Chapter-2 | part-2

46 2 1
                                    

দু'জনেই একসাথে হেসে উঠলেন। সুস্মিতা কফিতে চুমুক দিয়ে বললেন, "ভালো কথা, তোমার খবর প্রিয়কে জানানো উচিত। আগে ওকে ফোন করি।"

প্রিয়বাবুর প্রসঙ্গ উঠতেই বিকাশের হাসিখুশি মুখ নিমেষে ফ্যাকাসে হয়ে গেল। কফির স্বাদ পালটে গেল, তেতো লাগতে শুরু করল। বিকাশের দৃষ্টিতে বিষণ্ণতার ছায়া লক্ষ্য করে সুস্মিতা স্মরণ করিয়ে দিলেন, "প্রিয় তোমার বস, সেটা মাথায় রাখতে হবে।"

বিরক্তির সাথেই বিকাশ বলল, "বস হয়তো সারা জীবন থাকবেন, কিন্তু আমি আর ওনাকে শ্রদ্ধা করতে পারব না।"

ঘড়িতে সময় দেখে ফোনের বোতামে আঙুল রেখে বিকাশকে বললেন, "নেভার টেক ডিসিশন ইন হারি।" ফোনের মাধ্যমে প্রিয়বাবুর কণ্ঠস্বর কানে ভেসে আসতেই জানালেন, "বিকাশ তো একেবারে ফিট। তুমি তো বলেছিলে সারাদিন উঠতে পারবে না।"

প্রিয়বাবুর কথা শোনা যাচ্ছে না, কিন্তু বোঝা যাচ্ছে অপ্রিয় কোন কথা বলেছেন, যার উত্তরে সুস্মিতা বিতৃষ্ণার সাথে জবাব দিলেন, "ওর টনিক লাগে না, সবাইকে নিজের মতো মনে করো কেন? ঠিক আছে, রাখছি।"

সুস্মিতার মুখে বিরক্তির রেখাগুলো ক্ষণিকের জন্য ফুটে ওঠায়, বিকাশের বুঝতে অসুবিধা হল না যে প্রিয়বাবুর কথায় তিনি অপমানিত বোধ করেছেন। বিকাশের নিজেকে অপরাধী লাগল। মনে হল, তাকে মাধ্যম করেই প্রিয়বাবু সুস্মিতাকে অহেতুক অপদস্থ করার সুযোগ পেলেন, এবং তার উপস্থিতির জন্য সুস্মিতা হয়তো যথাযথ উত্তর দিতে পারলেন না। হার মানার মেয়ে যে তিনি নন, তা যে কেউ এক নজরে বুঝতে পারবে। গতকাল সন্ধেবেলা যে মানুষটা এই ভদ্রমহিলার সান্নিধ্য পেতে লালায়িত ছিল, নিজের মান সম্মান বাজী রাখতেও রাজী ছিল, সে-ই মানুষই রাতের অন্ধকার কাটতেই, দিনের আলোয় এমনভাবে নিজের রং পালটে ফেলতে পারে? মনুষ্যত্ব বলে কিছু নেই, শুধু সুযোগের সন্ধান করে যাওয়াই কি জীবন? একের পর এক প্রশ্ন বিকাশকে বিদ্ধ করছিল।

ঘণ্টায় ঘণ্টায় কিভাবে পট পরিবর্তন হয় তা ভেবেও অবাক লাগছিল বিকাশের। মানুষকে বোঝা বোধহয় সব থেকে শক্ত কাজ। যত দূরদৃষ্টিই থাক না কেন, অন্যের চরিত্রের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারা সহজ কথা নয়। স্থান-কাল-পাত্রের প্রেক্ষিতে সদাই পরিবর্তিত হচ্ছে চরিত্রের চেহারা। আরোপিত উপাধির চাপে, নিজেকে সবার থেকে ভিন্ন প্রমাণের প্রতি নিয়ত প্রচেষ্টা আমাদের পথভ্রান্ত করছে। স্বকীয়তা ঝেড়ে ফেলে, ছদ্মবেশী মানুষের মিছিলে পা মিলিয়ে গড্ডালিকাপ্রবাহে ভেসে যাওয়াই যেন জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য। বিকাশের চোখের সামনে বিসদৃশ টুকরো টুকরো দৃশ্যগুলো জীবন্ত হয়ে ফুটে উঠল। রঙ্গমঞ্চে বিকাশ নিজেকেও দেখতে পাচ্ছে, তবে ছদ্মবেশে নয়, এটাই সান্ত্বনা।

সাপলুডোWhere stories live. Discover now