Chapter-2 | part-4

50 1 0
                                    

নিউজপ্রিন্ট কোটার গোলমালে প্রিয়বাবুদের কোম্পানি একসময় বিশ্রীভাবে জড়িয়ে পড়েছিল। সেই কলঙ্কের কালো দাগ থেকে উদ্ধার পাবার জন্য মালিকপক্ষ তখন মরিয়া হয়ে কাউকে খুঁজছিল। সুযোগ বুঝে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তখনকার প্রিয় মজুমদার। বরাবর চটপট সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন, ভয়ডর ছিল না, কারণ হারানোর কিছু ছিল না। প্রিয়বাবুর সামনে তখন পদন্নোতির প্রলোভন। যে করে হোক কোম্পানিকে বদনামের অন্ধকার গুহা থেকে উদ্ধার করতে হবে, কারণ তবেই তাঁর উত্তরণ সম্ভব। সাংবাদিক হবার ইচ্ছা ছোট থেকেই ছিল, কিন্তু যোগ্যতা ছিল না। প্রিয়বাবু ততদিনে কোম্পানির হালচাল ভালোই বুঝে গিয়েছেন, জানতেন সবই আসলে 'ডিল।' এক হাতে দাও, অন্য হাতে নাও; জগৎসংসারের এই নিয়ম। সাফল্যের স্বাদ পাবার উন্মত্ত খিদে তাঁকে তখন উন্মাদ করে তুলেছিল। বিপদের ঝুঁকি নিয়ে অনেক সিদ্ধান্ত তিনি আগেও নিয়েছেন, এবং ভাগ্যক্রমে প্রতিবারই সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছেন।

আজ ভরা পেটে যে সিদ্ধান্ত নিতে তাঁর বুক কাঁপে, তখন খালি পেটে অনায়াসে একের পর এক বাধা অতিক্রম করে গিয়েছেন। মালিকপক্ষের বাহবা কুড়িয়েছেন তাতে গতি আরও বেড়েছে। এখন প্রিয়বাবুর মনে হয়--দিনগুলো গেল কোথায়?

সেই চরম দুরবস্থার দিনে কোম্পানির মান বাঁচাতে, এবং নিজের পদোন্নতির একমাত্র সোপান হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন মিতাদেবীকে। প্রিয়বাবু নিজেকে সম্পূর্ণ সমর্পণ করে দিয়েছিলেন বান্ধবী মিতা মুখার্জির মাধ্যমে মুখার্জি-পরিবারের পায়ে। তখন মিতাদেবীর বাবা ছিলেন হাইকোর্টের নাম করা জাজ। প্রিয়বাবু আগে থেকেই খোঁজখবর নিয়ে জেনে নিয়েছিলেন যে, মোকদ্দমা চলছিল তাঁরই এজলাসে। তিনিই তখন হর্তা-কর্তা-বিধাতা। সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে প্রেমের দাপট দশগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন প্রিয় মজুমদার, আর তাতেই অবুঝের মতো পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল মিতাদেবীর বংশমর্যাদা। জাজ মনোমোহন মুখার্জি অন্ধ স্নেহের বশবর্তী হয়ে বাধ্য হয়েছিলেন একমাত্র কন্যার আবদার রক্ষা করতে। কাগজ বেঁচে গিয়েছিল, কিন্তু মিতাদেবীর বাবা সেই মামলার রায় শোনাবার পর আর কখনো কোর্টে যাননি। যতদিন বেঁচে ছিলেন লজ্জায় মাথা হেঁট করে থাকতেন। মনে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছিলেন, কিন্তু কখনো প্রকাশ করেননি। বয়সের দোহাই দিয়ে একদিন চিরতরে পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন।

সাপলুডোWhere stories live. Discover now