Chapter-5 | Part-4

40 1 0
                                    

'কলকাতা' বোধহয় সুস্মিতার সুখে ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েছিল, তাই ভালোবাসার মানুষটাকে চিরতরে কেড়ে নিলো। আবার অনাথ করে দিল। সুস্মিতার মন ভেঙে গেল, হতাশার হাত থেকে রেহাই পেতে মদের নেশায় ডুবে গেলেন। খবরের কাগজের ব্যবসা মিত্তালদের পারিবারিক ব্যবসা ছিল। যতদিন বড়ো ভাই বেঁচেছিলেন, বাকীরা টাকার ভাগ নিয়েই খুশী ছিল, কিন্তু তাঁর অবর্তমানে জমির ভাগ নেবার জন্য কোর্টে দৌড়ল। সুস্মিতার মন সায় দিল না, সব এক কথায় ছেড়ে দিলেন। আখেরে তাতে ভালোই হয়েছিল। বাঁচার তাগিদে আবার নূতন করে লড়াই শুরু করলেন। আস্তে আস্তে পায়ের নিচে মাটি ফিরে পেলেন। কাগজ তৈরির নেশায় নূতন উদ্যমে দিনরাত খাটতে শুরু করলেন।

প্রেসক্লাবে আড্ডা দিতে দিতে এক বন্ধু পরামর্শ দিয়েছিল--নিউজ এজেন্সি শুরু করার। 'কলকাতা' নাম দিয়ে শুরু করে দিলেন। সুস্মিতার তখন হারবার ভয় ছিল না, তাই জিততেই থাকলেন। নেতা, মন্ত্রীদের সাথে শুরু থেকেই ভালো ভাব ছিল, সাফল্যের তাগিদে ধীরে ধীরে সম্পর্কের আঁট আরও গাঢ় হল। শুরুতেই বুঝেছিলেন সরকারি মদত ছাড়া অল্পসময়ে বিশেষ কিছু করা সম্ভব নয়। কাজেই রাজনীতির দাঁড়িপাল্লা যে দিকে ঝুঁকে ছিল, পুরনো চিন্তাভাবনা জলাঞ্জলি দিয়ে নিজে সেই পক্ষকেই বেছে নিয়েছিলেন বিনা বিচারে। ভাগ্য সহায় ছিল যা অনুমান করতেন তাই হতো। সামান্য সময়ের ভিতরেই বাজারে রীতিমতো নাম হয়ে গেল। ফ্রেস ছেলেমেয়ে নিলেন, নিজেই ট্রেনিং দিলেন। একটাই মন্ত্র--জিততে হবে।

অনেক চড়াই-উতরাই পার করার পর সাফল্যের মিঠে স্বাদ পেলেন ঠিকই, কিন্তু তার সাথে সাথে নিজেকে বড্ড একা মনে হতে লাগল। জীবনে ভালোবাসার স্বাদ পেয়েছিলেন, কিন্তু উপভোগ করার অবসর পাননি। নিজের মনের অন্দরে ক্ষোভের বীজ সুপ্ত ছিল, সময় হতেই তার অঙ্কুরোদগম হল একেবারে নিঃশব্দে। অভাববোধ মানুষের নিত্য সঙ্গী, কিন্তু সবসময় তার উত্তাপ উত্তপ্ত করে না। মানুষও মনের কোণায় কোণায় জমে থাকা বাসনার স্তূপ খুঁচিয়ে অকারণে ঘা করতে চায় না, কাজেই আপোস করেই জীবন তার নিজস্ব গতিতে গড়াতে থাকে। চাহিদার লম্বা লিস্ট কোনদিন পূরণ হবে না, অসহিষ্ণুতা কোনদিন যাবে না। সব তথ্যই সুস্মিতার জানা, তবুও সময়ে সময়ে মন মানে না।

সাপলুডোWhere stories live. Discover now