পর্ব ১২

1.2K 43 1
                                    



নিনীকা ফ্লোরে বসে বিছানায় ঠেস দিয়ে চোখ বন্ধ করে ছিলো।পাপা মাথায় হাত রাখতেই চমকে গেলো।
------কখন এলে?
------মাত্রই। তুমি ফ্রেশ হওনি কেনো মামণি? নিউজে দেখলাম তো.. বেশ মানিয়েছে তোমাদের। অামার কলিগরা তো ফোন করে করে অামার মাথা খেয়ে নিচ্ছে।মেয়ের বিয়ে; অামি এমন সারপ্রাইজ দিলাম বলে!
-------তোমায় অামি খুব ভালোবাসি পাপা...... বলতে বলতে
নিনীকা পাপার হাটুতে মাথা রাখলো!
------রওনককে ভালো লাগলো তো মামণি?
------অামি এত কনফিউজড কেনো পাপা? বিয়ের কথা শুনতেই এত অানন্দিত হলাম, অার কারণে অকারণে এখন মন খারাপ লাগছে।
নিনীকার পাপা প্রসঙ্গ পাল্টালেন,
------ডিনার করেছো?
নিনীকা অাড়মোড়া ভেংগে উঠে দাঁড়ালো।
-------না পাপা, চলো.. বসি!প্রচন্ড খিদে পেটে।
নিনীকা উঠে দাঁড়াতেই পাপা বললেন!
------- শাড়িতে তোমায় খুব প্রিটি দেখাচ্ছে! চমৎকার শাড়ি! প্রোগ্রামের জন্য কিনেছিলে? নিজেই পড়েছো?
নিনীকা হাসতে হাসতে বলল,
-------ইটস অল মাই ম্যাজিক! পাপা।
ডিনারে বসে চুপচাপ নিনীকা শুধু পাতের ভাত ঘেটেই গেলো।খেলো না কিছু!
-------খেতে ইচ্ছে না করলে উঠে যাও মামণি! বরং অামাদের দুজনের জন্য দুটো দুধকফি বানাও।অামরা ছাঁদে বসবো....
নিনীকা কফি হাতে ছাদে উঠতে গিয়ে দেখলো শাড়িতে পা বেঁধে যাচ্ছে।দুহাত বন্ধ। কুচিতে পা পড়ছে...
-------কোনটা ফেলবো বলতো পাপা? শাড়ি না কফি?
------কেনো?
------কুচি না ধরলে হচ্ছে না। কফিমগ ধরো, অামি চেঞ্জ করে অাসি!
পাপা নিনীকার হাত থকে একটা কফিমগ নিয়ে নিলেন,
-------কোনটাই ফেলতে হবে না।এবার একহাতে কুচি ধরে উঠো!
-----থেংক ইউ পাপা।
ছাদের রেলিং এ বসতে বসতে পাপা বললেন,
------ তোমার শাড়িটাও চমৎকার, কফিও। দুটোর একটাকে বাদ দিয়ে, অাসলে ভালো লাগতো না। এই যে অামি একটা কফিমগ নিয়ে নিলাম, দুটোই ব্যালেন্স করতে পারলে তো...সবসময় অাগে ব্যালেন্স করার চেষ্টা করবে, ক্যানসেল নয়!
-----অামি খুব বোকা! তাই না পাপা??
-------এত তাড়াতাড়ি বুঝা যাচ্ছে না! যখন থুরথুরে বুড়ি হবে তখন ডিসাইড করা যাবে।
নিনীকা হাসলো।
------নিনী, তুমি দুধ খেতে পারোনা। ছোটবেলা থেকেই পারনো। তাইনা মামণি?
নিনীকা উত্তর দিলো না।
------এই যে অামি দুধকফি বললাম, তাও কিন্তু তুমি নিজের কফিটা উইথাউট মিল্ক নিলে...ডিরেক্ট দুধ মিশিয়ে যাই করা হোক, তুমি খেতে পারো না।
-------দুধে অামার প্রচন্ড গন্ধ লাগে পাপা।
-------জানি।কিন্তু একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার কি জানো? এই দুধটাকে যখন ছা্ঁচে ফেলে দই বানানো হয়, তুমি সেটা অাগ্রহ করে খাও।ইফ অাই এম নট রং, তুমি দই খুব পছন্দও করো।
--------হু, দই তো ভিন্ন স্বাদের, কত্ত মজার।
-------ক্লুটা ধরতে পেরেছো?দুটো একই জিনিস ;দুধ তোমার পছন্দ না, কিন্তু সেটাই দই হলে পছন্দ!
অামাদের জীবনেও এমন মামণি। কিছু জিনিস একরকম দেখে অামরা বাদ দিতে চাই, কিন্তু একটু গড়েপিঠে নিলে তাও কিন্তু অসাম হয়। বিরক্তিকর দুধ যেমন তোমার দইয়ে প্রিয়, তেমনি সেই ভালো না লাগার জিনিসটাও একটু যত্ন করলেই প্রিয় হয়ে যেতে পারে।
-------তুমি যুক্তিবিদ্যা কেনো পড়োনি পাপা? সাইন করতে খুব।
-----এখন কি সাইন করিনি বলছো?
নিনীকা হাসলো।
-------যাও তর্কবিদ্যাও এ প্লাস দিলাম।
------তোমার সবসময় ছেটে অার কেটে ফেলে দেয়ার অভ্যাস! জীবনে অনেক জিনিস তুমি হুট করে ফেলে দিয়েছো। বাদ দিবার অাগে কখনোই ভাবোনা।
------এজন্যই তো সার্জারিতে অামার বেশি অাগ্রহ পাপা।অকেজোটাকে কেটে ফেলো।
------তোমাদের সার্জারিতে কিন্তু সব কেটে ফেলা নয়, জুড়ে দেওয়াও অাছে।জীবনের সম্পর্ক গুলোকে এমন জড় পদার্থ ভাবা কিন্তু অপরাধ; কঠিন অপরাধ। সম্পর্ক হলো চুলাতে রান্না করবার মতো, অমনোযোগী হলেই পুড়ে ছাই।সময়ে সময়ে এর তদারকি করতে হয়, নাড়তে হয়, নুন, মশলা দিতে হয়,অাগুনের অাঁচ কমানো বাড়ানো লাগে..
-------রান্নার প্রসেসটা কিন্তু একটা স্পেসিফিক টাইমে এসে শেষ হয়!
------সম্পর্কটাও; এটারও সময় বাঁধা!ঠিক যতদিন তুমি বেঁচে অাছো. তোমায় ঘিরে থাকা সম্পর্ক গুলোও বেঁচে থাকবে...
----তুমি খুব চালাক পাপা।একেক সময়ের জন্য তোমার একেক ব্যাখ্যা রেডী থাকে।যখন স্টুডেন্ট ছিলাম, তখন বলতে পড়াশোনা হলো প্রার্থনার মত, ওতে হৃদয় অার ভক্তি জুড়ে দিতে হয়।প্রার্থনা অার পড়শোনা দুটোই একনিষ্ঠ ধ্যানের কাজ! এখন যখন নতুন সম্পর্কে যাচ্ছি......
------ মামণি,তুমি একজনকে দেখলে, সে তোমাকে দেখলো, অাই লাভ ইয়ু বললে; অার প্রেম হয়ে গেলো!, ব্যাপারটা খুব হাস্যকর, ছোট অার সামান্য হয়ে গেলোনা?প্রেম কি অত ছোট অার সামান্য বলো? প্রেমের মত হেভেনলি একটা ব্যাপার হবে অনেক সাধনার।দুটো জীবন জীবনের সাথে মিলবে।
------যেমন?
- ------দুজন মানুষ দুজনকে জানবে, বুঝবে, কথা বলবে, একজন অারেকজনের পেছনে শ্রম দিবে, যত্ন করবে, অপেক্ষা করবে, সাধনা করবে; টোটালি এ লংটাইম ওয়ার্কিং প্রসেস ! তারপর যদি সে সম্পর্কের নাম প্রেম হয়, তাহলে ঠিক অাছে।এজীবনে তুমি যা পেয়েছো, তা তুমি তোমার কাজ দিয়ে পেযেছো, 'তুমি' হয়েই পেয়েছো। পড়াশোনা, প্রফেশন কোথাও তুমি অামার ফেবার নাওনি, অাট দশটা সাধারণ মানুষের মত সব অর্জন করেছো! অার জীবনের সব থকে বড় পাওয়া 'ভালোবাসা'; তা যদি রওনক তোমায় এমনি দিয়ে দেয়, সস্তা হয়ে গেলো না বেশ? তুমি যোগ্যতাগুণে পেয়ে নেবে তা!তোমার কি পাপার কথা বিরক্ত লাগছে মামণি?
------খুব বিরক্ত লাগছে। ইচ্ছে করছে তোমায় এখনি জড়িয়ে ধরি...
কথা দাও তো পাপা, তুমি অামার অাগে মরবে না।অামার জীবনের সব কনফিউশন তুমি এরকম ব্যাখ্যা করে শুধরে দিবে।
------মারা গেলে যে অালোচনা করা যায় না সেটা তোমায় কে বলল নিনী? তুমি শুধু চোখ বন্ধ করে বলবে, অামি কনফিউজড পাপা।দেখবে বান্দা হাজির।

নিনীকাحيث تعيش القصص. اكتشف الآن