Chapter-9 | Part-3

35 1 0
                                    

প্রিয়বাবু লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে নিজের লাশের দিকে যাবেন বলে পা বাড়াতেই দৃষ্টি আটকে গেল সুস্মিতাকে দেখে। কালো চশমায় চোখ ঢেকে একটু দূরে একা দাঁড়িয়ে আছে। স্টাইল আছে মেয়েটার! এ কথা স্বীকার করতেই হবে। সবার থেকে আলাদা, শোকের চিহ্ন হিসাবে কালো শার্ট পরেছে। প্যান্টের পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বার করে সিগারেট ধরাল। অসম্ভব মনের জোর, কাউকে তোয়াক্কা করে না। ভয়-ডর কি জিনিষ জানে না। প্রিয়বাবুর সুস্মিতাকে ভালো লাগল—সে এমন একজন মানুষ যার কোন ভড়ং নেই, নিজের সম্বন্ধে সন্দেহ নেই। প্রিয়বাবু পৃথিবীতে নূতন নয়, অনেকদিনের বাসিন্দা। এত বয়স অবধি তার মতো আত্মবিশ্বাস কারও মধ্যে লক্ষ্য করেননি। সে নিজেকে মুঠোয় নিয়ে ঘুরতে পারে।

প্রিয়বাবু হাসি মুখে সুস্মিতার দিকে এগিয়ে গেলেন। কথা বলে লাভ নেই, জানেন শুনতে পাবে না, তাই ইচ্ছা করেই একটু গা ঘেঁষে দাঁড়ালেন। সুস্মিতার ওপর তাঁর দুর্বলতা যাবার নয়। সে জাদু জানে, তার কাছে হেরে যেতে ভালো লাগে। তার ক্ষণিকের ছোঁয়া রক্তে প্লাবন নিয়ে আসে, চঞ্চল করে দেয় শরীর মন। প্রবল আকর্ষণী শক্তি সুস্মিতার। কত সুন্দর, স্বপ্নের মতো সন্ধ্যা কাটিয়েছেন দু'জনে একসাথে।

সুস্মিতার মোহ কাটিয়ে, ভারী মন নিয়ে ধীর গতিতে নিজের লাশকে লক্ষ্য করে অর্থাৎ চুল্লির দিকে এগিয়ে চললেন প্রিয়বাবু। মড়া ফেলে সবাই চলে যেতে নেই, কাউকে একটা ছুঁয়ে থাকতে হয়, নাহলে অমঙ্গল হয়, এসব আজকাল বোধহয় কেউ আর বিশ্বাস করে না। সবেতেই উৎসব, নাহলে শ্মশানে কেউ সেলফি তোলে? কিন্তু একি? লাশ তো সরে গিয়েছে। এক নম্বরে চলে এসেছেন প্রিয়বাবু। চুল্লিতে ঢোকানোর আগে ক্রিয়াকর্মের জন্য বাড়ির লোককে ডাকাডাকি করছে পুরুত মশাই।

এই হল সংসার। এত ভাব-ভালোবাসা, তোমায় ছাড়া বাঁচতে পারব না, তুমি কোনদিন আমায় ছেড়ে যাবে না তো! প্রতিজ্ঞা করো। হায় ভগবান! এই তার পরিণতি। স্ত্রী গাড়িতে বসে কলেজের অধ্যাপক বন্ধুদের সাথে চায়ের আড্ডায় ফিলজফিকাল আলোচনায় ব্যস্ত। হতে পারে, মৃত্যুই আজকের আলোচ্য বিষয়। যা অবধারিত, তাতে শোক প্রকাশ করা কি ভীষণ ছেলেমানুষি, সেই গুরুগম্ভীর বিষয়ের ওপর হয়তো সবাই একে একে যে যার বক্তব্য রাখছে। অথচ স্বামীর শবদেহ অসহায় অবস্থায় পড়ে আছে, সেদিকে কারও হুঁশ নেই।

সাপলুডোजहाँ कहानियाँ रहती हैं। अभी खोजें