Chapter-10 | Part-4

27 1 0
                                    

বাবাকে অসহায় দেখলে মেয়ের যে কত খারাপ লাগতে পারে, সে অভিজ্ঞতা মিতাদেবীর মনে এখনো স্পষ্ট। মেয়েকে সান্ত্বনা দিতে তাকে জড়িয়ে ধরে জানলার ফাঁক দিয়ে এক টুকরো আকাশের দিকে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে, ঘরের মেঝেতে বসে আছেন। প্রিয়বাবু পরিবারের ছন্নছাড়া দৃশ্য সহ্য না করতে পেরে, সেখান থেকে পালিয়ে আশ্রয় নিলেন নিজের শোবার ঘরে। মায়ের কোলে মাথা রেখে একটানা কেঁদে চলেছে দীপা। 

মিতাদেবী পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে জীবনের পাঠ পড়াচ্ছেন। মেয়ের কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে আস্তে বলছেন, "জীবন এইরকমই, সবসময় একরকম যায় না। সুখ-দুঃখ, ভালো-মন্দ ঋতু পরিবর্তনের মতো ক্রমান্বয়ে ঘুরতে থাকে, তাতে বিচলিত হতে নেই। চূড়ান্ত অশান্তির ভিতর যে নিজেকে স্থির, শান্ত রাখতে পারবে, সে-ই জীবনযুদ্ধে জয়ী হবে। যাদের সাহিত্য নিয়ে, ছবি নিয়ে পৃথিবী জুড়ে এত মাতামাতি, তাদের ব্যক্তিগত জীবন লক্ষ্য করে দেখ--শোকে, বিরহে, যন্ত্রণায় মুহ্যমান। তুই তো সব পড়েছিস, তারা কেউ কিন্তু চট করে ভেঙে পড়েনি, তাই মানুষ তাদের প্রাতঃস্মরণীয় করে রেখেছে। মান-অভিমান থাকবেই, রাগ-দ্বেষ চিরকাল ছিল--আজও আছে। কাঁদিস না ওঠ, আমাদের রবিবারের পার্টী করবি না?"

দীপা বাচ্চা মেয়ের মতো দু-হাতে চোখ মুছতে মুছতে বলল, "করব। কিন্তু মা, তুমি সবসময় আমায় এভাবে বোঝাবে তো?"

মিতাদেবী হেসে উত্তর করলেন, "আমি কেন? বোঝানোর লোক তো এসে গিয়েছে।"

দীপা 'মা' বলে আবার মায়ের কোলে মুখ লোকাল। অনেক বুঝিয়ে মেয়েকে পাঠালেন তৈরি হতে, নিজে চললেন কর্তার তদারকি করতে। প্রিয়বাবুদের শোবার ঘরটা বেশ বড়ো, খাটের পাশে বসবার ব্যবস্থা ছাড়াও এক কোনায় দেওয়ালের দিকে মুখ করে পুরানো আমলের রাইটিং টেবিল, চেয়ার রাখা। প্রিয়বাবুর লেখবার টেবিল। ল্যাপটপ খোলা, কিন্তু সুইচ অন করেননি, কাজেই স্ক্রিন কালো দেখাচ্ছে আর সেইদিকেই আনমনে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছেন, বোধহয় অন্ধকারের শেষে আলোর সন্ধানে মন ব্যস্ত। মিতাদেবী কাঁধে হাত রাখতেই চমকে উঠলেন। পর মুহূর্তেই নব্বই ডিগ্রি ঘুরে বৌ-এর বহুদিনের পরিচিত স্পর্শে ভরসা খুঁজে পেয়ে কোমর জড়িয়ে ধরলেন। মিতাদেবী গভীর সহানুভূতির সাথে বললেন, "এত কি ভাবছ বল তো? আমাদের চিন্তার আছে কি? দু'দিন পরে দীপার বিয়ে হয়ে যাবে, দু'জন মানুষ, আরামে চলে যাবে। সব কিছু থাকতে আমরা যদি এভাবে মুষড়ে পড়ি, যাদের কোন সহায়-সম্বল নেই তাদের কথা ভাবো তো? চল, ওঠো। ইটস পার্টী টাইম নাউ।" কর্তাকে চাঙ্গা করে বারের সামনে নিয়ে আসতেই প্রিয়বাবুর মুড পালটে গেল।

সাপলুডোWo Geschichten leben. Entdecke jetzt