Chapter-12 | Part-4 (last chapter)

32 2 0
                                    

সুস্মিতাকে তাদের পুনর্মিলনের তরতাজা খবর পৌঁছে দিতে বিকাশ ফোন করল। সুস্মিতা তখন প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় বালিশে ঠেস দিয়ে বসে ছিলেন। নড়াচড়া করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন বললেই চলে। ক্লান্তিতে চোখমুখের চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে। দশ-বারো ঘণ্টায় এত পরিবর্তন যে সম্ভব তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা অসম্ভব। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। ফোন বাজছে কানে শুনতে পাচ্ছেন, কিন্তু এমন শক্তি নেই যে রিসিভ করেন। কোনমতে পাশ ফিরে ফোনের পর্দায় চোখ পড়তেই লক্ষ্য করলেন বিকাশের নাম, অতিকষ্টে নিজেকে সোজা করে বসালেন। শরীরটাকে নিয়েই যত সমস্যা, মনে হচ্ছে হাজারগুণ ওজন বেড়ে গিয়েছে, সামান্য নড়াচড়া করতেও অনেক সময় লাগছে।

নির্ধারিত সময় অবধি বেজে ফোন আপনা-আপনি কেটে গেল। বিকাশের মনে আশঙ্কা ক্রমে বাড়তে লাগল। সকালে একবার কথা হয়েছিল, কিন্তু গতকাল রাত থেকেই সুস্মিতাদিকে নিয়ে চিন্তা ছিল। সেই মুহূর্তে ফোনে যোগাযোগ না হওয়ায় দুশ্চিন্তা বৃদ্ধি পেল। বিকাশের মুখেচোখে তার প্রতিফলন লক্ষ্য করে দীপা উদ্বেগের সাথে জিজ্ঞেস করল, "কি হল?"

বিকাশ চিন্তান্বিত কণ্ঠস্বরে জবাব দিল, "সুস্মিতাদি ফোনটা কেন ধরল না, তাই ভাবছি। গতকাল শরীরটা ভালো ছিল না।"

দীপা বিকাশকে ভরসা দেবার জন্য হাত ধরে বলল, "কিছু হবে না, নিশ্চয়ই ভালো আছে। আরেকবার কর।"

আবার ফোন বাজছে, এবার সুস্মিতা তৈরি। ইতিমধ্যে কলকাতার কাছ থেকে আরও কিছুটা সময় ধার নিয়েছেন। মনের সমস্ত শক্তি একত্র করে একটাই শব্দ ব্যবহার করলেন, "বল!"

অজান্তেই সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতায় বিকাশের একটা হাত বুকের কাছে চলে গিয়েছে, ভগবান প্রার্থনা শুনেছেন। সুস্মিতাদি সুস্থ আছে, এর থেকে ভালো সংবাদ আর কি হতে পারে? সুস্মিতা কথা বলছেন কম, শুনছেন বেশী। বিকাশ সবসময় তাঁর কাছে প্রশ্রয় পেয়ে এসেছে। হাত ধরে অতি সন্তর্পণে সব বাধা অতিক্রম করে তাকে গন্তব্যে পৌঁছুতে সবরকম সাহায্য করেছেন। বিকাশকে এগিয়ে দিয়েছেন, নিজে থেকেছেন নেপথ্যে। সেই সুস্মিতা আজ শ্রোতার ভূমিকায়। বিকাশ সবিস্তারে সমস্ত ঘটনা বলে অনুরোধ করল, "বাড়ি, গাড়ি, চাকরি সব তো ছেড়ে দিয়েছিলাম, ফিরে আসার আগে তুমি একটা চাকরি আর বাসস্থানের বন্দোবস্ত করে রেখো।"

সাপলুডোWhere stories live. Discover now