পর্ব ৭

1.3K 45 1
                                    



ইলা সকাল থেকে মিনিমাম ১০বার রওনককে ফোন করেছে।ফোন ধরছে সোহেল, ধরেই বলছে, স্যার শট দিচ্ছেন! অাপনি ২০মিনিট পরে করুন।২০মিনিট করে করে দুপুর হয়ে গেলো।
অবশেষে রওনককে পাওয়া গেলো, তিনটার দিকে,
------উফ! রওনক ভাই, তোমাকে তো পাওয়াই যাচ্ছে না। কত জরুরী কথা অাছে জানো?
মামী কিছু বলেছে?
-----বলেছে, সোহেলকে।জরুরী কথাটা বলতে তোর কেমন সময় লাগবে? ১০মিনিটে হবে? এর বেশি লাগলে অামি রাতে ফোন দিই?
------না, না রওনক ভাই এখনি দরকার! অার ৫মিনিট বাড়িয়ে দাও।বলে ফেলছি।
-----দিলাম, বলে ফ্যাল!
------অামি অার মামী মিলে একটা মেয়ে অাপাতত ফাইনাল করেছি; তোমার জন্য।মেয়েটা ডাক্তারি পড়া শেষ করেছে।ফ্যামিলি বেকগ্রাউন্ডও চমৎকার।তাঁর বাবা ড.অাশিকুল হক চৌধুরী, সমন্বয় ও সংস্কার বিভাগে সচিব।মা হাউজওয়াইফ। একমাত্র মেয়ে।নাম নিনীকা! অাত্মীয় স্বজনরা বেশ ভালো ভালো পর্যায়ে অাছেন, তোমার স্ট্যাটাসের সাথে....
-------অামাকে বলছিস কেনো? মা'কে বল! তোরা হ্যান্ডেল কর!
------প্রাইমারি দেখা শেষ মোটামোটি। তোমার মা অসুস্থতার অজুহাতে দেখেও এসেছেন।তাঁরও পছন্দ হয়েছে।এই দেখতে যাওয়ায়ই তো পেপারে কি অাজেবাজে নিউজ বের হলো!!
------ওহ্।পাত্রী তোরা ক্লিনিকেই দেখলি?
-------কি করবো বলো? তোমার বিয়ে বলে কথা! টের পেলে মিডিয়া তো ছাড়বে না।কত প্লান ফ্লান করে দেখতে হলো জানো? তুমি কি একবার মিট করবে তাঁর সাথে?
-------তোর ভালো লেগেছে ইলা???
ইলা একটু চুপ করে থাকলো, কান্না চেপে নিয়ে বলল,
------একটা গল্প শুনবে রওনক ভাই?
------তুই কিন্তু অামার কথার জবাব দিসনি?
-------গল্পটা শুনোই না,রওনক ভাই!
-------ইলা বিয়ের গল্প হলে তুই মা'কে শোনা।
------গল্পটা অামার, রওনক ভাই...অভিক যখন দেড় বছরের, ও'র পাপার বিজনেসটা হুট করে মার খেলো।ব্যালেন্স জিরোতে অার ধার ১০০তে।কাম্পানি টোটাল ফল করে গেলো। অভাবে, কষ্টে অভিকের পাপা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললেন।বাধ্য হয়ে তল্পিতল্পা গুটিয়ে অামরা দেশে চলে এলাম।এক ছেলে অার মাথা পাগল স্বামী নিয়ে অামার জীবন যায় অবস্থা।সব গয়নাগাটি বিক্রি করে শেষ। প্রায় রাতেই অামি জেগে বসে থাকতাম,অাগামী দিন কিভাবে চালাবো সেই চিন্তায়।অামার এইরকম অবস্থায় অাত্মীয় স্বজনরা দয়া মায়ায় উথলে উঠে দেখতে যেতেন।অাসার অাগে দু-চার-পাঁচশ টাকা হাতে গুঁজে দিয়ে অাসতেন।সেই টাকা অামি কাতর ভংগিতে হাত পেতে নিতাম। সেই সুবাদে একদিন তোমার মা"ও গেলেন।
------অামার শট রেডী ইলা।রাখছি...
ইলা রওনকের কথা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে বলে যেতে থাকলো।
------তোমার মা যখন গেলেন, তখন বিকেলবেলা।অাগের রাতের বাসি শিম তরকারি দিয়ে অামি ভাত খেতে বসেছি।তাঁকে দেখে অামি ভাতের প্লেটটা লুকিয়ে ফেললাম। তিনি নির্বিকারভাবে সেটা দেখেও না দেখার ভান করলেন।অামায় কোনো স্বান্তনাও দিলেন না। অামার খুব রাগ হলো! সেসময় তোমার একটা ছবি কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করছে।তোমাদের টাকার অভাব নেই। অথচ তিনি অাসবার সময় ১০টা টাকাও অামায় সাধলেন না।এর এক সপ্তাহ পড়েই একটা মজার ঘটনা ঘটলো জানো? অভিকের পাপার ওখানের এক কলিগ ফোন করে বললো, অভিকের পাপা নাকি ও'র কাম্পানির একটা পলিসি করেছিলো।সেটা ম্যাচিউরড হয়েছে।সেখান থেকে অভিকের পাপাকে ফাইভ মিলিয়ন ডলার দেয়া হবে।অামি বা অভিকের পাপা কেউ কিন্তু এরকম কোনো পলিসির কথা মনে করতে পারলাম না। কিন্তু টাকাটা অামাদের তখন এতই দরকার ছিলো যে, অামরা নিয়ে নিলাম। টাকা পেয়ে ও'র কাম্পানি দাড়িয়ে গেলো, ও নিজেও মানসিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলো! অামার স্বামী সন্তান ফিরে পেলো অাগের জীবন.....
------ইলা, তুই কিন্তু অাজেবাজে বকে অামার সময় নষ্ট করছিস! অামার শট অাছে...
------জানি রওনক ভাই, তোমার সময়ের অনেক দাম। তবু কথাটা তো শুনবে।তোমার মনে অাছে রওনক ভাই, অামার পা থেকে একবার জুতো খুলে পড়ে যাওয়ায়, তুমি অামায় বকেছিলে, অামি সামান্য একটা জুতো সামলাতে পারিনা, তোমায় কিভাবে সামলাবো সারাজীবন? সেদিন তুমি অামায় নতুন জুতো কিনে দিয়েছিলে।অামার সংসার যখন ভেসে যাচ্ছিলো, অাবার তুমিই হাল ধরলে।ইন্সুরেন্স কাম্পানির নাম করে তুমিই যে টাকাটা দিয়েছিলে তা অামি জানি!
------ অামি কোনো টাকা ফাঁকা দেইনি ইলা।ঢপ ছুড়বি না।
------রওনক ভাই, তুমি সেদিন অামার সম্মান বাঁচিয়ে দিতে, সংসার বাঁচিয়ে দিতে,
কি লুকিয়েই না কাজটা করেছিলে।তুমি বার বার অামার পাশে দাঁড়িয়েছো, অামায় শক্ত হাতে সামলেছো।অার সাহায্যটা এমনভাবে করেছো যাতে অামার অাত্মসম্মানে একটুও অাঘাত না লাগে! একটু দম নিলো ইলা,

নিনীকাWhere stories live. Discover now