পর্ব ১৫ এবং ১৬

1.4K 44 1
                                    




সেদিন রাতের পর, নিনীকা লজ্জায় অার রওনককে ফোন করেনি। কি দরকার ছিলো অমন করে অত কিছু অাশা করার?
রওনক কি ভাবলো?
খারাপ মেয়ে ভেবেছে কি নিনীকাকে?;
এর মাঝে রওনক ফোন করলেও নিনীকা ধরেনি! অন্যরকম অাড়ষ্টতা তাঁকে ঘিরে ধরেছিলো!

তাঁর দুদিন পর অবশ্য একদিন পাপার স্টাডিতে গিয়েছিলো, রাত্তিরবেলা! পাপা কি সব পেপারস চেক করতে ব্যস্ত! নিনীকা দেখেই বললেন,
-------গুড তোমাকে পাওয়া গেলো মামণি।একটা কড়া করে চা দাওতো অামাকে!!
-------পাপা চিনি বাড়িয়ে দিই।ব্রেন এনার্জি পাবে...
-------ডাক্তারে কথা তো শুনতেই হয়। দেও.....
নিনীকা চায়ের জন্য বের হয়ে যাচ্ছিলো, পাপা অাবার পিছু ডাকলেন,
--------তোমাকে এত পিচ্চি দেখাচ্ছে কেনো? অালাদা কিছু করেছো?
--------স্কার্ট পরে অাছি পাপা......

নিনীকা,
চা নিয়ে এসে দেখে পাপা চোখ বন্ধ করে অাছেন। চা টেবিলে রাখতেই বললেন,
-------যে জিনিস অামাদের খুব পছন্দের হয়, তার উপর অন্যের অধিকার, প্রভাব অামরা একদম সহ্য করতে পারি না? তাই না নিনী?
-------- এরকমই তো।তবে
মা"য়ের দিক ছাড়া সবারটা এক পাপা!
--------অথচ লজিক্যালি দেখলে কিন্তু তোমার মা"ই ঠিক। পছন্দের জিনিসটা যদি অন্যের প্রভাবে থাকলে, সুরক্ষিত থাকে, তাহলে সেভাবেই রাখা উচিত! তোমার মায়ের কঠিন সিদ্ধান্ত কিন্তু অামাদের জীবনকে অানন্দময় করে তুলেছে এখন।
--------এটার সুন্দর অারেকটা নাম অাছে পাপা, শুদ্ধতম ভালোবাসা বলে একে....
------এই শুদ্ধতম ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে তোমার মা নিজেকে অসংখ্যবার ছোট করেছে নিকৃষ্ট কীটের কাছে। ওখানেই অামার যত রাগ নিনী!!
-------প্রথমটা করেছে তোমার জন্য অার পরেরটা অামার জন্য করেছে পাপা.....ভেবেছে অামার যদি কোনো অনাদর হয়, কষ্ট হয়.....
--------এত কিছু বুঝেও কেনো তুমি এখন নিজের পছন্দটাকে ছাড়তে চাচ্ছো মামণি? তোমার পরে কেউ এসে যদি তাঁকে অনাদর করে বেশি!!!???
নিনীকা অবাক হলো, খুব অবাক হলো!! পাপা কিভাবে বুঝলো, সে দোটানায় অাছে??
------ তোমার মায়ের ভালোবাসার গল্পটা ছাড়াও কিন্তু অামাদের পরিবারে অারেকজন মানুষের চমৎকার ভালোবাসার একটা গল্প অাছে!!
নিনীকা পাপার কাছে বসলো, হাতটা কোলে নিয়ে বলল,
-------তুমি কিভাবে সব জেনে যাও পাপা???
পাপা মৃদু হাসলেন,
--------অাগে তো গল্পটা শুনবে! গল্পটা তোমার দাদীমা'র! বাবা যখন মা'কে বিয়ে করেন, তখন মায়েদের দিকের সবাইকে বাবার প্রথম বিয়ের ব্যাপারটা লুকানো হলো।মায়েদের বনেদী ঘর!দ্বিতীয়া শুনলে মা'কে বিয়েই দিবে না হয়তো! এমনকি বিয়ের চারমাস কেটে গেলেও বাবা মাকে নিজ থেকে বললেনও না। মা" লোকমুখে শুনলেন ব্যাপারটা,জানলেন বাবার অাগের স্ত্রী ২সন্তান রেখে মারা গেছেন।সন্তানরা থাকে তাদের নানুবাড়িতে।কষ্ট পেলেন, ভীষণ কষ্ট! বাবাকে প্রতারক নামকরণ করে মায়ের বাপের বাড়ির লোক এসে সালিশ বসিয়ে মা'কে নিয়ে চলে গেলেন।তখন অামাদের দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে।বাবা তখন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। মিলিটারির লোক বাবার স্কুলে গিয়ে অফিস ঘরে একটি সুন্দর ছোট নৌকা টাঙ্গানো পেলো।অাসলে বাবার স্কুলের এক ছাত্র হাতের কাজরূপে সুন্দর করে একটি নৌকাটি বানিয়ে দিয়েছিলো। মিলিটারিরা বাবাকে ধরে নিয়ে গেলো।খুব মারধর করলো।মা সেই খবর পেলেন! যেদিন সন্ধ্যায় পশুগুলো বাবার মত অারো অনেককে লাইন ধরে দাঁড় করালো ;গুলি করে মারতে। সেই সন্ধ্যায় অামার অসীম সাহসী মা গিয়ে সেই লাইন থেকে বাবাকে টেনে নিয়ে এলেন। দৌড়ে পালাবার সময় পিশাচরা গুলি করলো, গুলি পড়লো মায়ের ডানপায়ের উরুতে।বাবা কোনোরকমে মা'কে কোলে করে পালিয়ে এলেন।গুলিটা নিয়ে মা দীর্ঘদিন ভুগলেন, অচল হয়ে গেলেন ।তখন যুদ্ধকালীন লুকিয়ে চিকিৎসা বলতে ছিলে, মবিল গরম করে প্রলেপ দেওয়া।দেশ স্বাধীনের পর বাবাকে বড় চাকরির জন্য সচিবালয়ে ডাকা হলো, বাবা কিন্তু তখনকার দিনের এম.এস.সি, এম.এড।বাবা গেলেন না বড় চাকরিতে।বাড়ি থেকে পীড়াপীড়ি করলে, বাবা সাফ জানিয়ে দিলেন," অামি অামার এই অসুস্থ বৌকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।সে যদি অামায় গিয়ে লাইন থেকে টেনে না অানতো, অামার বাঁচার অার কোনো কারণই ছিলোনা।"
গুলিবিদ্ধ ঘা হওয়া মায়ের পায়ের চিকিৎসা করালেন।মা ভালো হলেন প্রায় দেড় বছর পর!
সুস্থ হয়েই তিনি অামাদের নানুবাড়ি থেকে অামাকে অার তোমার বড়ফুফুকে নিয়ে অাসেন।

নিনীকাΌπου ζουν οι ιστορίες. Ανακάλυψε τώρα