পর্ব: ৪

1.3K 44 3
                                    



সোহেল পুরো প্রোগ্রামের সূচিটা রওনকের কানের কাছে রিকল করতে লাগলো।
বাসায় ঢুকেই রওনক দেখল, মা অাবার কোমড়ে অাইসব্যাগ ধরে অাছেন।মা চূড়ান্ত মুখ কালো করে বললেন,
------পাষাণ ছেলে,তোকে না বলেছি, বিয়ের ব্যাপার কনফার্ম না করে, বাড়িতে অাসবি না।অামি কোমড় ভেঙ্গে মরে গেলে, তারপর বিয়ে করিস!
------তোমার কি ব্যাথা বেড়েছে নাকি?? ডক্টর এসেছিলো?
মা সোজা হয়ে বসতে বসতে বললেন,
------হ্যাঁরে ইলার সাথে কি কথা হলোরে? ওর জামাইর মাথাটা সেড়েছে??
-----এ অনেক লম্বা গল্প মা।প্রোগ্রাম এটেন্ড করে এসেই বলবো...
রওনক দ্রুত সিড়ি বেয়ে উপড়ে চলে গেলো।

শাওয়ার নিতে গিয়ে নিজের মুখটা অাজ ভালো করে দেখলো রওনক।ইলা ঠোট সুন্দর বলেছিলো যে!ঠোটের উপর অালতো করে হাত বুলালো।
মনে মনে ভাবলো,
ইলা যেনো অার কি ভালবাসতো তাঁর? এই ৬ফুটের হাইট।সবসময়ই বলত, তোমার সুপার হাইট রওনক ভাই।......
ইলার বিয়ে হবার পর এই এতটা বছরে তাঁর জীবন অাকাশ-পাতাল বদলে গেছে।কথা বলার ধরন পাল্টে গেছে, সকাল বিকেল পাল্টে গেছে, লাইফস্টাইল পাল্টে গেছে।ইলাকে ভুলে থাকতে গিয়ে, মা'কে সামলাতে গিয়ে প্রতি সেকেন্ড সে কাজ করেছে।প্রতি মুহূর্তুকে ব্যবহার করেছে।মা'কে একটা বাড়ি থেকে মুক্তি দিতে গিয়ে, এখন তাঁর নিজের ক'টা বাড়ি হলো?? ১৪টা না ১৫টা?? তাঁর কত টাকা অাছে? ক'টা গাড়ি? ৭টা না ৯টা??সে নিজেই তো জানিনা।তাঁর ইলাকেও সুখী দেখবার দরকার ছিলো।অাজ তাও দেখে এলো।সে কি সুখী এখন? অাচ্ছা, এই জীবনে সে যে একটা বিয়ে করেছিলো তা কি কখনো কাউকে বলতে পারবে?

রওনকের ভাবনায় ছেদ পড়লো। সোহেল এসে অাবার তাড়া দিচ্ছে।

প্রোগ্রাম শেষে লেইট নাইট বাসায় ফিরে রওনক দেখে মা বসে অাছেন, অাউটডোরে শুটিং না থাকলে, ডিনারটা মা রওনকের সাথেই করেন।
ডিনারে বসেই রওনক দেখলো, মেন্যু সব তাঁর পছন্দমত।মা বিয়ের ব্যাপারটা শক্ত করেই ভাবছে তাহলে!!

------তোমার কোমড় ব্যাথা তারপরও এত রান্না কেনো?
------খা.. খা... খেয়ে নে।তোর বৌয়ের রান্না তো অার খেয়ে যেতে পারবো না।তাই নিজেই রাঁধি।
------এখনকার কোনো বৌ কি রাঁধে মা? অাগুন তাতে নিজের শরীর কেউ পোঁড়াতে চায় না।এত বেশি চেয়ো না মা।
------, তুই তাহলে বিয়ে করবি না? বেশতো, অামায় রিনির কাছে পাঠিয়ে দে না। তোর সাথে অামি অার থাকছি না।
------তুমি বুঝতে পারছোনা মা, এখন বিয়ে করার কি স্কোপ অাছে??অাগামী ৩বছরে অামার কোনো শিডিউল নেই।একটা বিয়েতে হিউজ অায়োজন।এর মধ্যে মিডিয়ার টাঁনাহেচড়া তো অাছেই।
------বিয়ে করতে কি কোনো শিডিউল লাগে?তুই শুধু বল, করবি কিনা? বাকি সব অামি সামলে নিবো।
------মা, প্লিজ। মিডিয়া যেনো অাগে থেকেই কিছু টের না পায়! মেয়ে দেখাদেখি করতে গিয়ে তুমি, যে কোথায় কোন নিউজ বানিয়ে ফেলবে।এদের তো শুধু একটা লিক চাই। বাকি তো এক্সেজারেট করে এরা....
------এত ভাবিস নাতো! অামি সব চুপিচুপি করবো! ফাইনাল করেই তোকে জানাবো। মেয়েই তো হাজারটা খুঁজতে হবে অামার।চিত্রনায়ক রওনক রাজ এর বৌ বলে কথা।সে তো অার যেনো তেনো মেয়ে হলে হবে না।
------মেয়ে যাই হোক; শুধু কান্ড যাতে না হয় মা, সেই দিকটা একটু দেখো।বৌ দেখতে গিয়ে পেপারের নিউজ হয়ো না প্লিজ!!
------নিউজ টিউজ হলে হোকগে।তুই পাত্রী দেখতে এলাউ করেছিস।এই যথেষ্ট। তা কেমন মেয়ে দেখবো, বলতো?হ্যারে রওনক, তোর কোনো হিরোইন পছন্দ অাছে??
-------মা, প্লিজ!! ওটা অামার কাজের জায়গা।
------হু।কি কাজরে বাবা। এই নাচছিস, এই গাইছিস, এই জড়াজড়ি করছিস! এসব করে করে, তোর তো অনুভূতিই নষ্ট হয়ে গেছে..

রওনক হেসে ব্যাপারটা উড়িয়ে দিলো।
সোহেল মিনমিন করে বলল,
-----অত রিচ ফুড নিচ্ছেন রাতে! ৬তারিখ থেকেই কিন্তু অাপনার ২০দিনের অাউটডোর শূট্যিং অাছে।এখন সুস্থ থাকাটা খুব জরুরী।মা সোহেলের দিকে কড়া চোখে তাঁকালেন,
------চুপ করো না সোহেল।ছেলেটা কতদিন পর একটু মন খুলে খাচ্ছে!
------রওনক, অাজ অামার সাথে ঘুমোতে অায় না বাবা! কতদিন তোরে চুলে বিলি কাঁটি না...তোকে গল্প শুনাই না...
সোহেল বিনীত ভঙ্গিতে বলল,
-----ম্যাম, স্যার গত তিন রাত্তির ধরে ঠিকঠাক ঘুমোচ্ছেন না।গল্প না শুনিয়ে অাজ বরং একটু ঘুম পাড়িয়ে দিন না।ডার্ক সার্কেল এসে যাচ্ছে!
মা হাত জোড় করে অনুরোধের ভঙ্গিতে বলল,
----রওনক, তুই এক্ষুণি এর চাকরি নট কর তো।এক্ষুণি।অামার ছেলেকে পুরো পুতুল মানব বানিয়ে ফেলছে।রওনক সাথে সাথেই বললো,
-------চাকরি নট সোহেল!! যাও বাড়ি যাও।
সোহেল হেসে ফেললো। হাত ধুতে ধুতে রওনক মা'কে বলল,
----
মা, অামি দার্জিলিং এ শূটিং করবো, ২০দিন।এর মধ্যে তুমি মেয়ে দেখবে।যদি এর মধ্যে মেয়ে পাওয়া যায়, বিয়ে হবে।এটাই লাস্ট চান্স! এর মধ্যে না হলে, অার সারাজীবনেও তুমি কিন্তু অামায় বিয়ের কথা বলবে না।
মা নিশ্চিন্ত ভঙ্গিতে বললেন,
-----অাচ্ছা, চেষ্টা করে দেখি।
সিড়ির কাছে গিয়ে রওনক একটু দাঁড়ালো, একটু ভেবে বলল,
-------মা, ইলাকে তুমি এজন্যই অাসতে বলেছো, তাই না?ও তাহলে অামায় বিয়ে দিতেই এসেছে।তুমি কি জানো মা, ইলার অাবার বেবী হবে?
মা মৃদু হেসে বললেন,
----- জানি।ইলাই জোড় করে অাসলো।তোর সংসার দেখতে চায়।শোন্, নিজের ভালোবাসাকে সারাজীবন ভালোবেসে চুপচাপ কাটিয়ে যাওয়াটা অনেক সোজা, রওনক ; কিন্তু নিজের ভালোবাসার মানুষকে সংসার গুছিয়ে দেবার মত শক্ত কাজ কিন্তু অার নেই।ইলা এই শক্ত কাজটাই করতে এসেছে! নিজের পছন্দের মানুষকে অন্য কারো সাথে সুখী দেখতে চাওয়াটায় অনেক সাহসের দরকার হয়, অনেক মনের জোড়ের দরকার হয়! সেদিক থেকে দেখতে গেলে...ইলা কত সাহসী ভেবেছিস?

রওনক সিড়িঁ ভেঙ্গে উপড়ে উঠতে থাকলো।মা একদৃষ্টিতে রওনকের দিকে তাঁকিয়ে অাছেন, ইশ্ ছেলেটা এত সুন্দর হলো কেনো?মাথভর্তি ঝাকরা চুলটা, হালকা করে নড়ছে...থুতু ছিটোবার ভঙ্গি করে, মা ফিসফিস করে বললেন, "মাশাল্লাহ"

রওনক বিছানায় শরীর এলাতে এলাতে বিড়বিড় করে বলল,
"অামি চিত্রনায়ক রওনক রাজ! অার অামার জীবনের নতুন গল্পের শুরু হবে এখান থেকেই.......

(চলবে)

নিনীকাWhere stories live. Discover now