পার্ট - ১৬

318 11 0
                                    


.
.গাড়ির ঝাকুনি খেয়ে চোখ খুললাম। কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম জানি না। তবে বাইরে সূর্য টা একটু একটু উকি মারছিল। দেখলাম আমি এখনো চলন্ত গাড়িতে। সিট থেকে মাথা তুললাম না। মাথা রেখেই দেখলাম ফারান এখনো গাড়ি চালাচ্ছে। তবে অনেক বিধ্বস্ত মনে হচ্ছে। আমি তাকানোই ফারান আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসতে চেষ্টা করছিল। কিন্তু আমার হাসি আসছিল না। মুখ ঘুরিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকলাম। মনে হল মফস্বল কোথাও চলে আসছি। গাছগাছালি তে ভরা আবার পাকা সুদৃশ্য দালান দেখা যাচ্ছে। কিছুক্ষন পর গাড়িটি একটা গেইটের সামনে থামল। হর্ন বাজাতেই ভেতর থেকে দারোয়ান টাইপের লোক বেড়িয়ে এলো। ফারান কে দেখতেই সালাম দিয়ে গেইট খুলে দিলো। মনে হল আগের পরিচিত। আমি তারপরও সিট থেকে মাথা তুললাম না। গাড়ি টা ভিতরে ঢুকাতেই দেখলাম এটা একটা বাংলো। আমি কোন জায়গায় আছি এই মুহুর্তে তা জানিনা ঠিক করে। অনুমান ও করতে পারছিলাম না।গাড়ি থেকে নেমে ফারান আমার পাশের দরজা খুলে দিল। আমি চমকে উঠলাম। কারন সে আমাকে ব্রাইডাল স্টাইলে কোলে নিল। আমার প্রচুন্ড ঘৃনা হচ্ছিল। তাড়াতাড়ি চিৎকার দিয়ে বলে উঠলাম।
...... কি করছেন আপনি?? ছাড়ুন আমাকে!! আমি কোথাও যাবনা আপনার সাথে।
ফারান উত্তরে শুধু বলল
..... শসসসসহ
সে আমাকে চুপ করতে বলছিল। কিন্তু আমি চুপ করছিলাম না। আমার চিৎকারে দারোয়ান আমাদের দিকে অবাক চোখে তাকাল। ফারান কি যেন ইশারা করল দারোয়ান তা দেখে তাড়াতাড়ি গেইট বন্ধ করে দিল।।
আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছিলাম। আর আমার ঝাপটানো দেখে ফারান আরো শক্ত বুকের সাথে চেপে রাখছিল। 
এরপর ফারান একটা রুমের সামনে এসে দাড়াল। আমার বুক ধকধক করতে লাগল। না জানি রুমে নিয়ে কি করবে? এর উপর ভরসা করতে পারিনা। রুমে ঢোকার আগে আমাকে কিছু একটা করতে হবে। আমি মরিয়া হয়ে উঠলাম। কিন্তু কিছুই করতে পারছিলাম না।
ফারান দরজা খুলল লাথি মেরে। বিকট শব্দে দরজা খুলে গেল। আমি কান্না শুরু করে দিলাম। ও আমাকে বিছানায় বসিয়ে দিল। আর আমি উঠে গেলাম। সাথে সাথে ফারান আমার হাত ধরে ফেলল। কান্না জড়িত কন্ঠে আমি বললাম
...... আ আ মিই চ চ চলে যাব। 
...... কোথায় যাবা??
গম্ভির কন্ঠে বলল ফারান।
...... আমার আব্বুর কাছে যাব।
....... সম্ভব না। এখন থেকে এখানে থাকবা। এটাই তোমার ঘর।
এই কথা বললে আমি রাগে দুঃখে ফারানকে ধাক্কা দিলাম। ফারান টাল সামলাতে পারল না। কেননা এই মুহুর্তে সেও শারীরিক ভাবে দুর্বল ছিল। ফারান মেঝেতে পড়ে গেল। আমি দরজার দিকে দৌড়ালাম। সাথে 
সাথে ফারান হুংকার ছাড়ল। কিন্তু আমি পরোয়া না করে প্রাণপনে দৌড়াতে লাগলাম। বাড়ির বাইরে বেরুতে যাব দেখলাম ও খানে দারোয়ান বসে আছে। গেইট বন্ধ। আমি আবার ভেতরে দৌড়াতে লাগলাম। কিন্তু ফারানের ডাক শুনতে পেলাম
...... মোহিনী চলে আস বলতেছি। ভালো হবে না। মোহিনী!!!!
আমি ফারানের কথা না শুনে আপাতত লুকানো যাই এমন জায়গা খুজছিলাম। বাংলো হলেও ঘরটা বেশ বড়। আমি দৌড়াতে দৌড়াতে একটা রুমে ঢুকলাম। পেছনে ফারানের গর্জন শোনা গেল। সাথে সাথে আমার বুক কেপে উঠল ভয়ে। আমি দরজা বন্ধ করে দিলাম। দরজার সাথে পিঠ লাগিয়ে হাপাতে লাগলাম। ফারান নিশ্চই খুব কাছে চলে আসছে। কেননা ওর আওয়াজ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম। ও আমাকে ডাকছিলো। এরপর আমি সামনে তাকালাম। এই রুমের ভিতর আরেকটা ছোট রুম। রুমটাই মনে হল আমার স্টোর রুম। পুরানো বাতিল জিনিস সব এখানে ভর্তি। তাড়াতাড়ি ছোট রুমটাতে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম। এই রুমটা গুমোট অন্ধকার আর সাথে ভ্যাপসা গন্ধ। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল আমার এখানে। আমি চুপচাপ ভাঙা একটা চেয়ারের পাশে হাটু মুড়ে বসে রই লাম। আমার আব্বু আম্মু আর রিফাত কে খুব মনে পড়তে লাগল। আমি নিঃশব্দে কান্না করতে লাগলাম। পাছে কান্নার আওয়াজ শুনে ফারান এসে যাই তাই মুখের উপর হাত দিয়ে চেপে রাখলাম। কিন্তু চোখের পানি বাধ মানছিলনা। হঠাৎ ধড়াম করে দরজা খোলার আওয়াজ পেলাম। কিভাবে খুলল?? আমি তো ওটা বন্ধ করেছিলাম ভেতর থেকে। ভয়ে আমি আরো জোরে মুখ চেপে রাখলাম। যতটা সম্ভব আওয়াজ না করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু আমার হৃদপিন্ডের আওয়াজ টাকে চুপ করাতে পারলাম না। ওটা অত্যন্ত বড় আওয়াজে বাজতে লাগল। 
...... মোহিনী!!!
ফারান আবার ডাকল। এবার সে ছোট রুমটার সামনে দাড়িয়ে। করাঘাত করতে লাগল। 
...... মোহিনী দরজা খুলো। 
এভাবে কিছুক্ষন করাঘাত করার পর ফারানের পায়ের আওয়াজ পাচ্ছিলাম। সে অন্যদিকে যাচ্ছে। আমি পায়ের আওয়াজ অন্যদিকে যাওয়ায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। পাশে ভাঙা চেয়ারে ভর দিয়ে দিলাম। কিন্তু ধরাম করে আমি চেয়ার সহ পড়ে গেলাম। ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলাম। চেয়ার টির পায়া ভাঙা ছিল তাই পড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ফারান দৌড়ে এসে দরজা টা লাথি দিয়ে ভেঙে ফেলল। আমি তাড়াতাড়ি চিৎকার দিয়ে পিছু হটতে চাইছিলাম কিন্তু পারছিলাম না। কারন আমার পেছনে দেয়াল ছিল। ফারান ফোস ফোস শব্দে আমাকে দাড় কাধে তুলে নিল। আমি আপ্রান চেষ্টা করছিলাম ওই রুমে না যাওয়ার জন্য। কিন্তু ফারান আমাকে নিয়ে যাচ্ছিল। এর পর রুমে ঢুকে প্রথমে সে দরজা বন্ধ করে দিল আমাকে কাধে রেখেই। তারপর ফারান আমাকে বিছানাই ছুড়ে মারল। আমার দিকে দাত কিড়মিড় করতে করতে এগিয়ে আসতে লাগল সে। আমি ভয়ে তাড়াতাড়ি উঠে গেলাম। 
...... আ আমআর কা কা ছে আসবানা। আ আমি বলে দিলাম।
আমি পিছু হটতে লাগলাম। কোথায় যাব দরজা তো বন্ধ। ফারানের চোখ দুটো লাল হয়ে আছে নির্ঘুম রাতের জন্য। খুবই ভয়ঙ্কর লাগছিল ওই লাল চোখ দুটোর জন্য। ফারানের এই লাল চোখ দেখলে আমার হাটু কাপতে থাকে। পিছু হটতে হটতে পিঠে শক্ত কিছু লাগল। আমি চমকে উঠলাম। পিছনে ফিরে দেখলাম এটা দেওয়াল। দেওয়ালে আমার পিঠ ঠেকে গেছে। আমি কি করব এখন ? 
...... বলছি না কাছে না আসতে। আসতেছেন কেন?
...... আমি আসবনা তো কে আসবে? মামুন?? ও আর কখনো তোমার কাছে আসতে পারবেনা। আমি ছাড়া আর কেউই আসতে পারবেনা। 
ফারান একদম কাছে চলে আসছিল। এমনকি আমি যদি হাত দিয়ে ওর বুকে চেপে বাধা না দিতাম তাহলে ও আরো কাছে চলে আসত। আমি কি করব বুঝতে পারছিলাম না। ওর বুকের হৃদপিন্ডের শব্দ পর্যন্ত আমি শুনতে পাচ্ছিলাম। ফারান তার দু হাত আমার দু পাশে রেখে আমার ঘাড়ের দিকে মাথা এগিয়ে নিতে লাগল। তখন আমি খুব অসহায় বোধ করলাম। চারদিকে অন্ধকার দেখা শুরু করলাম। ফারান ততক্ষণে আমাকে শুকতে লাগল। সাথে সাথেই আমার চারদিকের দুনিয়াটা ঘুরতে লাগল। আমি ধপাস করে ফারানের বুকে ঢলে পড়লাম। এরপর আমার আর কিছু মনে নেই।
.
যখন চোখ খুললাম নিজেকে অপরিচিত জায়গায় আবিষ্কার করলাম। প্রথম কয়েক সেকেন্ড কিছু মনে করতে পারলাম না। পরে সব মনে পড়তেই ধীরে ধীরে উঠে বসলাম। আমি খুব সুন্দর একটা বেডে এতক্ষন শুয়ে ছিলাম। ফারান কে কোথাও দেখতে পেলাম না। আমাকে এখান থেকে পালাতে হবে। আমি মনে মনে ভাবলাম। বিছানা থেকে নামতেই মাথাটা আবার ঘুরে উঠল। আমি এখনো উপোস। খিদায় পেট চো চো করছে। বিছানা থেকে নামলাম। দরজা খোলার চেষ্টা করলাম। কিন্তু দরজা বাইরে থেকে বন্ধ। মানে ফারান আমাকে এখানে আটকে গেছে। আমাকে পালাতে হবে। জানালা, বাথরুম সব চেক করলাম। নাহ! ফারান কোন দিকে পালানোর পথ রাখলোনা। হাল ছেড়ে দিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লাম। কি করব আমি এখন?? আব্বু কেমন আছে কে জানে?? ঠিক তখনি বাইরে কারো পায়ের আওয়াজ পেলাম। আমি তাড়াতাড়ি বিছনাই উঠে কাথা গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম। চোখ বন্ধ করে রইলাম। আমার বুকের ধক ধক শব্দ পাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছে কেউ প্রচুন্ড জোরে আমার ভিতরে হাতুড়ি দিয়ে পিঠাচ্ছে। দরজা খোলার আওয়াজ পেলাম। টেবিলে মনে হয় কিছু রাখল। তারপর ধীরে ধীরে আমার পাশে এসে বিছানায় বসল। আমার কাধে হাত রেখে মুখটা কানের কাছে নিয়ে আসল। তারপর বলল
...... আমি জানি তুমি জেগে আছ মোহিনী। আমার সাথে চালাকি না করে উঠো এখান থেকে।
ফারান আরেকবার ডাকল। কিন্তু আমি চোখ জোর করে বন্ধ করে রাখলাম। ফারান আবার বলল
..... তুমি উঠবেনা!! ঠিক আছে। তাহলে আমাদের বাসর এখনি হবে। এই বলে ফারান উঠে দাড়াল আর আর বোতাম খুলতে লাগল। আর আমি শার্ট খোলার আওয়াজ পেয়ে তাড়াতাড়ি উঠে বললাম
....... এইত আমি উ উঠে এ গেসি।।। উঠা তো কোন ব্যাপারি র না।
নার্ভাস ভাবে বললাম।
ফারানের ঠোটের এক কোনে হাসির আভাস ফুটল। এধরনের হাসি খুবই মারাত্মক। এই হাসিটাকে কখনো বিশ্বাস করা যায় না। আর তাছাড়া অনেকটা ফ্রেশ লাগল ফারান কে। নিশ্চই গোসল করেছে।
ফারান টেবিল থেকে প্লেট নিল। প্লেট নিয়ে আমার পাশে বসল। তারপর নিজেই খাইয়ে দিতে চাইল। আমি মুখ ফিরিয়ে নিলাম। ফারান বাম হাত আমার চিবুক ধরে মুখ ফেরাল। তারপর আবার দিতে চাইল। কিন্তু আমি মুখ খুললাম না। মুখ না খোলায় সে আমার চিবুক ধরে তার মুখের কাছে নিয়ে গেল। প্রথমেে বুঝলাম না যে ফারান আমার চিবুক ধরে তার মুখের কাছে কি করতে চাচ্ছিল। পরে ওর ঠোট হা করতে দেখে বুঝতে পেরে হালকা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে তাড়াতাড়ি বললাম
...... এইতো খাচ্ছি।।। এবার খাইয়ে দেন।
এবারও সে শয়তানি হাসির আভাস। আমি কোন আওয়াজ করলাম না। চুপচাপ খেয়ে নিলাম। আমার খিদাও প্রচুন্ড ছিল। আর ফারান আমি যেন ভিন গ্রহের প্রাণী ঠিক সেভাবে দেখতে লাগল।
খাওয়া শেষ হলে ফারান প্লেট নিয়ে চলে গেল। কিন্তু কিছুক্ষন পর আবার চলে আসল। এসে আলমারি থেকে কিছু কাপড় বের করল। এটা অফ হোয়াইট রঙের গাউন। আমার হাতে দিয়ে বলল
....... যাও বাথরুমে গিয়ে গোসল করে এসো। আর শোনো উল্টা পাল্টা কিছু করার চেষ্টা করবানা। করলে বুঝোই তো কি হবে?? আমাদের এক হতে সময় লাগবেনা।
শেষের লাইনটা অনেকটা ফিসফিসিয়ে বলল। এর পর চলে যাচ্ছিল। আমি ওর যাওয়ার দিকে চোখ রাখছিলাম। কিন্তু সে আবার কি মনে করে ফিরে আসল। আমার কাছাকাছি এসে আমার কপালের চুলগুলো কানে গুজে দিয়ে ফিস ফিস করে বলতে লাগল
....... একটু কালির ফোটা লাগায় দিয়ো কানের পেছনে। যাতে আমার নজর না লাগে। 
এ কথা বলায় আমি ফারানের চোখের দিকে তাকালাম। সে আবার বলল
....... আমার নজর তো তোমার উপর পড়েই গিয়েছে। কালির ফোটাও আমার নজর ফেরাতে পারবেনা। তুমি যে আমার মোহিনী!!
এই বলে ফারান আমার কপালে নিজের ঠোট দিয়ে একটু খানি স্পর্শ করে চলে গেল। আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম। এটা কি হল?? 
.
(চলবে)

মোহিনীWhere stories live. Discover now