পর্ব ১

3.4K 81 5
                                    




অামি একবার ভাবলাম, পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাই; পরে ভাবলাম; না থাক! ও মুখ দেখে তো অামার এমনিতেই মন পুড়ে গেছে কতকাল অাগে ; এখন অাবার কেনো?

ইলাই প্রথম কথা বলল,
------অভিকের পাপার সাথে কথা হয়েছে তোমার? তুমি হুট করে দেখা করতে এলে যে? অামি ভাবলাম, প্রেম উথলে উঠলো কিনা অাবার! সব বুঝি বলে দিতে এসেছো!!
অামি চুপ করেই থাকলাম।
------বাব্বা, তুমি তো পুরোই মাত করে দিয়েছো দেখছি। টপ হিরো একদম! এবার নাকি ন্যাশনাল এওয়ার্ড ও পাচ্ছো!! অাচ্ছা, এখন নাকি তুমি অনেক বদরাগীও; মিনমিনে বিড়াল থেকে বাঘ।৪টা বডিগার্ড নিয়ে ঘুরছো।অামার বাসায় যখন অাসবে বললে, অভিকের পাপা বললো, প্রেস অাসতে পারে; সেঁজেগুজে থেকো।ইলা হেসেই যাচ্ছে।
অামি প্রসঙ্গ পাল্টালাম।
-----তোর ছেলে কোন ক্লাসে?
-----সেকেন্ড স্ট্যান্ডার্ডে উঠবে এই জানুয়ারিতে।
-------বাহ্! তোর ছেলে কিন্ত তোর মুখটাই পেয়েছে।তোর জামাই এখন কেমন??
------পুরোপুরি সুস্থ! বুঝাই যায় না, ছ-মাস অাগেও ও অসুস্থ ছিলো।এখন তো বিজনেসও খুব রমরমা।অামি তো মাঝে মাঝে বলি, এত টাকা দিয়ে অামরা কি করবো??অভিক তো একাই।এত টাকা এই এক ছেলে তো দুবার জন্মালেও শেষ করতে পারবে না।
------অামাকে দিয়ে দে না! অামার তো টাকা নেই!
------উঁহু! ঢং! তোমার তো বিয়েই হলো না।এই যে মুভি টুভি করে টাকার পাহাড় বানালে, তা খাবে কে? বিয়েটা করছো না কেনো?
-----বৌ'ই পাচ্ছি না।পছন্দ করার মত মেয়ে কি এখন অাছে রে??তোর সৌন্দর্যের ছিঁটাফোটাও নেই তো।
ইলা শব্দ করে হাসলো,
------সান্তনা দিচ্ছো! না সুখী করছো!!সারাক্ষণ সুন্দরী সুন্দরী নায়িকা কোলে করে শূটিং করছো।সারাবছর লাইম লাইটে থাকছো।যার বাসই গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডে তাঁর কিনা সুন্দরী খুঁজে পাই না।
-----তোরা দেশে থাকবি কতদিন??
-----মাস দেড়েক অাছি।বাব্বা, সিগারেটও ধরেছো?তারপরও ঠোট এত সুন্দর!
-----দেশে অাচমকা যে....?অাবার বেবি এসপেক্ট করছিস নাকি?
------কি করে বুঝলে?
------লেবু পাতা কচলাচ্ছিস দেখে অান্দাজে ঢিল ছুড়লাম।

অামার ফোন এলো, ম্যানেজার এসে তাড়া দিতে থাকলো।
------স্যার বিকেল চারটায় প্রেস চলে অাসবে।পোস্টার লঞ্চের ব্যাপার, অাপনি না থাকলে....
------ক্যানসেল করো, যেভাবে মিথ্যা বলতে হয়, বলো! যেভাবে পারো স্কিপ করো।
ম্যানেজার বিরক্ত ভঙ্গিতে চলে গেলো!
ইলা একটু চাঁপা গলায় বলল,
-----তুমি কি ভালো অাছো রওনক ভাই??
অামি সোফা থেকে নেমে নিচে বসলাম,
-----ফ্লোরে কেনো বসছো? হায় হায়, উঠো উঠো, এত বড় ফিল্মস্টার ফ্লোরে বসে অাছে, একটা ছবি যদি কেউ লিক করে দেয়! সর্বনাশ!
-------ইলা সেদিন তুই যদি সাহস করে চলে অাসতি! কেনো এলি না?
ইলা দীর্ঘশ্বাস ফেললো,
------ তোমার মা'কে অামার অাজীবন ভয় ছিলো।কি ভীষণ জেদী উনি; শেষ অবধি যদি উনি সত্যিই তোমাকে বলা কথাটা সত্যি করে দেয়!!তোমার বাবা-কে তো তুমি দেখোওনি, অার মা'কে যদি হারাও।অামি তো তুচ্ছ একটা মেয়ে! অালাদা একটা মানুষের শরীর মাত্র।অার তোমার মা, তিনি তো তোমার অস্তিত্ব .....
অামি টিশার্টের হাতায় চোখ মুছলাম।অামার ম্যানেজার পাশে টিস্যু বক্স ধরে অাছে।ইলা ওখান থেকে টিস্যূ নিয়ে অামার হাতে দিলো।
-----প্লিজ তুমি যাও! যাও তো রওনক ভাই।যাও....
বলতে বলতে ইলা সজোরে কেঁদে ফেললো।
ও'র স্বামী, ও'র ছেলে দৌড়ে এলো।অামি উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম। ইলার স্বামী ইলার কান্নায় অস্থির হয়ে পড়লো,
------ইলু ইলু কি হলো তোমার??
ইলা জোড়ে জোড়ে শ্বাস ফেলতে ফেলতে বলল,
------অামায় রুমে দিয়ে অাসো অভিকের পাপা।অামার বাম-পা টা অাবার ব্যাথা করছে।
ইলার স্বামী অামার দিকে ক্ষমাপ্রার্থনার ভঙ্গিতে তাঁকালেন।যেনো এত বড় ফিল্মস্টারের সামনে তাঁর বৌ কেঁদে ফেলে ফাঁসির অপরাধ করে ফেলেছে!
অামি জোড় করে হাসার চেষ্টা করলাম।
-----ইলার দেখছি, বাম পায়ের ব্যাথা রয়ে গেছে......

অামি গাড়ির দিকে যেতে যেতে ম্যানেজারকে বললাম,
------মিটিং টা অাবার রি-স্ট্যান্ড করাও।বলে দাও ঠিক ৪টায়'ই পোস্টার লঞ্চ হবে।অামি থাকবো।
গাড়িতে বসে অামি অাবার সিগারেট ধরালাম।ম্যানেজার বিনীত ভঙ্গিতে বলল,
------স্যার এটা কিন্তু ৪নাম্বার হয়ে যাচ্ছে। প্লিজজজজ ফেলে দিন।
অামি হু হু করে কেঁদে ফেললাম।

ইলা...
অামার জীবনের সবথেকে লুকানো গল্পের নাম।অামার ছোট ফুফুর মেয়ে...
(চলবে)

নিনীকাWhere stories live. Discover now