দীপার পরীক্ষা শেষ। খুব ভালো ফল আশা করছে। বরাবরই সে পড়াশোনায় ভালো। প্রিয়বাবু ও মিতাদেবীর মেয়ের ওপর অগাধ আস্থা। দীপার দীর্ঘ অধ্যবসায়ের উপযুক্ত পুরষ্কার দিতে সপ্তাহান্তে কাছেপিঠে কোথাও বেড়াতে যাবার হরেকরকম প্ল্যান সামনে রেখে বিস্তারিত আলোচনায় মত্ত সবাই। প্রিয়বাবু এখনও নিয়মিত অফিস যাচ্ছেন ঠিকই, তবে কাজে আর আগের মতো মনোনিবেশ করতে পারছেন না। দায়সারা ভাব, বুঝতে পারেন অফিসের কাজ থেকে মন উঠে গিয়েছে।
প্রিয়বাবু চাইছেন মালিকপক্ষ তাঁকে জানিয়ে দিক যে তাঁর প্রয়োজন ফুরিয়েছে, আর ওপরমহলের ইচ্ছা তিনি নিজে থেকে ছেড়ে দিলেই ভালো। ছাপাখানার কালির কালো দাগ খবরের কাগজের পাতায় যত মানায়, প্রতিষ্ঠানের গায়ে ততই কাঁটার মতো ফোটে। অনাবশ্যক অর্থহীন বাগাড়ম্বর যত এড়িয়ে চলা যায় ততই সংস্থার পক্ষে মঙ্গল। দু-দলের দলাদলিতে মান-অপমানের বারুদঠাসা অহংকারের বল গড়াতে গড়াতে মাঝমাঠে দু-পক্ষের মাঝখানে এসে দাঁড়িয়েছে। বিকাশ ব্যক্তিগতভাবে নিরপেক্ষ, তবে প্রিয়বাবু মনে মনে তাকে বিপক্ষ দলের খেলুড়ে হিসাবেই গণ্য করেন।
যে যার আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে চারপাশের সম্পর্কগুলো ক্রমশই জটিল আকার নিচ্ছে বলে বিকাশের ধারণা। এখন আর তার বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, প্রধান সমস্যা প্রিয়দা আর সুস্মিতাদির মধ্যে, কিন্তু তাতে জড়িয়ে পড়েছে তারা সবাই; সিনেমার পর্দায় এক্সট্রাদের উপস্থিতির মতো। কেউ মুখ ফুটে কিছু না বললেও চাপা উত্তেজনার শিহরণ শরীর মনের শিথিল পর্দা ভেদ করে অনেক দূর প্রসারিত। বোঝা যাচ্ছে বিপর্যয়ের দমকা হাওয়া যে কোন মুহূর্তেই আছড়ে পড়তে পারে, এবং সম্পর্কের সূক্ষ্ম সুতো তাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা।
বিকাশের কাছে সুস্মিতা, এবং প্রিয়বাবু দু'জনেই ভালোবাসার মানুষ, তাই যন্ত্রণার তির তাকে বিঁধছে সবচেয়ে বেশী। মাঝে একদিন খোলাখুলি সুস্মিতাকে জিজ্ঞাসাও করেছিল, "সুস্মিতাদি আমায় একটু খুলে বল না!"
সুস্মিতা হাসতে হাসতে তার উদ্দেশ্যে ধোঁওয়া ওঠা কফির কাপ বাড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, "একটু অপেক্ষা করো, সব জানতে পারবে। অপেক্ষাতেই তো মজা। একবার গোলে বল ঢুকে গেলে তো হয়েই গেল।"
![](https://img.wattpad.com/cover/224912256-288-k320513.jpg)
YOU ARE READING
সাপলুডো
General FictionAmbitions and dreams vis-a-vis reality and corporate politics.