Chapter-11 | Part-6

29 1 0
                                    

ঘড়িতে প্রায় বারোটা বাজে লক্ষ্য করে বিকাশ বলল, "সুস্মিতাদি আজ শুয়ে পড়ো, তোমার শরীর ভালো নেই।"

সুস্মিতা নিজের চেয়ারে সোজা হয়ে বসে বললেন, "আগে তোমাকে আমার জীবনের গল্পটা বলি, আর হয়তো সময় পাব না।"

"কি বলছ সুস্মিতাদি! পরে হবে।"

বিকাশকে সামনে বসিয়ে শুরু করলেন নিজের জীবনকাহিনী। কথা দিয়েছিলেন একদিন শোনাবেন, তাই নিরাশ করতে চান না। একেবারে শুরু থেকে: মুর্শিদাবাদের ঘুপচি গলি, রোজ রোজ বাবার মাতলামি, মাঝরাতে মায়ের পালিয়ে যাওয়া, একমাত্র ভাইয়ের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু, ষোল বছর বয়সে নিজের অ্যাবরশন, কলকাতায় আগমন, মেয়েদের মেসে থেকে পড়াশোনা করা, কাগজের অফিসে চাকরি নেওয়া, সেখানে মালিকের সাথে গভীর বন্ধুত্বের বন্ধনে জড়িয়ে পড়া, এবং প্রেম, বিয়ে, মৃত্যু অবধি এসে একটু থামলেন।

বিকাশের পরিচিত জগতের নাগালের বাইরে চলে গিয়েছেন ভদ্রমহিলা। সাহিত্যে এইরকম চরিত্রের উদাহরণ যে একেবারে পায়নি তা নয়, কিন্তু বাস্তবজীবনে এমন কারও সাথে সাক্ষাৎ হবে কল্পনাও করেনি। অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বড়ো করুণ কাহিনী। বিকাশ শুনেই মনে মনে বিধ্বস্ত, যার ওপর দিয়ে দিনগুলো গিয়েছে সেই মানুষ আজও কি করে জীবনযুদ্ধে যুঝে যাচ্ছে সেটাই বিস্ময়। ভগবান বোধহয় দুঃখের সাথে সাথে সহ্যশক্তিও বাড়িয়ে দেন; প্যাকেজটাই এরকম।

হুইস্কিতে গলা ভিজিয়ে সুস্মিতা আবার শুরু করলেন, "প্রিয় তখন সবে সাংবাদিক হয়েছে, আর আমার তখন সাংবাদিক মহলে খুব নামডাক। সংবাদ মানেই সুস্মিতা, কাজের নেটওয়ার্ক আমার বরাবরই খুব ভালো ছিল। যাইহোক, প্রিয় ভীষণ অ্যাম্বিশাস ছিল। প্রথম থেকেই আমার সেটা খুব ভালো লাগত। আস্তে আস্তে ভালোলাগা ভালোবাসায় পরিণত হল, এবং পরিণতি হল আমার প্রেগনেন্সি। আমি ভীষণ খুশী হয়েছিলাম। বলতে পারো আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন ছিল সেইদিনটা। মা হতে চলেছি ভেবেই সন্তানের প্রতি অপত্য স্নেহে চোখে জল এসে যেত। আমি কিন্তু শুরু থেকেই জানতাম যে, প্রিয় বৌ-মেয়ে নিয়ে সংসার করে, তাতে আমার কখনো কোনও আপত্তি ছিল না। একটাই আবদার ছিল--যতক্ষণ আমার কাছে থাকবে, আমার হয়ে থাকবে। এখন বুঝি তা হয় না, কিন্তু তখন মন মানত না।"

সাপলুডোजहाँ कहानियाँ रहती हैं। अभी खोजें