প্রিয়বাবুই নীরবতা ভেঙে বললেন, "সুস্মিতা, তোমার কাছে আমার একটা অনুরোধ আছে।"
কথা শেষ হতেই সুস্মিতার উত্তর, "তুমি আবার অনুরোধ করতে শিখলে কবে? তুমি তো হুকুম করতে অভ্যস্ত।"
বিরক্ত গলায় প্রিয়বাবুর উত্তর, "এই হল মেয়েদের এক দোষ, কথার অর্থ নিজের মনের মতো করে সাজিয়ে নেওয়া।"
সাপের লেজে পা পড়লে যে ক্ষিপ্রতার সাথে সাপ ফণা তোলে, সেই দ্রুততায় ফুঁসে উঠলেন সুস্মিতা, "মেয়েদের সম্বন্ধে কথা বলার অধিকার তোমায় কে দিল? এটাও কি জন্মসূত্রে পাওয়া তোমার ফার্নিচারের মতো?"
সুস্মিতার বাচনভঙ্গির ভাঁজে ভাঁজে শ্লেষের চাবুক বুঝিয়ে দিচ্ছে আজ মুড একেবারে আলাদা। এক ফালি জমিও কাউকে ছেড়ে দেবেন না। বিকাশের মনে হল প্রিয়দা ভুল দিনে ফোন করেছেন, কপালে দুঃখ আছে। দু'জনের মাঝখানে নিজের অনধিকার প্রবেশ উচিত নয় মনে করে, পরের কথোপকথনের অপেক্ষায় নিশ্চুপ হয়ে বসে রইল। সুস্মিতার গ্লাস খালি হতেই দু'জনের ড্রিঙ্ক বানিয়ে আবার এসে বসল। ফোন টেবিলের মাঝখানে রাখায় সুস্মিতাকে ঝুঁকে কথা বলতে হচ্ছিল, এবং তাতে কষ্ট হচ্ছে অনুভব করে বিকাশ ফোন তাঁর কাছে সরিয়ে দিল। সাথে সাথে বিকাশকে হাত তুলে ধন্যবাদ জানিয়ে সোফায় হেলান দিয়ে রিল্যাক্স করে বসলেন।
প্রিয়বাবু সুস্মিতার কাছ থেকে এই ধরনের অপমানজনক উক্তি আগে অনেক শুনেছেন, এবং বিনা প্রতিবাদে সহ্য করতে বাধ্য হয়েছেন। নিত্য-নূতন টাটকা খবরের গরজে তখন গায়ে মাখেননি। সময়ের পিচ্ছিল ঢালে পড়ে পিছলে গিয়েছে মনে করে মনেও রাখেননি, কিন্তু বিকাশের উপস্থিতিতে শব্দগুলো ধারে এবং ভারে অনেক সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে মনে করে নিজেকে তটস্থ লাগছিল। মদের এবং মনের জটিল সমীকরণ নিঃসন্দেহে প্রিয়বাবুকে কাবু করে দিয়েছে। সেই জড়তা থেকে উদ্ধার পেতেই কণ্ঠস্বর সপ্তমে তুলে বললেন, "সুস্মিতা বাড়াবাড়ি করে ফেল না, তোমার সীমা ছাড়িও না।"
সুস্মিতার মুখের আদল বিকাশের চোখের সামনে ক্রমশই পালটে যাচ্ছে। কপালের ভাঁজগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ফোনের কাছে ঝুঁকে বিদ্রূপ মিশ্রিত কণ্ঠস্বরে, "সীমা...!" বলে হাসতে শুরু করলেন। হাসি আর থামে না। হাসতে হাসতে চোখ দিয়ে জল পর্যন্ত গড়িয়ে পড়ল।
YOU ARE READING
সাপলুডো
General FictionAmbitions and dreams vis-a-vis reality and corporate politics.