাৎ মনে হল কেউ ডাকছে। আমি দৌড়ে গেলাম গাড়ির কাছে। আমার সন্দেহ সঠিক হল। মামুন ডাকছিল আমাকে। আমাকে দেখতে পেয়ে সে আসল
...... কোথায় গিয়েছিলে তুমি?(রাগত স্বরে)
....... ওই খানে ওই দোকানে এগুলো নিতে(হাতের পাউরুটি আর কলা দেখিয়ে)
....... রেহনুমা তোমার কি মাথা খারাপ?? একদিন না খেয়ে থাকলে কি হয়?? তুমি না টিচার? না তুমি একটা গাধী টিচার।
এই কথা শুনে আমি শকড হয়ে গেলাম। আসলে এই নামটা আমি নিজেকে নিজে দিয়েছিলাম। তারপরও মামুনের মুখে শুনে মনে হল সত্যি আমি গাধী টিচার।
ও আমাকে বকা দিল অনেক। আমি কিছু বললাম না। চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসলাম। কিছুক্ষন পর সেও বকা দেওয়া বন্ধ করল। 
প্রায় আর এক ঘন্টা পর বাড়িতে পৌছলাম। গাড়ি থেকে নামার আগে মামুন মাফ চাইল তার ব্যবহার এর জন্য। আমি মাফ করে দিলাম।
তারপর ঘরে গিয়ে আম্মুকে জড়িয়ে ধরলাম। আম্মু জিজ্ঞেস করল এত তাড়াতাড়ি কিভাবে আসলাম? আরো এক দিন পর আসার কথা ছিল। আমি কি বলব?? বললাম স্কুল থেকে কল আসছে। জরুরি মিটিং আছে তাই চলে আসছি। তারপর মামুন কে আম্মুই ডেকে নিয়ে আসল।ও এখন ক্লান্ত। খেয়ে দেয়ে বিশ্রাম নিয়ে চলে যাবে। মামুন রাজি হয়নি। আম্মু পীড়াপীড়ি করলে রাজি হল।
এরপর আমি চলে গেলাম অন্য রুমে। মামুনে খেয়ে কিছুক্ষন বিশ্রাম করে চলে গিয়েছিল।
আসলে ওর এখানে থাকার কোন ইচ্ছা ছিলনা। আম্মু জোর করার কারনে কিছুক্ষন ছিল।
আমি এসে গোসল করে স্কুল এ চলে গিয়েছিলাম। ওখানে লেইট দেখে অবাক হয়েছিল। তবে স্কুল প্রধান কিছু বললেন না। কারন সচরাচর আমি স্কুল ফাকি দিই না।
কিন্তু আমি কোনো কাজে মন বসাতে পারছিলাম না। আমার পুর্বের দিনের কথা মনে পড়ে গা শিউরে উঠছিল। কোনো টিউশনিতেও গেলাম না। স্কুল থেকে এসে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। 
ঘুম ভাঙল ফোনের আওয়াজে।মারোয়ার আম্মু স্ক্রিনে নাম দেখে আমি ঘুম থেক ধড়মড়িয়ে উঠলাম। মারোয়ার আম্মুরা চলে আসতেছে। আজকে রাতেই পৌছে যাবে।তো কালকে থেকে আমাকে যেতে বলছে।আমি সায় দিয়ে উঠে পড়লাম। রাতে রিফাত আমাকে পাগল করে দিচ্ছিল বিয়ে কেমন খেলাম? বড়লোকের বিয়ে কেমন হয়?? ইত্যাদি ইত্যাদি।। আমি বললাম
..... কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করিস না। যাতো এখান থেকে!!
..... আপু!!
মুখ ফুলিয়ে তার পড়া পড়তে চলে গেল। আমি বসে বসে পড়ার বই উল্টাচ্ছিলাম। এমন সময় মোবাইলে একটা মেসেজ আসল। আননোন নাম্বার থেকে। আমি ওপেন করলাম না। কারন আননোন নাম্বার থেকে যে সব মেসেজ আসে সেগুলো সিম অফিস থেকে আসে তাই।
খেয়ে দেয়ে রাতে শোয়ার পর ফোন অন করলাম। তখন আরেক মেসেজ আসল আননোন নাম্বার থেকে। ডিলিট করার জন্য জন্য ওপেন করলাম। ওপেন করে চোখ চড়ক গাছ হয়ে গেল। মেসেজ টা ছিল ঠিক এই রকম
( যত দূরে যাও, জানি না ফুরাবে, জেনে রেখো শুধু, ফের দেখা হবে।
Faran loves mohini forever ever and ever) 
তাড়াতাড়ি প্রথম মেসেজটা ওপেন করলাম। প্রথম মেসেজটা ছিল
( কি ভেবেছো তুমি?? আমার কাছ থেকে পালাতে পারবে?? মনে রেখো তুমি আমার মোহিনী। আর শুধু আমারই রবে!!
Faran loves mohini forever ever and ever)
আমার গলা শুকিয়ে গেল। হাত পা সব কাপতে লাগল। এই বর্ষায়ও আমি কুল কুল করে ঘামতে লাগলাম। কোনো রকম কাপতে কাপতে নাম্বার টা ব্লক করে দিয়ে ঘুমাতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু ভয়ে আমার ঘুম আসছিলনা। আমার এখন কি করা উচিত?? আব্বু আম্মু কে বলা উচিত? ওরা কি ভাববে আমার সম্পর্কে?? নাহ! আর চিন্তা করতে পারছিনা। কাল দেখা যাবে কি করব। এই ভেবে আয়াতুল কুরসি পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে স্কুলে চলে গেলাম। স্কুলে সময় দেখার জন্য মোবাইল বের করে দেখি তিনটা মেসেজ আসছে। তবে ভিন্ন ভিন্ন নাম্বার থেকে। একটা একটা ওপেন করলাম। সব সিম অফিস থেকে। একটা স্বস্তির সুক্ষ নিশ্বাস বুক থেকে বেরিয়ে গেল। খামোকাই ভয় পাচ্ছিলাম। নাম্বার ব্লক তো মেসেজ করবে কোথ থেকে। এই ভেবে মোবাইল অফ করতে যাবো ঠিক তখন আরেকটা মেসেজ সামনে আসল। ওপেন করতেই বুক দুরু দুরু করতে লাগল। কারন এটা ফারান থেকে আসছে। মেসেজটা ঠিক এইরকম। 
( How dare you?? তোমার সাহস কিভাবে হল আমাকে ব্লক করার?? এরকম করে তুমি আমার কাছ থেকে দুরে যেতে পারবেনা। কখনোই না। কেননা আমি তোমাকে ভালোবাসি।
Faran loves mohini forever ever and ever)
এইবার এই মেসেজটা পেয়ে নিজেকে সংযত করতে পারলাম না। আচাড় মেরে মোবাইল টা ভেঙে ফেললাম। সাথে সাথে আমার মাথা দুলে উঠল। চারদিকে অন্ধকার দেখা শুরু করলাম। এরপর কি হল তা আমার আর মনে নেই।
.
(চলবে)

মোহিনীTempat cerita menjadi hidup. Temukan sekarang