প্রিয়বাবু কথাগুলো বেশ জোরেই বলেছিলেন, কাজেই দীপার কানে পৌঁছাতে সময় লাগল না। যে মানুষটার এত দাপট ছিল, তাকে অসহায়তার শিকার হতে দেখে দীপার ভীষণ দুঃখ হল। বুঝতে পারছিল না, কি করে বাবার যন্ত্রণার উপশম করা যায়? তার হাতে এমন কি অস্ত্র আছে যা দিয়ে সে বাবাকে রক্ষা করতে পারে? অপমানের যথাযথ বদলা নিতে পারে?
মনে প্রশ্ন জাগছে--জটিল ষড়যন্ত্রের পিছনে কে থাকতে পারে? কেউ তো আড়াল থেকে সুচারুভাবে প্রতি মুহূর্তে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছে? প্রশ্নগুলো নিঃসন্দেহে দীপার মনের ভারসাম্য নষ্ট করছে, কিন্তু কিছুতেই কাউকেই দোষী সাব্যস্ত করতে পারছে না। বাবা-মায়ের সাথে এই বিষয় নিয়ে এখনই আলোচনা করতে মন সায় দিচ্ছে না। দু'জনে নানা কারণে বিরক্ত, কাজেই দীপা তার সাথে নিজস্ব চিন্তা-ভাবনার রসদ জুগিয়ে সম্পর্কের রসায়ন আরও দুরূহ করতে চায় না।
প্রিয়বাবুর ধারাবাহিক লেখা, প্রথম পাতার পরিবর্তে সাতের পাতায় স্থানান্তরিত হওয়ায় ধাক্কা খেয়েছে ভক্তের দল। কাজেই তাদের ফোনের সংখ্যা আজ আরও বেড়ে গিয়েছে। মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। এমন কি হল যে, স্বয়ং সম্পাদকের লেখা আটকে গেল? প্রিয়বাবুর কাছে ভক্তবৃন্দের ক্ষোভ মেটাবার অস্ত্র অনেক আগেই ভোঁতা হয়ে গিয়েছে, কাজেই শুকনো শব্দের ফাঁকা আওয়াজে কাজ না হওয়াই স্বাভাবিক।
প্রিয়বাবুর অস্বস্তি মৌজ করে উপভোগ করছে ভাড়াটে ভক্তের দল। রবিবার সকালে চায়ের সাথে জমজমাট খোশগল্প, তাও আবার একেবারে নিখরচায়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে অসহায় প্রিয়বাবুকে কেন্দ্র করে গুজবের পরিধি ক্রমশ বাড়তে শুরু করেছে। প্রিয়বাবু ক্ষোভে, অপমানে অতিষ্ঠ হয়ে অফিসে ফোন করে অন্তর্নিহিত স্টোরিটা জানার চেষ্টা করলেন। কার হস্তক্ষেপে লেখা স্থানান্তরিত হল তার অনুসন্ধান করতে বুঝতে পারলেন যে, খোদ মালিকের ফোনে কাজটা হয়েছে, অতএব আপাতত এটাই গল্পের উপসংহার।
ফোনের ঝড়ে বীতশ্রদ্ধ হয়ে একসময় নিজের দুটো ফোনই বন্ধ করে দিলেন প্রিয়বাবু। এবার ল্যান্ড লাইনের ফোন বাজতে শুরু করল। ফোনটা অফিসের তরফ থেকে দেওয়া, কাজেই বন্ধ করা যায় না, কিন্তু ধৈর্যের শেষ সীমা ছাড়াতেই শব্দ দূষণ থেকে মুক্তি পেতে বাধ্য হয়ে এক সময়ে রিসিভার তুলে রাখলেন।
![](https://img.wattpad.com/cover/224912256-288-k320513.jpg)
YOU ARE READING
সাপলুডো
General FictionAmbitions and dreams vis-a-vis reality and corporate politics.